আজ অমরা জানবো ফ্যাশন ডিজাইন কি ? ফ্যাশন কেনো এতো পপুলার ? পেশা হিসেবে ফ্যাশন ডিজাইন কেন নিবেন ? সফল ফ্যাশন ডিজাইনার হতে কি করতে হবে ? ফ্যাশন ডিজাইনার আপনি কীভাবে ইনকাম করতে পারবেন ? বর্তমানের সেরা কিছু ফ্যাশন ডিজাইন প্রতিষ্ঠা্, বর্তমানের সেরা কিছু ফ্যাশন ডিজাইন কোর্স
ফ্যাশন, স্টাইল , রুপসৌন্দর্য চর্চা ইদানিং কালে বহুল ব্যবহৃত শব্দগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। প্রায়শই আমরা সবাই এই শব্দগুলো ব্যবহার করে থাকি। দৈনন্দিন চলার পথে হাজারও বার এই শব্দগুলো শুনতে শুনতে আমরা যেনো অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। কিন্তু এই শব্দগুলোর মাঝে ‘ফ্যাশন’ শব্দটি দ্বারা আসলে কি বোঝায় তা আমরা কতোজনই বা জানি ?
যা যা থাকছে
ফ্যাশন কি
ফ্যাশন বলতে মূলত স্টাইল,পরিবর্তন,এবং গ্রহনযোগ্যতা এই তিনটি গুণের সমষ্টিকে বুঝায়। সাধারণত মানুষের রুচিবোধের উপর নির্ভর করে তৈরি কোনো ডিজাইন যখন সবার মাঝে গ্রহণযোগ্যতা পেতে শুরু করে তখনই তাকে ফ্যাশন বলে।
আরো জানুনঃ বর্তমানের সেরা ১০টি ক্যারিয়ার টিপস
ফ্যাশন নিয়ে একেকজনের একেক চাহিদা থাকে। যেহেতু প্রতিটি মানুষের রুচিবোধ ভিন্ন তাই তাদের ফ্যাশন সম্পর্কে মতামত ও ভিন্ন হয়। মানুষের বয়স, রুচিবোধ, পছন্দ অপছন্দ, লাইফস্টাইল এর উপর নির্ভর করে একেকজনের ফ্যাশন সেন্স একেক রকম হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে, প্রধানত তিন ধরনের ফ্যাশনকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয় যেমন – পুরুষদের পোশাক, মহিলাদের পোশাক এবং শিশুদের পোশাক। এই তিনটি ভাগের আবার অনেক সাব-বিভাগ থাকে মানুষের চাহিদা ও রুচিবোধের কারণে।
ফ্যাশন কেনো এতো পপুলার ?
আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি যে ফ্যাশন ও স্টাইল এর মতো শব্দগুলো বর্তমানে খুবই ব্যবহৃত হচ্ছে, কিন্তু কেনো ?? চলুন আমরা ফ্যাশন শব্দটি এতো বেশি ব্যবহৃত ও প্রাধান্য পাওয়ার পিছনের কারণগুলো জেনে নেই;
- নিজস্ব সংস্কৃতি অন্যের নিকট ফুটিয়ে তুলতে ফ্যাশনের গুরুত্ব অনেক ;
- নিজেকে অন্যের নিকট আর্কষনীয় করে তুলতেও ফ্যাশনের গুরুত্ব রয়েছে;
- সৌন্দর্যের বিকাশ ঘটাতে এর গুরুত্ব অপরিসীম এবং পরিশেষে
- প্রত্যেক ঋতুর সাথে মানানসই পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে ফ্যাশনের বিকল্প নেই বললেই চলে।
পেশা হিসেবে ফ্যাশন ডিজাইন কেন নিবেন ?
ফ্যাশন সম্পর্কে তো আমরা অনেক কিছুই জানতে পারলাম কিন্তু এই ফ্যাশন কে মানবজীবনে কিভাবে প্রয়োগ করা যায় বা ঠিক কারা এই কাজগুলো করে সে বিষয়ে কিন্তু এখনও অনেকেই অজ্ঞাত, তাই নয় কি ? দৈনন্দিন চলার পথে ব্যবহৃত এই ফ্যাশন বা ধরণগুলোর সাথে পরিচিত হতে বা এ নিয়ে বিস্তারিত জানতে হলে আমাদের ফ্যাশন ডিজাইনার এর সাহায্যে নিতে হয়। এখন আবার ফ্যাশন ডিজাইনার কি জিনিস সেটা ভাবছেন ?
আরো জানুনঃ 2022 সালে স্টুডেন্ট লোন কীভাবে নিবেন ?
একটি পোশাকের সাইজ থেকে শুরু করে তার কালার, নকশা, প্রিন্ট, সেলাই এর ধরন ইত্যাদি যিনি নির্ধারণ করেন তিনিই একজন ফ্যাশন ডিজাইনার।
ফ্যাশন ডিজাইন হলো একটি সৃজনশীল পেশা তাই সৃজনশীলতাকে একজন মানুষের ফ্যাশন ডিজাইনার হবার প্রথম ও প্রধান শর্ত বললে খুব বেশি ভুল হবে বলে মনে হয় না।
সফল ফ্যাশন ডিজাইনার হতে কি করতে হবে ?
একজন ফ্যাশন ডিজাইনার হতে হলে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে কিভাবে নকশা আঁকতে হয়, কিভাবে রঙ এর ব্যবহার করতে হয়, একটা ড্রেস তৈরির পূর্বে ভাবতে হবে এটা কার জন্যে কেমন হবে, কোথায় কুচি দিলে ভালো দেখাবে আর কোথায় ফ্ল্যাট রাখতে হবে, কোন পোশাকে কেমন গলা, হাতার ডিজাইন দিলে সুন্দর দেখাবে, এছাড়াও কালার কম্বিনেশন, কালার মিক্সিং ও কালার ম্যাচিং এ সবই জানতে হবে।
আপনি যদি ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে নিজের পেশা বেছে নিতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই রঙ কে ভালবাসতে হবে, কোনো কাপড় বা উপাদানের উপর আলো আর ছায়া পরলে সেটা দেখতে কেমন লাগবে তা খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করতে হবে এবং নিয়মিত এগুলো চর্চার উপরে রাখতে হবে।
অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর নিজের কাজের প্রতি ভালবাসার সাথে সাথে নিত্য নতুন আইডিয়া নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে এবং প্রায়শই কিছু না কিছু এক্সপেরিমেন্ট করে দেখতে হবে।
এভাবে দিনের পর দিন চেষ্টার ফলে নিজেকে উপযুক্ত করে তোলা সম্ভব হয়। ফ্যাশন, ফ্যাশন ডিজাইন বা ফ্যাশন ডিজাইনার নিয়ে তো সুস্পষ্ট ধারণা হয়েই গেলো কিন্তু একজন ফ্যাশন ডিজাইনার হতে হলে আপনাকে ঠিক কি কি করতে হবে সে বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক-
- প্রধানত জামাকাপড়, জুতামোজা ও বিভিন্ন পোশাক তৈরি করা ।
- ফ্যাশন ট্রেন্ড ফলো করা ও সেই অনুযায়ী রিভিউ করা ।
- জামাকাপড়ের জন্য আকর্ষণীয় ও ভিন্ন ধরনের ডিজাইন তৈরি করা ।
- সময়ুপযোগী ট্রেন্ড ও থিমের কালেকশন করা ।
- ডিজিটাল ডিজাইন তৈরি করা ।
- বিভিন্ন ধরণের পোশাক নির্ভর প্রতিষ্ঠান বা শো তে অংশগ্রহণ করা ।
- সোশ্যাল মিডিয়া বা ইন্টারনেট থেকে ডিজাইনের ধারণা নেওয়া ।
- ভিন্ন ভিন্ন গার্মেন্ট ও ট্রেন্ডের জন্য ফ্যাব্রিক্স, ট্রিমিং, কালারিং সম্পর্কে জানা ও সেগুলো নির্বাচন করা।
- একটি পরিপূর্ণ ডিজাইন তৈরি করার জন্যে অন্যান্য ডিজাইনার কিংবা টিমের অন্য সদস্যদের মতামত নেওয়া।
- পোশাক রিটেইলার ও কনজ্যুমারদের কাছে ডিজাইন মার্কেটিং করা ।
- ডিজাইনের সর্বশেষ প্রোডাকশন পুনরায় চেক করা ।
- বর্তমান মার্কেট ট্রেন্ডের সাথে মিলে বোর্ডের সামনে ধারণা তুলে ধরা ।
- পোশাক সাপ্লাইয়ারদের সাথে মিটিং করা ও যোগাযোগ রাখা।
- পোশাক ক্রেতা বা সাপ্লাইয়ারদের সামনে ধারণা সুস্পষ্ট করে তোলার জন্যে প্রেজেন্টেশন ও স্পিচ তৈরি করা ।
- বিভিন্ন ট্রেড শো ও ফ্যাশন শোতে নিজের ডিজাইনটি তুলে ধরা ইত্যাদি ।
ফ্যাশন ডিজাইনার আপনি কীভাবে ইনকাম করতে পারবেন ?
