ডিসকাউন্ট দিয়ে কাস্টমার বাড়ানোর ৭টি টিপস জেনে নিন

বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসা জগতে গ্রাহকের মন জয় করাই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। আর এই গ্রাহক আকর্ষণের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো ডিসকাউন্ট অফার। সঠিকভাবে পরিকল্পিত ডিসকাউন্ট কৌশল শুধু বিক্রি বাড়ায় না, বরং ব্র্যান্ডের প্রতি গ্রাহকের বিশ্বাস ও আনুগত্যও তৈরি করে। অনেক সময় ব্যবসায়ীরা ভাবেন, ডিসকাউন্ট দিলে লাভ কমে যায়—কিন্তু বাস্তবে এটি বিক্রয় বাড়িয়ে সামগ্রিক লাভের হার বৃদ্ধি করে। তাই আজ আমরা জানব ডিসকাউন্টের মাধ্যমে কাস্টমার বাড়ানোর ৭টি কার্যকর টিপস যা আপনার ব্যবসাকে আরও এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে।

১. সীমিত সময়ের ডিসকাউন্ট দিন – “লিমিটেড টাইম অফার” কৌশল

সীমিত সময়ের ডিসকাউন্ট অফার গ্রাহকের মনে জরুরিতার অনুভূতি তৈরি করে। উদাহরণস্বরূপ, “শুধু আজকের জন্য ২০% ছাড়” বা “৩ দিনের অফার শেষ হচ্ছে কাল” — এমন বার্তা ক্রেতাকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহিত করে।
এই কৌশল অনলাইন স্টোর, পোশাকের দোকান, এমনকি ইলেকট্রনিক্স ব্যবসার জন্যও খুবই কার্যকর। কারণ গ্রাহকরা সাধারণত ছাড় শেষ হওয়ার আগেই পণ্য কিনে ফেলার প্রবণতা দেখান। তবে এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—অফারের সময়সীমা স্পষ্টভাবে জানানো এবং সেটি সময়মতো শেষ করা, যাতে ব্র্যান্ডের প্রতি গ্রাহকের আস্থা বজায় থাকে।

২. বাল্ক পারচেজে ডিসকাউন্ট দিন – বেশি কিনলে বেশি লাভ

গ্রাহককে একাধিক পণ্য কেনার উৎসাহ দিতে “বাল্ক ডিসকাউন্ট” বা “বাই মোর, সেভ মোর” কৌশল খুব কার্যকর। যেমন—“২টি কিনলে ১টি ফ্রি” বা “৩টির বেশি কিনলে ২৫% ছাড়”।
এটি শুধু বিক্রয় সংখ্যা বাড়ায় না, বরং গড় ক্রেতা প্রতি বিক্রয়ের পরিমাণও বাড়িয়ে দেয়। এই কৌশল গ্রোসারি, কসমেটিকস, পোশাক বা অনলাইন গিফট শপের ক্ষেত্রে দারুণ ফলপ্রসূ।
তবে ডিসকাউন্টের হার এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যাতে লাভের পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। স্মার্ট ব্যবসায়ীরা সাধারণত এমন পণ্য নির্বাচন করেন যেগুলোর উপর প্রফিট মার্জিন তুলনামূলক বেশি থাকে।

See also  বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা ২০২৫ - সেরা ১০ টি টিপস ব্যবসার

৩. নতুন গ্রাহকদের জন্য বিশেষ ছাড় দিন – “ফার্স্ট টাইম বায়ার অফার”

নতুন গ্রাহক আকর্ষণে এটি অন্যতম জনপ্রিয় কৌশল। যখন কেউ প্রথমবার আপনার দোকান বা অনলাইন সাইট থেকে পণ্য কিনবে, তাকে বিশেষ ছাড় দিন। যেমন—“প্রথম অর্ডারে ২০% ছাড়” বা “ফ্রি ডেলিভারি অফার”।
এই ছোট ইনসেন্টিভ নতুন ক্রেতাকে কেনাকাটায় উদ্বুদ্ধ করে এবং ভবিষ্যতে তাকে স্থায়ী কাস্টমারে পরিণত করে।
এছাড়া, ইমেইল মার্কেটিং বা সোশ্যাল মিডিয়া বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই অফার প্রচার করলে অনেক বেশি নতুন গ্রাহক যুক্ত করা সম্ভব।

