বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় ব্যাংকে টাকা সঞ্চয় করা শুধু নিরাপত্তার জন্য নয়, বরং ভবিষ্যতের স্থিতিশীলতার জন্যও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। অনেকেই প্রতিমাসে কিছু টাকা জমিয়ে ভবিষ্যতের বড় খরচ বা জরুরি প্রয়োজনে একটি নির্ভরযোগ্য তহবিল তৈরি করতে চান। ব্যাংকগুলো সাধারণত দুটি জনপ্রিয় সঞ্চয় স্কিম অফার করে— ডিপিএস (Deposit Pension Scheme) এবং এফডিআর (Fixed Deposit Receipt)।
দুই পদ্ধতিই সঞ্চয়ের জন্য ভালো, তবে তাদের কাজের ধরন, মেয়াদ, সুদের হার এবং অর্থ তোলার নিয়মে বড় পার্থক্য রয়েছে। এই নিবন্ধে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো ডিপিএস ও এফডিআর এর পার্থক্য এবং কোনটি আপনার জন্য উপযুক্ত তা নির্ধারণের উপায় নিয়ে।
ডিপিএস কী এবং এর সুবিধা
ডিপিএস (Deposit Pension Scheme) হলো একটি দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় পদ্ধতি, যেখানে নির্দিষ্ট সময় পরিমাণে প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। এটি মূলত ছোট পরিমাণে ধীরে ধীরে বড় অঙ্কের সঞ্চয় তৈরির একটি পদ্ধতি।
ডিপিএসের মূল বৈশিষ্ট্য:
-
মাসিক কিস্তি সাধারণত ৫০০ টাকা থেকে শুরু হয়, যা নিজের আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী নির্ধারণ করা যায়।
-
মেয়াদ সাধারণত ৩ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে।
-
নির্দিষ্ট সময় শেষে গ্রাহক মূলধনসহ মুনাফা পান।
-
অনেক ব্যাংক ডিপিএস গ্রাহকদের বোনাস রেট বা বিশেষ মুনাফা প্রদান করে।
ডিপিএসের সুবিধা:
-
ছোট আয়ের মানুষ সহজে এটি শুরু করতে পারেন।
-
নিয়মিত সঞ্চয়ের অভ্যাস তৈরি হয়।
-
মেয়াদ শেষে একটি বড় অঙ্কের অর্থ হাতে আসে, যা শিক্ষা, বিয়ে, বা বাড়ি নির্মাণের মতো বড় কাজে ব্যবহার করা যায়।
-
অনেক ব্যাংক ডিপিএসের বিপরীতে ঋণ সুবিধাও দেয়।
তবে ডিপিএসের একটি সীমাবদ্ধতা হলো, নির্ধারিত সময়ের আগে টাকা তুললে সাধারণত মুনাফা কম পাওয়া যায় বা কিছু জরিমানা দিতে হয়।
এফডিআর কী এবং এর সুবিধা
এফডিআর (Fixed Deposit Receipt) হলো এমন একটি সঞ্চয় পদ্ধতি যেখানে আপনি একবারে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ব্যাংকে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য জমা রাখেন এবং এর বিপরীতে একটি নির্দিষ্ট হারে মুনাফা পান। এটি মূলত স্থায়ী আমানতের একটি রূপ, যেখানে টাকা নিরাপদ থাকে এবং নিয়মিত সুদ পাওয়া যায়।
এফডিআরের মূল বৈশিষ্ট্য:
-
এককালীন বড় অঙ্কের টাকা জমা দিতে হয়।
-
মেয়াদ সাধারণত ৩ মাস থেকে ৫ বছর পর্যন্ত হতে পারে।
-
সুদের হার সাধারণত ৭% থেকে ১০% পর্যন্ত হয়ে থাকে, ব্যাংকভেদে পার্থক্য দেখা যায়।
-
মেয়াদ শেষে মূল টাকা ও মুনাফা একত্রে পাওয়া যায় বা প্রতি মাসে সুদ নেওয়ার সুযোগ থাকে।
এফডিআরের সুবিধা:
-
উচ্চ মুনাফার হার পাওয়া যায়।
-
এটি ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ বিনিয়োগ।
-
যাদের হাতে বড় অঙ্কের টাকা আছে, তাদের জন্য এটি সর্বোত্তম সঞ্চয় মাধ্যম।
-
অনেক ব্যাংক এফডিআরের বিপরীতে ঋণ বা ওভারড্রাফট সুবিধা দেয়।
তবে অসুবিধা হলো, মেয়াদ শেষের আগে টাকা তুললে গ্রাহককে কম সুদ বা জরিমানা দিতে হয়।
ডিপিএস ও এফডিআর এর পার্থক্য এবং কোনটি বেছে নেবেন
ডিপিএস ও এফডিআর—দুইটি সঞ্চয় স্কিমই উপকারী, তবে এগুলোর ব্যবহার নির্ভর করে আপনার আয়ের ধরন ও লক্ষ্য অনুযায়ী। নিচে তাদের মূল পার্থক্য তুলে ধরা হলো—
| বিষয় | ডিপিএস (DPS) | এফডিআর (FDR) |
|---|---|---|
| জমার ধরন | মাসে মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ জমা | একবারে বড় অঙ্ক জমা |
| মেয়াদ | ৩ থেকে ১০ বছর | ৩ মাস থেকে ৫ বছর |
| সুদের হার | তুলনামূলক কম (৬%-৮%) | তুলনামূলক বেশি (৭%-১০%) |
| টার্গেট গ্রাহক | ছোট আয়ের মানুষ | বড় অঙ্কের সঞ্চয়কারী |
| টাকা তোলার নিয়ম | মেয়াদ শেষের আগে তুললে জরিমানা | মেয়াদ শেষের আগে তুললে সুদ কমে যায় |
| উদ্দেশ্য | ধীরে ধীরে বড় অঙ্ক গঠন | নির্দিষ্ট সময়ে স্থায়ী মুনাফা পাওয়া |
কোনটি ভালো?
যদি আপনি ছাত্র, চাকরিজীবী বা ছোট আয়ের ব্যক্তি হন এবং প্রতি মাসে সামান্য টাকা সঞ্চয় করতে চান, তবে ডিপিএস আপনার জন্য আদর্শ।
কিন্তু যদি আপনার হাতে এককালীন বড় অঙ্কের টাকা থাকে এবং তা থেকে নির্দিষ্ট মেয়াদে ভালো মুনাফা পেতে চান, তাহলে এফডিআর হবে সেরা বিকল্প।
ডিপিএস ও এফডিআর—উভয়ই বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় জনপ্রিয় সঞ্চয় পদ্ধতি। তবে সঠিকটি নির্বাচন করতে হবে আপনার আর্থিক সামর্থ্য, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং ঝুঁকির মানসিকতার ওপর ভিত্তি করে। নিয়মিত ছোট সঞ্চয় গড়ে তুলতে ডিপিএস যেমন উপযুক্ত, তেমনি স্থায়ী বিনিয়োগ ও মুনাফার জন্য এফডিআর সবচেয়ে কার্যকর।
অতএব, ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখনই নিজের উপযুক্ত সঞ্চয় স্কিম বেছে নিন।
