বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ড সেবা নিয়ে সিটি ব্যাংক একটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। আন্তর্জাতিক মানের ব্যাংকিং সেবা এবং আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর নিরাপত্তার কারণে সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড বর্তমানে গ্রাহকদের কাছে অন্যতম জনপ্রিয়। ভ্রমণ, কেনাকাটা, অনলাইন লেনদেন কিংবা জরুরি নগদ অর্থের প্রয়োজনে এই কার্ড ব্যবহারকারীদের বিশেষ সুবিধা প্রদান করে থাকে। তবে একটি ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার জন্য আবেদনকারীদের নির্দিষ্ট যোগ্যতা, নিয়ম এবং শর্ত পূরণ করা জরুরি। নিচে সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলো।
সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা
সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করতে হলে গ্রাহকদের কিছু মৌলিক যোগ্যতা থাকতে হবে।
-
বয়সের শর্ত: আবেদনকারীর বয়স ন্যূনতম ২১ বছর হতে হবে (চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে)। স্বনিযুক্ত ব্যক্তি বা ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম বয়স ২৫ বছর নির্ধারিত।
-
আয়ের শর্ত:
-
চাকরিজীবীদের মাসিক ন্যূনতম আয় সাধারণত ২০,০০০ টাকা হতে হবে।
-
ব্যবসায়ী বা স্বনিযুক্তদের জন্য বাৎসরিক ন্যূনতম আয় ৩ লাখ টাকা প্রয়োজন।
-
-
কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা: চাকরিজীবীদের বর্তমান কর্মস্থলে কমপক্ষে ১ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ব্যবসা চালু থাকতে হবে কমপক্ষে ২ বছর।
-
জাতীয়তা: বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে এবং স্থায়ী ঠিকানা থাকতে হবে।
এছাড়াও আবেদনকারীর ক্রেডিট হিস্ট্রি ও লোন রেকর্ড ভালো থাকা আবশ্যক।
সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড আবেদন প্রক্রিয়া ও নিয়ম
কার্ড পেতে আবেদনকারীদের কিছু কাগজপত্র এবং ব্যাংকের নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়।
-
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
-
জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্টের কপি
-
সাম্প্রতিক ছবির কপি
-
চাকরিজীবীদের জন্য সেলারি স্লিপ, নিয়োগপত্র বা অফিসিয়াল আইডি কার্ড
-
ব্যবসায়ীদের জন্য ট্রেড লাইসেন্স ও আয় সনদ
-
গত ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট
-
-
আবেদনের নিয়ম:
আবেদনপত্র পূরণ করে নিকটস্থ সিটি ব্যাংক শাখায় জমা দিতে হয়। সব তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর ব্যাংক আবেদনকারীর যোগ্যতা যাচাই করে। অনুমোদন পেলে কয়েক কার্যদিবসের মধ্যে কার্ড হাতে পাওয়া যায়। -
আবেদন প্রক্রিয়া অনলাইনে: সিটি ব্যাংক বর্তমানে অনলাইন আবেদন সিস্টেম চালু করেছে, যেখানে প্রয়োজনীয় তথ্য ও ডকুমেন্ট আপলোড করে সহজেই আবেদন করা যায়।
সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ডের শর্ত ও নীতিমালা
কার্ড ব্যবহারের সময় গ্রাহকদের কিছু নিয়ম ও শর্ত মানতে হয়।
-
ক্রেডিট লিমিট: আবেদনকারীর আয় ও আর্থিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে ব্যাংক নির্দিষ্ট ক্রেডিট লিমিট নির্ধারণ করে।
-
সুদের হার: নির্ধারিত তারিখে সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ না করলে মাসিক ২% থেকে ২.৫% পর্যন্ত সুদ প্রযোজ্য হয়।
-
ক্যাশ অ্যাডভান্স ফি: এটিএম থেকে টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে উত্তোলিত অর্থের উপর প্রায় ২.৫% চার্জ দিতে হয়।
-
বার্ষিক ফি: কার্ডের ধরন অনুযায়ী সাধারণত ১,৫০০ টাকা থেকে শুরু হয়। প্রিমিয়াম কার্ডের ক্ষেত্রে ফি তুলনামূলক বেশি।
-
বিলম্ব ফি: নির্ধারিত তারিখে ন্যূনতম অর্থ পরিশোধ না করলে বিলম্ব চার্জ যুক্ত হয়।
-
আন্তর্জাতিক ব্যবহার: ডুয়াল কারেন্সি কার্ড থাকলে দেশি ও আন্তর্জাতিক উভয় ধরনের লেনদেন করা যায়।
এই শর্তগুলো গ্রাহকদের সঠিকভাবে মেনে চলতে হবে, অন্যথায় জরিমানা বা অতিরিক্ত চার্জ আরোপ হতে পারে।
সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড বর্তমানে বাংলাদেশে অন্যতম জনপ্রিয় একটি সেবা, যা ব্যবহারকারীদের দৈনন্দিন কেনাকাটা থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক লেনদেন পর্যন্ত নানা সুবিধা দিয়ে থাকে। তবে কার্ড গ্রহণের আগে অবশ্যই যোগ্যতা, আবেদন প্রক্রিয়া ও শর্তাবলি ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত। সঠিক তথ্য জানলে কার্ড ব্যবহারে সুবিধা পাওয়া যায় এবং অপ্রয়োজনীয় খরচ বা চার্জ থেকে বাঁচা সম্ভব হয়।