এ সেক্টরকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করলে ঠিক কেমন হবে সে বিষয়ে এতোক্ষণে নিশ্চয়ই আপনার মনে প্রশ্ন জেগেছে।
বর্তমান সময়ে ফ্যাশন ডিজাইনিং অনেক জনপ্রিয় একটি পেশা। যদিও পেশা হিসেবে আমাদের দেশে ডিজাইনিং এখন অনেক চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু সৃজনশীলতা ও কর্মদক্ষতা থাকলে
- ভালো ডিজাইনার নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে একটি ভালো পদে চাকরি কিংবা নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন।
- এই পেশায় ডিজাইন সেক্টরে কাজ করলে দেশে বিদেশে বড় এক্সপো বা মেলায় অংশগ্রহণ করা যায়, যেখান থেকে আপনি খুব সহজে এই সেক্টরে বড় মাপের মানুষের কাছে নিজের যোগ্যোতা তুলে ধরে ভালো মাপের ইনকাম করার সুযোগ পাচ্ছেন যা অন্য সেক্টরে আপনি এত সহজে পাবেন না ।
- ক্রেতাদের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ স্থাপন করা যায়, ফলে খুব সহজে আপনি পারমানেন্ট কাস্টমার যোগার করতে পারবেন।
- কাজের প্রতি পরিশ্রমী হলে খুব সহজেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করার সুযোগ পাওয়া যায়। এখানে নারী-পুরুষ সমান তালমিলিয়ে কাজ করে।
- এছাড়ার আপন দেশের অভ্যান্তরে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজের হয়ে জব করতে পারেন যা এই সেক্টরের সেরা ইনকাম সুযোগ বলে আমার মনে হয়।
- তাছাড়া আপনি বিভিন্ন গার্মেন্স বা ব্রান্ডের কাপরের দোকান বা বুটিক্স হাউজ এউ কাজের বিস্তর সুযোগ পাবেন।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ পোশাক শিল্পে বিশ্ববাজারে অনেক এগিয়ে রয়েছে। দেশজুড়ে হাজার হাজার গার্মেন্টস, বায়িং হাউজ, ফ্যাশন হাউজ আর বুটিক হাউজ গড়ে উঠার ফলে এ সব খাতে দক্ষ জনবলের চাহিদা তৈরি হচ্ছে। তাই একজন ফ্যাশন ডিজাইনার যদি একে নিজের পেশায় রূপ দিতে চান তাহলে তাকে খুব বেশি কাঠখড় না পুড়িয়ে নিজের এবং নিজের কাজের প্রতি কনফিডেন্ট থাকতে হবে।
তাছাড়া এখন তো গার্মেন্টস শিল্প, বায়িং হাউজ, ফ্যাশন হাউজ সব জায়গায়তে নূন্যতম একজন ফ্যাশন ডিজাইনার থাকা বাধ্যতামূলক হয়ে গিয়েছে। তাই গার্মেন্ট শিল্প প্রতিষ্ঠানে ফ্যাশন ডিজাইন ও অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিংয়ে ডিগ্রি নেয়া শিক্ষার্থীদের পাস করে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চাকরি পেয়ে যায়।
কোথায় ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়বেন?
বর্তমানের বাংলাদেশে সেরা কয়েকটি ফ্যাশন ডিজাইন কোর্স হলোঃ
- মাস্টার ডিপ্লোমা ইন ফ্যাশন ডিজাইন
- প্রফেশনাল ফ্যাশন ডিজাইন
- সার্টিফিকেট কোর্স ইন ফ্যাশন ডিজাইন
আমাদের দেশে থেকে যদি আপনি ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশোনা করে এই পেশায় থাকতে চান তাহলে আপনাকে টপ লেভেলের কিছু প্রতিষ্ঠানের সাথে পরিচয় করিয়ে দিই –
- বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সটাইল (বুটেক্স)
- বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অফ ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলোজি (BUFT)
- শান্ত-মরিয়াম ইউনিভার্সিটি অফ ক্রিয়েটিভ টেকনোলোজি (SMUCT)
- ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ফ্যাশন টেকনোলজি
- উত্তরা ইউনিভার্সিটি
- ঢাকা ইন্সটিটিউট অফ ফ্যাশন ইত্যাদি।
এছাড়া দেশের বাহিরেও এ বিষয়ে পড়াশোনা কিংবা রিসার্চ, পিএইচডি করার জন্যেও বিখ্যাত কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের সান্নিধ্যে আপনি নিজেকে যোগ্য হিসেবে প্রমাণ করতে সক্ষম হবেনই।
তাছাড়া আমাদের দেশে বিভিন্ন সংস্থার পরিচালনায় অনেক ছয় মাস বা এক বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স রয়েছে। যেগুলোতে অংশ নিয়েও আপনি ফ্যাশন ডিজাইনিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ও শিখতে পারবেন।
অন্যদিকে উচ্চডিগ্রির ক্ষেত্রে রয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ফ্যাশন ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজি, অ্যাপারেল ম্যানুফেকচার অ্যান্ড টেকনোলজি, নিটওয়ার ম্যানুফেকচার অ্যান্ড টেকনোলজি বিষয়গুলোর উপর অনার্স এবং এমবিএ ইন অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং নিয়ে পড়া যেতে পারে।
পরিশেষে, বর্তমানে এ পেশা কে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয় তাই এ বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা যেনো আর অমাবস্যার চাঁদ নয়। উন্নত পৃথিবীতে এখন সবই যেনো আমাদের হাতের মুঠোয়। তাই নিজেকে একজন সফল ডিজাইনার হিসেবে গড়ে তুলতে চাই অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও অক্লান্ত পরিশ্রম।