বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে শুধু একটি ব্যবসার উপর নির্ভর করে সফলতা পাওয়া অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। ফার্মেসী ব্যবসা একটি লাভজনক ও সামাজিকভাবে সম্মানজনক পেশা হলেও, এর পাশাপাশি যদি আরও একটি বা দুটি ব্যবসা যুক্ত করা যায়, তাহলে আয় বৃদ্ধি, ঝুঁকি কমানো ও দীর্ঘমেয়াদে স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। বিশেষ করে যখন একই সাথে চলতে পারে এবং একে অপরকে সহায়তা করে – এমন ব্যবসাগুলো বেছে নেওয়া আরও বুদ্ধিমানের কাজ। এখন দেখা যাক, ফার্মেসীর পাশাপাশি কোন কোন ব্যবসা করলে আপনি আরও লাভবান হতে পারেন।
যা যা থাকছে
হেলথ কেয়ার প্রোডাক্ট ও মেডিকেল যন্ত্রপাতির দোকান
ফার্মেসীর সঙ্গে সবচেয়ে সম্পর্কযুক্ত একটি ব্যবসা হলো হেলথ কেয়ার প্রোডাক্ট ও ছোট-মাঝারি মেডিকেল যন্ত্রপাতি বিক্রি করা। যেমন ব্লাড প্রেসার মেশিন, গ্লুকোমিটার, থার্মোমিটার, হুইলচেয়ার, ওয়াকিং স্টিক, নেবুলাইজার ইত্যাদি। এসব পণ্যের প্রতি মানুষের চাহিদা বেড়েই চলেছে, বিশেষ করে ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ায়। আপনার যদি একটি ভালো ফার্মেসী থাকে, তাহলে কাস্টমার আপনাকেই বিশ্বাস করবে এই পণ্যগুলোর জন্যও। পাশাপাশি হেলথ-সাপ্লিমেন্ট, মাল্টিভিটামিন, প্রোটিন পাউডার ইত্যাদি যুক্ত করলে আপনি মাসে ভালো পরিমাণ লাভ অর্জন করতে পারেন।
ডায়াগনস্টিক স্যাম্পল কালেকশন সেন্টার
ফার্মেসীর পাশে বা ফার্মেসীর এক কোণায় ছোট একটি ডায়াগনস্টিক স্যাম্পল কালেকশন সেন্টার খুলে দিলে সেটি হতে পারে একটি বড় ইনকামের উৎস। অনেক সময় রোগীরা হাসপাতালে যেতে না পারলেও, কাছাকাছি স্যাম্পল দেওয়ার সুযোগ পেলে তারা সেটাই বেছে নেয়। আপনি কোনো বড় ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সাথে চুক্তিভিত্তিক স্যাম্পল কালেকশন করতে পারেন যেমন – প্যাথলজি, ব্লাড, ইউরিন, এক্স-রে, ইসিজি ইত্যাদির জন্য। এতে কোনো বড় বিনিয়োগ ছাড়াই আপনি কমিশন ভিত্তিক ভালো আয় করতে পারবেন এবং ফার্মেসীর গ্রাহকদের এডিশনাল সেবা দিতে পারবেন।
অনলাইন মেডিসিন ডেলিভারি সার্ভিস
বর্তমানে মানুষ বাসায় বসেই ঔষধ পেতে চায়। ফার্মেসী ব্যবসার সাথে অনলাইন ডেলিভারি সিস্টেম যুক্ত করলে আপনি নতুন এক সম্ভাবনার দিক খুলে ফেলবেন। একটি মোবাইল অ্যাপ বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে লোকাল এলাকায় হোম ডেলিভারি চালু করা যেতে পারে। অথবা সামাজিক মাধ্যমে (Facebook Page, WhatsApp) অর্ডার নেওয়া যেতে পারে। আপনি যদি নির্ভরযোগ্য ও দ্রুত ডেলিভারি দিতে পারেন, তাহলে দিনে বেশ কয়েকটি অর্ডার হতে পারে। এটা ফার্মেসীর মূল ব্যবসার পরিধিকে বাড়িয়ে দেয় এবং প্রফিটের পরিমাণও দ্বিগুণ হতে থাকে।
বিউটি ও পারসোনাল কেয়ার প্রোডাক্ট বিক্রি
ফার্মেসীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ জুড়ে থাকে পারসোনাল কেয়ার আইটেম। আপনি যদি ক্রমান্বয়ে নিজের দোকানে বডি লোশন, ফেসওয়াশ, সানস্ক্রিন, স্কিন ক্রিম, হেয়ার অয়েল, বেবি কেয়ার পণ্য, হাইজিন পণ্য (স্যানিটারি ন্যাপকিন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ইত্যাদি) যুক্ত করেন তাহলে আপনার দোকান হবে একটি ওয়ান-স্টপ হেলথ ও বিউটি শপ। অনেক ক্রেতা ঔষধ কেনার পাশাপাশি এসব পণ্য কিনে নেয়, এতে অতিরিক্ত ইনকাম হয় এবং নতুন ক্রেতাও আসে। এটি মূলত কম ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু বেশি চাহিদাসম্পন্ন একটি সহায়ক ব্যবসা।
ফার্মেসী ব্যবসা যদি সঠিক পরিকল্পনায় পরিচালিত হয়, তবে তা হতে পারে একটি দীর্ঘস্থায়ী এবং লাভজনক প্রতিষ্ঠান। তবে একে আরও বিস্তৃত ও লাভজনক করতে চাইলে এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আরও কিছু ব্যবসা যুক্ত করা যেতে পারে। হেলথ কেয়ার প্রোডাক্ট, ডায়াগনস্টিক কালেকশন সেন্টার, অনলাইন ডেলিভারি বা পারসোনাল কেয়ার পণ্যের ব্যবসা – সবগুলোই ফার্মেসীর সাথে একীভূতভাবে পরিচালনা করা সম্ভব। আপনার উদ্যোগ ও গ্রাহকসেবার মান যদি ভালো হয়, তবে আপনি সহজেই একটি শক্তিশালী ব্যবসায়িক ভিত্তি গড়ে তুলতে পারবেন।