ব্যাংকের চেক বই আবেদন করার নিয়ম

বাংলাদেশের অধিকাংশ ব্যাংকিং কার্যক্রমে চেক বই এখনো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্যবসা-বাণিজ্য, বেতন পরিশোধ, লেনদেন কিংবা ব্যক্তিগত আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে অনেকেই চেক বই ব্যবহার করেন। যদিও বর্তমানে অনলাইন ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, তবুও চেক বইয়ের চাহিদা কমে যায়নি। নতুন গ্রাহক বা পুরোনো অ্যাকাউন্টধারীদের মাঝে একটি সাধারণ প্রশ্ন হলো – চেক বই আবেদন করার নিয়ম কী? আজকের এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিতভাবে তা জানব।

চেক বই আবেদন করার যোগ্যতা ও শর্ত

প্রথমেই জানা দরকার, সব অ্যাকাউন্টধারী চেক বই ব্যবহার করতে পারবেন না। সাধারণত কারেন্ট অ্যাকাউন্ট, সেভিংস অ্যাকাউন্ট বা বিশেষ আমানত অ্যাকাউন্টের গ্রাহকরা চেক বই পাওয়ার যোগ্য। তবে প্রতিটি ব্যাংকের নিজস্ব নীতিমালা থাকতে পারে।

  • নতুন গ্রাহক হলে: অ্যাকাউন্ট খোলার সময় প্রাথমিক আমানত জমা দেওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চেক বই আবেদন করা যায়। অনেক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সাথেই প্রথম চেক বই সরবরাহ করে।

  • পুরোনো গ্রাহক হলে: আগের চেক বইয়ের পাতা শেষ হয়ে গেলে নতুন চেক বইয়ের জন্য আবেদন করতে হবে।

  • আবশ্যক ডকুমেন্ট: জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট সাইজ ছবি, পূর্ববর্তী চেক বই (যদি থাকে) এবং অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত তথ্য ব্যাংকের কাছে জমা দিতে হয়।

এছাড়া ব্যাংকের কাছে কোনো বকেয়া ঋণ বা নিষিদ্ধ কার্যক্রম থাকলে চেক বই অনুমোদন নাও হতে পারে।

চেক বই আবেদন করার প্রক্রিয়া

চেক বই আবেদন করার নিয়ম ব্যাংকভেদে কিছুটা ভিন্ন হলেও সাধারণত নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হয়:

  1. আবেদন ফরম পূরণ: ব্যাংকের শাখা থেকে বা অনলাইনে আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে হয়। এতে আপনার নাম, অ্যাকাউন্ট নম্বর, মোবাইল নম্বর, ঠিকানা ইত্যাদি উল্লেখ করতে হবে।

  2. শাখায় জমা দেওয়া: ফরম পূরণ করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসহ শাখায় জমা দিন। যদি পূর্ববর্তী চেক বইয়ের পাতা শেষ হয়ে যায় তবে সেই বইয়ের অবশিষ্ট পাতাগুলো ফেরত দিতে হতে পারে।

  3. ফি প্রদান (যদি প্রযোজ্য হয়): কিছু ব্যাংক নতুন চেক বই ইস্যুর জন্য সামান্য ফি ধার্য করে।

  4. যাচাই প্রক্রিয়া: ব্যাংকের কর্মকর্তা আপনার তথ্য যাচাই করবেন। সব কিছু ঠিক থাকলে আবেদন অনুমোদন দেওয়া হবে।

  5. চেক বই সংগ্রহ: সাধারণত ৩ থেকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে নতুন চেক বই প্রস্তুত হয়। গ্রাহক নিজে গিয়ে সংগ্রহ করতে পারেন বা কিছু ক্ষেত্রে ডাকযোগেও পাঠানো হয়।

See also  বাংলাদেশে বেসরকারি ব্যাংক কয়টি ও কি কি

বর্তমানে অনেক ব্যাংক তাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং অ্যাপ বা এসএমএস সার্ভিসের মাধ্যমে চেক বইয়ের আবেদন করার সুযোগও দিয়ে থাকে, যা গ্রাহকদের জন্য সহজ ও সময় সাশ্রয়ী।

চেক বই ব্যবহারে সতর্কতা ও পরামর্শ

চেক বই হাতে পাওয়ার পর তা ব্যবহারে সতর্ক থাকা জরুরি। কারণ এটি একটি বৈধ লেনদেনের মাধ্যম এবং অপব্যবহারের সম্ভাবনা থাকে।

  • চেক বই নিরাপদ স্থানে রাখুন: যেন অন্য কেউ ব্যবহার করতে না পারে।

  • চেক লেখার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন: কলমের কালি যেন স্থায়ী হয় এবং ফাঁকা জায়গা না থাকে।

  • সইয়ের সঠিকতা বজায় রাখুন: ব্যাংকের নথিভুক্ত সইয়ের সাথে মিল না থাকলে চেক বাতিল হয়ে যেতে পারে।

  • খালি চেকে সই করবেন না: এটি প্রতারণার ঝুঁকি বাড়ায়।

  • চেক লেনদেনের রেকর্ড রাখুন: কোন তারিখে, কত টাকা ও কার নামে চেক ইস্যু করেছেন তা নোট রাখুন।

এই নিয়মগুলো মেনে চললে আপনার ব্যাংকিং কার্যক্রম হবে নির্ভুল ও নিরাপদ।

ব্যাংকের চেক বই আবেদন করার নিয়ম জটিল নয়, তবে প্রতিটি ধাপ সঠিকভাবে অনুসরণ করা জরুরি। সঠিক অ্যাকাউন্ট থাকা, আবেদন ফরম পূরণ, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দেওয়া এবং সময়মতো ফি প্রদান করলে সহজেই চেক বই পাওয়া সম্ভব। আধুনিক ব্যাংকিং সিস্টেমে এখন অনলাইনে আবেদন করার সুবিধাও রয়েছে, যা গ্রাহকদের জন্য আরও সহজ করেছে। তাই যদি আপনার চেক বই প্রয়োজন হয়, তবে আজই আপনার নিকটস্থ ব্যাংক শাখায় যোগাযোগ করুন বা অনলাইনে আবেদন করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *