জীবনে নানা সময় আর্থিক চাহিদা দেখা দিতে পারে, যেটি তাৎক্ষণিকভাবে পূরণ করা সবসময় সম্ভব হয় না। এমন পরিস্থিতিতে মানুষ সাধারণত ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান কিংবা মোবাইল ফাইন্যান্সিং সার্ভিস (এমএফএস) থেকে লোন নেয়ার চিন্তা করে। তবে লোন নেওয়ার আগে কিছু বিষয় জানা জরুরি—যেমন: কীভাবে সহজে লোন পাওয়া যায়, কীভাবে কিস্তি পরিশোধ করতে হয় এবং কোন কোন প্রতিষ্ঠান সুবিধাজনক শর্তে লোন দিয়ে থাকে। এই লেখায় আমরা আলোচনা করব কীভাবে সহজ শর্তে টাকা লোন নেওয়া যায়, সহজ কিস্তিতে লোনের প্রকারভেদ, এবং লোন গ্রহণের সময় কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
যা যা থাকছে
লোন পাওয়ার প্রধান মাধ্যমসমূহ
টাকা লোন নেওয়ার জন্য সাধারণত তিনটি প্রধান উৎস রয়েছে:
- বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক ব্যক্তি ও ব্যবসার জন্য পার্সোনাল লোন, হোম লোন, এডুকেশন লোন, কিংবা এসএমই লোন দিয়ে থাকে। ব্যাংকে লোন পেতে হলে আপনাকে কিছু নির্দিষ্ট কাগজপত্র যেমন জাতীয় পরিচয়পত্র, চাকরির প্রমাণপত্র, ইনকাম সার্টিফিকেট ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দিতে হয়। যাদের ক্রেডিট স্কোর ভালো, তারা তুলনামূলক কম সুদে সহজ শর্তে ব্যাংক লোন পেতে পারেন।
- এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকের বাইরে থেকেও লোন সেবা দিয়ে থাকে। কিছু জনপ্রিয় এনবিএফআই যেমন আইডিএলসি, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স ইত্যাদি পার্সোনাল ও ব্যবসায়িক লোন দিয়ে থাকে। এখানে প্রক্রিয়াটি ব্যাংকের তুলনায় সহজ হতে পারে, তবে সুদের হার কিছুটা বেশি হতে পারে।
- বিকাশ, নগদ, এমক্যাশ, উপাইসহ কিছু ডিজিটাল ফাইন্যান্সিং অ্যাপ এখন ছোট অঙ্কের লোন দিয়ে থাকে। এই লোনের প্রক্রিয়া একদম সহজ এবং অনেক সময় শুধুমাত্র এনআইডি ও মোবাইল নাম্বার যাচাই করেই লোন দেওয়া হয়। তবে কিস্তির সময়সীমা কম এবং সুদের হার তুলনামূলক বেশি হতে পারে।
সহজ কিস্তিতে লোন – কিভাবে কাজ করে?
অনেকেই এককালীন টাকা পরিশোধ করতে না পারায় সহজ কিস্তিতে লোন পরিশোধের ব্যবস্থা খোঁজেন। সহজ কিস্তি বলতে বোঝায় মাসিক বা সাপ্তাহিক ভিত্তিতে নির্ধারিত অঙ্ক পরিশোধ করা।
- ইএমআই বা ইকুয়াল মান্থলি ইনস্টলমেন্ট হলো এমন এক পদ্ধতি যেখানে আপনি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লোন ও সুদসহ নির্ধারিত মাসিক কিস্তি দিয়ে পরিশোধ করবেন।
- অনেক প্রতিষ্ঠান এখন গ্রাহকদের আর্থিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে কিস্তির সময় নির্ধারণ করে থাকে—যেমন ৩ মাস, ৬ মাস, ১ বছর বা তার বেশি। এর ফলে গ্রাহক নিজ অর্থনৈতিক সক্ষমতা অনুযায়ী পরিকল্পনা করে লোন পরিশোধ করতে পারেন।
- বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এখন আগাম কিস্তি পরিশোধ করলে সুদে ছাড় দেয়, যা গ্রাহকের জন্য বাড়তি সুবিধা।
লোন নেওয়ার আগে যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
টাকা লোন নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক বিবেচনা করা উচিত যাতে ভবিষ্যতে আর্থিক চাপ তৈরি না হয়।
- আপনার আয় ও খরচ বিবেচনা করে এমন কিস্তি নির্ধারণ করুন যেটি সময়মতো পরিশোধ করা সম্ভব। মনে রাখবেন, সময়মতো কিস্তি না দিলে অতিরিক্ত জরিমানা এবং ক্রেডিট স্কোর খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- একই পরিমাণ লোন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভিন্ন ভিন্ন সুদে পাওয়া যায়। সুদের হার, প্রসেসিং ফি ও অন্যান্য চার্জ যাচাই করে তুলনামূলকভাবে ভালো অফার বেছে নিন।
- অভিজ্ঞ এবং অনুমোদিত ব্যাংক বা এনবিএফআই থেকে লোন নেওয়াই নিরাপদ। অননুমোদিত বা সন্দেহজনক অ্যাপ থেকে লোন নিয়ে প্রতারণার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- লোন নেওয়ার সময় সব শর্ত বিস্তারিতভাবে পড়ে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করুন। অনেক সময় ছোট অক্ষরে জরুরি শর্ত লেখা থাকে যা পরবর্তীতে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
শেষ কথা
বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় হঠাৎ আর্থিক চাহিদা মেটাতে লোন একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে, তবে সেটি হতে হবে সচেতনভাবে গ্রহণ করা। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম—যেখান থেকেই লোন নিন না কেন, তা যেন আপনার আয়ের পরিমাণ ও পরিশোধ ক্ষমতার মধ্যে থাকে। সহজ কিস্তিতে লোন পরিশোধের সুবিধা থাকলেও তা সময়মতো পরিশোধ না করলে ভবিষ্যতে আর্থিক সংকটে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই লোন নেওয়ার আগে ভালোভাবে গবেষণা করুন, শর্ত বুঝে সিদ্ধান্ত নিন, এবং প্রয়োজন ছাড়া ঋণের ওপর নির্ভরতা তৈরি করবেন না।