বর্তমান সময়ে ব্যবসা শুরু করার জন্য বড় পুঁজির প্রয়োজন নেই। অনেকেই মনে করেন ব্যবসা মানেই লাখ টাকা বিনিয়োগ, দোকান ভাড়া, বড় স্টক ইত্যাদি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, মাত্র ২০০০ টাকার মতো সামান্য মূলধন দিয়েই ঘরে বসে বিভিন্ন ছোট ব্যবসা শুরু করা যায়। এসব ব্যবসা শুরুতে ছোট হলেও সঠিক পরিকল্পনা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে ধীরে ধীরে বড় আকারে রূপ নেয়। বিশেষ করে গৃহিণী, শিক্ষার্থী বা আংশিক সময় কাজে আগ্রহী ব্যক্তিদের জন্য এটি দারুণ একটি সুযোগ। এখন জেনে নেওয়া যাক ২০০০ টাকার বিনিয়োগে কোন কোন ঘরোয়া ব্যবসা শুরু করা যায় এবং কিভাবে তা থেকে ভালো আয় সম্ভব।
যা যা থাকছে
হস্তশিল্প পণ্য তৈরির ব্যবসা
বাংলাদেশে হস্তশিল্পের চাহিদা সবসময়ই বেশি। কাপড়, সুতা, কাঠ বা বাঁশ দিয়ে তৈরি ছোটখাটো শো-পিস, ওয়াল হ্যাংগিং, ব্যাগ বা অলংকার তৈরি করে বিক্রি করা যায়।
-
প্রাথমিকভাবে ২০০০ টাকা দিয়ে সুতা, কাপড়, কাঁচি, আঠা ইত্যাদি উপকরণ কিনে কাজ শুরু করা সম্ভব।
-
পণ্য তৈরি করে স্থানীয় হাট-বাজারে বা অনলাইনে ফেসবুক পেজ, ই-কমার্স সাইটে বিক্রি করা যায়।
-
যেহেতু এটি হাতের তৈরি, তাই ক্রেতাদের কাছে আলাদা মূল্য থাকে এবং লাভও তুলনামূলক ভালো হয়।
👉 শুরুতে ছোট আকারে কাজ শুরু করে পরে এটি বড় ব্যবসায় পরিণত করা যায়।
অনলাইন ফুড ডেলিভারি বা হোমমেড খাবারের ব্যবসা
খাবারের ব্যবসা সবসময় লাভজনক এবং চাহিদাসম্পন্ন। ঘরে তৈরি কেক, পিঠা, স্ন্যাকস বা ফাস্ট ফুড বানিয়ে আশেপাশের এলাকায় বিক্রি করা যায়।
-
২০০০ টাকা দিয়েই ডিম, ময়দা, চিনি, তেল ইত্যাদি উপকরণ কিনে ছোট আকারে খাবার তৈরি করা সম্ভব।
-
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অর্ডার নেওয়া যায় এবং বাসায় বসেই ডেলিভারি করা সম্ভব।
-
স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী, কর্মজীবী মানুষ বা অফিস এলাকায় এই ব্যবসার চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
👉 সঠিক প্রচারণা করলে অল্প সময়ে এই ব্যবসা বড় আকার ধারণ করতে পারে।
অনলাইন রিসেলিং ব্যবসা
বর্তমানে অনলাইন রিসেলিং সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যবসার একটি। নিজের কাছে পণ্য মজুত রাখার প্রয়োজন নেই। পাইকারি বাজার বা হোলসেল সরবরাহকারীদের কাছ থেকে ছবি সংগ্রহ করে ফেসবুক বা ওয়েবসাইটে আপলোড করে বিক্রি শুরু করা যায়।
-
প্রাথমিকভাবে ২০০০ টাকা দিয়ে ২-৩টি নমুনা পণ্য কিনে কাজ শুরু করা যায়।
-
ক্রেতার কাছ থেকে অর্ডার পাওয়ার পর পাইকারি দামে পণ্য কিনে ডেলিভারি করতে হবে।
-
এই ব্যবসায় জামা-কাপড়, কসমেটিকস, মোবাইল এক্সেসরিজ বা ঘরোয়া সরঞ্জাম বিক্রি করা যায়।
👉 যেহেতু বড় স্টক রাখতে হয় না, তাই ঝুঁকিও অনেক কম।
ঘরে বসে টিউশনি বা অনলাইন ক্লাস
যাদের পড়াশোনার দক্ষতা আছে তারা খুব সহজেই টিউশনি বা অনলাইন ক্লাস ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
-
প্রাথমিকভাবে ২০০০ টাকা দিয়ে হোয়াইট বোর্ড, মার্কার, খাতা-কলম কিংবা অনলাইন ক্লাসের জন্য প্রয়োজনীয় ইন্টারনেট খরচ মেটানো যায়।
-
স্থানীয়ভাবে ছোট শিক্ষার্থীদের পড়ানো ছাড়াও Zoom, Google Meet, Facebook Live-এর মতো প্ল্যাটফর্মে অনলাইন ক্লাস নেওয়া সম্ভব।
-
ইংরেজি, গণিত বা কম্পিউটার কোর্স পড়ালে চাহিদা আরও বেশি পাওয়া যায়।
👉 এটি কম বিনিয়োগে দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী আয় করার অন্যতম একটি উপায়।
কসমেটিকস ও জুয়েলারি বিক্রির ব্যবসা
ছোট কসমেটিকস বা কৃত্রিম গহনার ব্যবসা নারীদের মধ্যে খুব জনপ্রিয়।
-
২০০০ টাকা দিয়ে কসমেটিকস হোলসেল মার্কেট থেকে কিছু লিপস্টিক, নেইলপলিশ, ব্রেসলেট বা কানের দুল কিনে ব্যবসা শুরু করা যায়।
-
পণ্যগুলো বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিক্রি করা যায়।
-
যেহেতু নারীরা এসব পণ্যের প্রধান ক্রেতা, তাই এর চাহিদা সবসময়ই ভালো থাকে।
👉 একটু সৃজনশীলভাবে মার্কেটিং করলে এই ব্যবসা খুব দ্রুত বাড়ানো সম্ভব।
মাত্র ২০০০ টাকার মতো অল্প মূলধন দিয়েও যদি সঠিক পরিকল্পনায় ব্যবসা শুরু করা যায় তবে ধীরে ধীরে তা বড় আকারে পরিণত হতে পারে। হস্তশিল্প, খাবার ব্যবসা, অনলাইন রিসেলিং, টিউশনি কিংবা কসমেটিকস বিক্রি—প্রতিটি ক্ষেত্রেই নির্ভরযোগ্য আয় করার সুযোগ রয়েছে। শুরুতে ব্যবসাকে ছোট আকারে নিলেও ধৈর্য, পরিশ্রম ও সঠিক প্রচারণার মাধ্যমে মাসিক হাজার হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। তাই বড় মূলধনের চিন্তা বাদ দিয়ে আজই ছোট পুঁজিতে নিজের ঘরোয়া ব্যবসা শুরু করুন।
