আসসালামু আলাইকুম। আপনাদের অনেক রিকুয়েষ্ট এ আজ আমরা মসলার ব্যবসা নিয়ে আলোচনা করবো। চলুন জেনে নেই কিভাবে সামান্য টাকায় ঘরে বসেই মসলার ব্যবসা শুরু করতে পারবেন!
মসলার ব্যবসা বললেই সকলে মনে করে এই ব্যবসায় প্রচুর বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আজ আমরা আপনাদের এমন একটি ব্যবসা ট্রিক্স শিখিয়ে দিব, যেটা ব্যবহার করে আপনি খুব সহজেই সামান্য বিনিয়োগে মসলার ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।
যা যা থাকছে
মসলা ব্যবসার বাজার বিশ্লেষণ
আমরা ভোজনরসিক জাতি হিসেবে পরিচিত। আমাদের দৈনন্দিন সকল খাদ্যে আমরা বিভিন্ন ধরনের মসলা ব্যবহার করে থাকি। প্রতিনিয়ত আমাদের নিত্যনতুন রেসিপি চেখে দেখার লোভ আমরা সামলাতে পারি না। আমাদের চাহিদা অনুযায়ী বাজারে মসলার প্রচুর চাহিদা এবং ব্যবসার স্কোপ রয়েছে। যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। গ্রাম থেকে শহরে সবাই কম বেশি মসলা ব্যবহার করে তাদের রান্নায়। বাংলাদেশ মসলা গবেষণার তথ্যমতে আমাদের দেশের মাথাপিছু মসলার চাহিদা প্রায় ৪৫ গ্রাম যার মাত্র ২৪ গ্রাম আমরা পুরন করতে পারছি। সুতরাং এ খাতের চাহিদা অনুযায়ী
সরবারাহের ঘাটতি আছে যা ব্যবসায়ীর জন্য শুভসংবাদ।
আরো জানুনঃ ব্র্যাক ব্যাংক এসএমই লোন
বর্তমানে সবথেকে বেশি চলে ৩ ধরনের মসলা, যেমনঃগরম মসলা, মাংসের মসলা এবং চাট মসলা। আপনি চাইলে মাত্র ১০০০ টাকা বিনিয়োগ করে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
মসলা কীভাবে বিক্রি করবেন?
মসলার ব্যবসা আপনি বিভিন্নভাবে শুরু করতে পারেন। যেমনঃ
- মসলা তৈরীর কারখানা শুরু করতে পারেন।
- পাইকারী মসলার দোকান দিতে পারেন।
- পাইকারী মসলার ডিলার পয়েন্ট নিতে পারেন।
- আপনি ছাত্র হলে অনলাইনে খুব সহজেই এবং সল্প বিনিয়োগে এ ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
মসলার পাইকারি বাজার | Spice Wholesale Market In Bangladesh
আপনি যদি খুচরা মসলার ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে আপনাকে প্রথমেই কিছু পাইকারী মসলার মার্কেট সম্পর্কে খোজ খবর নিতে হবে। পাইকারি মসলা কেনার আগে মসলা সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে এমন ব্যাক্তিকে সাথে নিয়ে যাবেন বা নিজেই মসলা সম্পর্কে ভালো ধারণা নিয়ে বাজারে যাবেন। অন্যথায় আপনি মসলা কিনে ঠকতে পারেন।
বাংলাদেশ ও ভারতের বহুল পরিচিত কিছু পাইকারী মসলার বাজার সূমহ
- চকবাজার।
- মৌলভীবাজার।
- কারওয়ান বাজার।
- নোয়াখালী পট্রি, টংগি।
- খাতুনগঙ্জ।
- চৌমুহনী বাজার, বরিশাল।
- রাধা বাজার, কলকাতা।
- নিউমার্কেট, কলকাতা।
মসলা কারখানার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিঃ
মসলা তৈরী কারখানার জন্য মসলা গুড়া করা এবং প্যাকেট জাত করনের জন্য বেশকিছু যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয়ে থাকে। যেমনঃ
- পুলভাইজার মেশিন। কেও কেও একে আটা ভাঙ্গানো মেশিন নামেও চিনে থাকে। এর দাম সাধারণ হর্স পাওয়ার ভেদে ২৫ হাজার টাকা থেকে ১ লক্ষ টাকা পযন্ত হয়ে থাকে।
- অনেক মেশিনে মসলা গুড়া করা সহ প্যাকেটিং ও করা যায়। কিন্তু আপনার পুজি কম থাকলে আপনি প্যাকেজিং এর জন্য একটি ছোট হিট মেশিন কিনতে পারেন। যার মূল্য সর্বোচ্চ ২ থেকে ৩ হাজার টাকা লাগবে।
মসলা ব্যবসার জন্য সাধারণত এ দুটি যন্ত্রই প্রয়োজন হয়ে থাকে। তবে আপনার যদি যন্ত্র কেনার মত পুজি না থাকে তাহলে আপনি বাহির থেকে মসলা পেষাই করে নিজে প্যাকেজিং করে বিক্রি করতে পারেন। এক্ষেত্রে প্রতি কেজি মসলা পেষাই করতে আপনার সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ টাকা খরচ হবে।
মসলা ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় লাইসেন্স | Important License For Spices Business
যেকোনো ব্যাবসা শুরু করতে গেলে আমাদের সরকার থেকে বেশকিছু লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হয়। যেমনঃ
- ট্রেড লাইসেন্স।
- টিন সার্টিফিকেট।
- মসলা ব্যবসা বাংলাদেশের জন্য BSTI এবং ভারতের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স নিতে হয়।
- এছাড়া মসলার মেশিন স্থাপনের জন্য বানিজ্যিক মিটার নেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।
তবে আপনি যদি ছোট পরিসরে বাসায় এ ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে আপনি লাইসেন্স ব্যাতিত আপনার পরিচিত জনের কাছে অর্গানিক পণ্যে হিসেবে বিক্রি করতে পারেন।
মসলা ব্যবসার জন্য মার্কেটিং
আপনি যত ভালো পণ্য নিয়েই ব্যবসা শুরু করেন না কেন, আপনি যদি সঠিকভাবে মার্কেটিং করতে না পারেন তাহলে আপনি উক্ত ব্যবসা থেকে ইনকাম করতে পারবেন না। ব্যবসার বিক্রির প্রথম শর্তই হল মার্কেটিং। বড় বড় ব্যবসায়ীরা তাদের বার্ষিক বিক্রির একটা মোটা টাকা মার্কেটিং এর পিছে খরচ করে থাকে। মসলা ব্যবসার জন্যও প্রথমে আপনাকে একটি মার্কেটিং বাজেট নির্ধারণ করা লাগবে। উক্ত বাজেট থেকে আপনার ব্যবসার ধরনের উপর নির্ভর করে মার্কেটিং করতে হবে। আপনি যদি কারখানা স্থাপন করে থাকেন তাহলে, আপনাকে পাইকারি বিক্রেতাকে টার্গেট করে মার্কেটিং করতে হবে। একই সাথে ভোক্তা পর্যায়েও মার্কেটিং করে আপনার পন্য সম্পর্কে জানাতে হবে যেন তারা বিক্রেতার কাছে গিয়ে আপনাত পণ্যের খোজ করে।
একই ভাবে আপনি যদি অনলাইনে বিক্রি করে থাকেন তাহলে ফেজবুক এড মার্কেটিং করে আপনার বিক্রি বহুগুণ বৃদ্ধি করতে পারেন এবং এতে আপনার খরচ অনেকাংশে কমে যাবে এবং আপনার সাম্ভব্য কাস্টমারকে আপনি আপনার মসলার মার্কেটিং করতে পারবেন।
মসলা ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় মুলধন | Investment For Spices Business
মসলা ব্যবসার জন্য মূলধন লাগে না বললেই চলে। তবে আপনি যদি বড় বা মাঝারি পরিসরে শুরু করতে চান তাহলে মোটামুটি ৫০ হাজার থেকে ৩ লক্ষ টাকার মধ্যে আপনি খুব সহযে একটি লাভজনক মসলা ব্যবসা দার করাতে পারবেন।
তবে মুলধন এর একটি অংশ মার্কেটিং এর জন্য বরাদ্দ রাখা উচিত। যাতে মসলা উৎপাদন এর পর তা স্টোক না থেকে দ্রুত বিক্রি হয়ে যায়। একইভাবে মসলার মেশিন ক্রয় করবার সময় ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে নিবেন।
মসলা ব্যবসার মুনাফা | Profits of Spices Business
যে-কোন ব্যবসার মুনাফার প্রথম শর্তই হল বিক্রি। আপনার বিক্রি না হলে মুনাফা কখনোই সম্ভব নয়। সুতরাং আপনি যদি প্রতি কেজি মসলা বিক্রিতে ১০-১৫ টাকা নিট লাভ রাখতে পারেন। এবং প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ কেজি মসলা পাইকারি বিক্রি করেন। তাহলে প্রতিদিন আপনি অনায়াসে ১৫০০-২০০০ টাকা ইনকাম করতে পারবেন। যা মাস শেষে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা অনায়াসে হবে।
এখন আপনি যত বিক্রি করতে পারবেন তত বেশি লাভ করতে পারবেন। সুতরাং লভ্যাংশটা পুরোপুরি আপনার বিক্রির দক্ষতার উপর নির্ভর করছে।
বর্তমান বাজার বিশ্লেষণ করে একথা বালাই যায় যে মসলা ব্যবসা একটি লাভজনক ব্যবসা। এ ব্যবসায় অতি সামান্য কিছু অর্থ বিনিয়োগ করে আপনি অনায়াসে মাসে একটি ভালো পরিমান অর্থ ইনকাম করতে পারবেন।
মসলার ব্যবসার ঝুঁকি | Spices Business Risk Insights
মসলার ব্যবসার একটি বড় সমস্যা হলো আদ্রতা বা পানি। সুতরাং আপনার কারখানা এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যেখানে সব সময় শুকনো থাকবে। এ ব্যবসার আরেকটি বড় সমস্যা হলো বর্তমানে অনেক বড় বড় কোম্পানি এ ব্যবসার সাথে জড়িত। এজন্য আপনাকে আপনার পণ্যের মান নিয়ে কোন কম্পমাইজ করা যাবে একই সাথে ধীরে ধীরে মার্কেটিং করে আপনার বাজার তৈরি করে নিতে হবে।