বাংলাদেশে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিতে সরকার নানা রকম ঋণ সহায়তা প্রদান করে থাকে। ব্যবসার জন্য সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ঋণ প্রদান করা হয়, যার মাধ্যমে নতুন উদ্যোক্তারা সহজ শর্তে মূলধন পেতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে সুদমুক্ত বা স্বল্পসুদে ঋণ দেওয়া হয়, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উদ্যোক্তা গড়ে তুলতে সহায়ক। চলুন জেনে নেওয়া যাক ব্যবসায়িক ঋণ পাওয়ার প্রক্রিয়া, শর্ত, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও সম্ভাব্য উৎস সম্পর্কে বিস্তারিত।
যা যা থাকছে
ব্যবসায়িক ঋণ পাওয়ার জন্য যোগ্যতা ও শর্তাবলী
সরকারি ঋণ পেতে হলে কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা ও শর্ত পূরণ করতে হয়। যেমন:
-
আবেদনকারীকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
-
ব্যবসার জন্য একটি বৈধ ট্রেড লাইসেন্স থাকতে হবে।
-
আবেদনকারীকে অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা প্রজেক্ট প্রপোজাল জমা দিতে হবে।
-
ব্যবসাটি উৎপাদনমুখী, বাণিজ্যিক বা সেবা খাতভিত্তিক হতে হবে।
-
ব্যাংকিং ইতিহাস (যদি থাকে) সৎ ও সঠিক হওয়া জরুরি।
-
নারী উদ্যোক্তাদের জন্য কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় বা প্রাধান্য দেওয়া হয়।
ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উদ্যোক্তাদের জন্য SME (Small and Medium Enterprise) ভিত্তিক সরকারি ঋণ বিশেষভাবে কার্যকরী।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও আবেদন প্রক্রিয়া
ব্যবসার জন্য ঋণ পেতে হলে নির্ধারিত ব্যাংকে নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করতে হয়। নিচে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা দেওয়া হলো:
-
জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি
-
বৈধ ট্রেড লাইসেন্স
-
দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি
-
ব্যাংক স্টেটমেন্ট (সাধারণত ৬ মাসের)
-
প্রজেক্ট প্রপোজাল বা ব্যবসায়িক পরিকল্পনা
-
টিআইএন সার্টিফিকেট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
-
জমির দলিল বা জামানত সংক্রান্ত কাগজ (যদি জামানতের প্রয়োজন হয়)
কিছু বিশেষ স্কিমে জামানত ছাড়া ঋণও দেওয়া হয় (যেমন যুব ঋণ, নারী উদ্যোক্তা ঋণ ইত্যাদি)।
কোন কোন সরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া যায়?
বাংলাদেশে সরকারি ঋণ বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে প্রদান করা হয়। নিচে কিছু উল্লেখযোগ্য সরকারি ব্যাংকের নাম ও তাদের ভূমিকা দেওয়া হলো:
-
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (BKB): কৃষি ও গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের জন্য সাশ্রয়ী ঋণ দেয়।
-
সোনালী ব্যাংক: বৃহৎ ও মাঝারি ব্যবসার জন্য ঋণ সুবিধা।
-
জনতা ব্যাংক: তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য বিভিন্ন স্কিম চালু রয়েছে।
-
ব্যাংক এশিয়া (SME সেল): ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ।
-
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর: যুবকদের জন্য স্বল্পসুদের বা সুদবিহীন ঋণ।
এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে কিছু বিশেষ স্কিম যেমন—‘Stimulus Package’, ‘Refinancing Scheme for Women Entrepreneurs’— ও রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে সহজে ব্যবসার জন্য অর্থ সহায়তা পাওয়া যায়।
কত টাকা ঋণ পাওয়া যায় ও শর্তসমূহ
সরকারি ঋণের পরিমাণ ব্যবসার ধরন ও ব্যাংকের শর্ত অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। সাধারণত:
-
প্রারম্ভিক ব্যবসা: ৫০,০০০ টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত।
-
মাঝারি ব্যবসা: ৫ লক্ষ থেকে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত।
-
বড় ব্যবসা বা শিল্প: ২০ লক্ষ টাকার বেশি।
সুদহার সাধারণত ৪% থেকে ৯% এর মধ্যে হয়ে থাকে। কিছু স্কিমে সুদমুক্ত বা গ্রেস পিরিয়ডসহ ঋণ পাওয়া যায়। ঋণের কিস্তি মাসিক বা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে পরিশোধ করতে হয়।
বাংলাদেশে ব্যবসার জন্য সরকারি ঋণ নেওয়ার সুযোগ উদ্যোক্তাদের জন্য একটি বড় সহায়ক হাত। বিশেষ করে যারা পুঁজির অভাবে ব্যবসা শুরু করতে পারছেন না, তারা সহজ কাগজপত্র ও স্বল্পসুদের মাধ্যমে ব্যবসার পথ সুগম করতে পারেন। সঠিক পরিকল্পনা, ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসরণ ও নিয়মিত লেনদেন বজায় রাখলে ঋণ অনুমোদনের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মনির্ভরশীল হতে চাইলে এখনই আপনি সরকারি ঋণ কার্যক্রমের আওতায় আসতে পারেন।