৪. উৎসবভিত্তিক ডিসকাউন্ট অফার দিন – বিশেষ দিনে বিক্রি বাড়ান

বাংলাদেশে ঈদ, পূজা, পহেলা বৈশাখ, বা নববর্ষের সময় মানুষ কেনাকাটায় আগ্রহী থাকে। তাই এই সময়গুলোতে উৎসবভিত্তিক ডিসকাউন্ট দিলে বিক্রি দ্বিগুণ হতে পারে।
“ঈদ মেগা সেল”, “বৈশাখী অফার” বা “নিউ ইয়ার ডিসকাউন্ট”—এমন প্রচারণা গ্রাহকের মাঝে উত্তেজনা তৈরি করে।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত উৎসবের আগে থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রচারণা চালায়। এই কৌশল শুধু বিক্রি বাড়ায় না, ব্র্যান্ড সচেতনতা তৈরিতেও সাহায্য করে।

৫. লয়ালটি প্রোগ্রামের মাধ্যমে পুরনো গ্রাহক ধরে রাখুন

নতুন গ্রাহক আনার চেয়ে পুরনো গ্রাহক ধরে রাখা অনেক বেশি লাভজনক। তাই গ্রাহক লয়ালটি প্রোগ্রাম চালু করুন। উদাহরণস্বরূপ, “প্রতি ৫টি কেনাকাটায় ১টি ফ্রি”, “পয়েন্ট অর্জন করে ছাড় নিন” ইত্যাদি।
এই কৌশল গ্রাহকের মনে বিশেষ গুরুত্বের অনুভূতি তৈরি করে এবং তারা নিয়মিত আপনার কাছ থেকে কেনাকাটা করতে আগ্রহী হয়।
বিশেষত অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্ম ও কফি শপগুলো এই ধরনের লয়ালটি প্রোগ্রামের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে ক্রেতার সংখ্যা বৃদ্ধি করে থাকে।

৬. সোশ্যাল মিডিয়ায় ফ্ল্যাশ সেল চালান – আকস্মিক অফারে বিক্রি বাড়ান

বর্তমান সময়ে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা টিকটকে ফ্ল্যাশ সেল আয়োজন করে অল্প সময়েই প্রচুর বিক্রি বাড়ানো যায়।
যেমন—“আজ রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ৫০% ছাড়”—এমন আকস্মিক অফার গ্রাহকের মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং দ্রুত বিক্রয় বাড়ায়।
এই কৌশলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সময়মতো ঘোষণা দেওয়া এবং সীমিত সময়ের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি নিশ্চিত করা।
একইসাথে লাইভ সেশনের মাধ্যমে পণ্য প্রদর্শন করলে ক্রেতারা আরও বেশি উৎসাহিত হয় কেনাকাটায়।

See also  ২০২৩ সালে নতুন ব্যবসা কৌশল । Business Tips in Bangla

৭. কুপন ও ভাউচার অফার দিন – গ্রাহককে ফিরে আসতে উৎসাহিত করুন

গ্রাহককে পুনরায় কেনাকাটায় আগ্রহী করতে কুপন কোড বা ডিসকাউন্ট ভাউচার দেওয়া খুব কার্যকর।
যেমন—“আগামী কেনাকাটায় ১০% ছাড়” বা “বন্ধুকে রেফার করলে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট”।
এই ধরনের অফার গ্রাহকের মধ্যে “রিটার্ন ভিজিট” বাড়ায়, অর্থাৎ তারা আবার আপনার দোকান বা ওয়েবসাইটে ফিরে আসে।
এছাড়া, ইমেইল বা এসএমএসের মাধ্যমে ভাউচার পাঠিয়ে গ্রাহকের মনে ব্যক্তিগত সম্পর্কের অনুভূতি তৈরি করা যায়।

ডিসকাউন্ট শুধু বিক্রয় বাড়ানোর একটি কৌশল নয়, বরং এটি গ্রাহকের মনস্তত্ত্বের সাথে গভীরভাবে জড়িত। সঠিক সময়ে এবং সঠিকভাবে প্রয়োগ করলে এটি ব্যবসার স্থায়ী বৃদ্ধির ভিত্তি গড়ে তুলতে পারে। সীমিত সময়ের অফার, নতুন গ্রাহকদের ছাড়, উৎসব সেল বা লয়ালটি প্রোগ্রাম—সবগুলোই গ্রাহকের আস্থা বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। তাই এখনই আপনার ব্যবসার ধরন অনুযায়ী উপযুক্ত ডিসকাউন্ট কৌশল বেছে নিন এবং বিক্রয়ে আনুন দৃশ্যমান পরিবর্তন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *