বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা একটি দ্রুত বর্ধনশীল শহর যেখানে প্রতিদিন নতুন উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী তাদের স্বপ্ন নিয়ে কাজ শুরু করছেন। জনসংখ্যা, প্রযুক্তি, ও ভোক্তা চাহিদার কারণে ঢাকায় ব্যবসার সম্ভাবনা অসীম। সঠিক পরিকল্পনা ও সৃজনশীল ধারণা থাকলে অল্প পুঁজিতেও এই শহরে লাভজনক ব্যবসা গড়ে তোলা সম্ভব। আপনি যদি চাকরির পাশাপাশি পার্ট-টাইম ব্যবসা করতে চান বা পুরোপুরি উদ্যোক্তা হতে চান, তাহলে নিচে আলোচনা করা হলো ঢাকা শহরের সেরা ৭টি ব্যবসার আইডিয়া, যেগুলো ২০২৫ সালে সবচেয়ে বেশি চাহিদাসম্পন্ন হতে পারে।
যা যা থাকছে
১. অনলাইন ফুড ডেলিভারি সার্ভিস ব্যবসা
ঢাকায় অফিস, স্কুল, কলেজ এবং ব্যস্ত জীবনের কারণে অনলাইন ফুড ডেলিভারি সার্ভিসের চাহিদা অনেক বেড়েছে। Uber Eats, Foodpanda, Pathao Food-এর মতো প্ল্যাটফর্মের পাশাপাশি নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরি করেও আপনি এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
নিজস্ব ওয়েবসাইট বা ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অর্ডার গ্রহণ, রেস্টুরেন্ট পার্টনারশিপ এবং নির্ভরযোগ্য ডেলিভারি টিম তৈরি করে মাসিক ৩০,০০০ থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় সম্ভব।
অল্প পুঁজিতে ঘরে বসে এই ব্যবসা শুরু করা যায়, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো গ্রাহক সেবা এবং সময়মতো ডেলিভারি নিশ্চিত করা।
২. ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি ব্যবসা
বর্তমানে প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠান অনলাইন প্রচারণার দিকে ঝুঁকছে। সঠিকভাবে পরিচালিত একটি ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি ঢাকায় অত্যন্ত লাভজনক হতে পারে।
এই ব্যবসায় আপনি সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট, বিজ্ঞাপন পরিচালনা (Facebook Ads, Google Ads), ওয়েবসাইট SEO, ও গ্রাফিক ডিজাইন সার্ভিস দিতে পারেন।
প্রাথমিকভাবে একটি ল্যাপটপ, ইন্টারনেট সংযোগ, এবং ২-৩ জন দক্ষ কর্মী দিয়ে কাজ শুরু করা যায়। আপনি যদি মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি সম্পর্কে জানেন, তাহলে ফ্রিল্যান্স ক্লায়েন্ট নিয়েও কাজ করে সহজেই মাসে ৫০,০০০ টাকার বেশি আয় করা সম্ভব।
৩. মোবাইল ফোন ও গ্যাজেট রিপেয়ারিং ব্যবসা
ঢাকা শহরে প্রতিদিন হাজারো মোবাইল ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহৃত হচ্ছে, যার মধ্যে অনেকগুলো নষ্ট হয়ে যায়। তাই মোবাইল ও গ্যাজেট রিপেয়ারিং ব্যবসা এখন খুবই সম্ভাবনাময়।
আপনি চাইলে অনলাইন কোর্স বা টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেই সার্ভিস সেন্টার খুলতে পারেন। প্রাথমিকভাবে ৩০,০০০–৫০,০০০ টাকার মধ্যে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনে কাজ শুরু করা যায়।
এ ব্যবসায় লাভের হার ৪০–৬০% পর্যন্ত হতে পারে, বিশেষ করে ব্যাটারি, ডিসপ্লে ও সফটওয়্যার রিপেয়ারিং সার্ভিসে। পাশাপাশি মোবাইল কভার, চার্জার, ইয়ারফোন ইত্যাদি এক্সেসরিজ বিক্রি করেও অতিরিক্ত আয় সম্ভব।
৪. অনলাইন বুটিক বা ফ্যাশন হাউজ ব্যবসা
ঢাকার তরুণ প্রজন্ম ফ্যাশনপ্রেমী, তাই অনলাইন বুটিক ব্যবসা এখন অনেক জনপ্রিয়। আপনি নিজের তৈরি পোশাক, হিজাব, জুয়েলারি বা ব্যাগ অনলাইনে বিক্রি করতে পারেন।
ফেসবুক পেজ, ইনস্টাগ্রাম, বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রচার করে ঘরে বসেই গ্রাহক সংগ্রহ করা যায়। প্রাথমিকভাবে ২০,০০০–৩০,000 টাকার মধ্যে ছোট স্কেলে শুরু করা সম্ভব।
কাস্টমারদের পছন্দ ও মৌসুমি ট্রেন্ড অনুযায়ী নতুন ডিজাইন আনলে এই ব্যবসা থেকে মাসে ৫০,০০০ টাকারও বেশি মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। সঠিক প্রচারণা ও ভালো প্যাকেজিং এই ব্যবসার সফলতার মূল চাবিকাঠি।
৫. কফি শপ বা ছোট রেস্টুরেন্ট ব্যবসা
ঢাকায় এখন কফি কালচার দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস এলাকা বা আবাসিক এলাকায় একটি ছোট কফি শপ বা রেস্টুরেন্ট খুলে আপনি স্থায়ী গ্রাহক তৈরি করতে পারেন।
এই ব্যবসার জন্য ২–৫ লাখ টাকার প্রাথমিক পুঁজি লাগলেও এটি দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক। গ্রাহকদের জন্য আরামদায়ক পরিবেশ, ফ্রি ওয়াইফাই ও মানসম্মত খাবার সরবরাহ করলে দিনে সহজেই ৫,০০০–১০,০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি সম্ভব।
এছাড়া অনলাইন অর্ডার ও ফুড ডেলিভারি সংযুক্ত করলে ব্যবসা আরও দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
৬. ফ্রিল্যান্সিং ও আইটি সার্ভিস সেন্টার
যাদের কম্পিউটার ও ইন্টারনেট জ্ঞান আছে তারা সহজেই ফ্রিল্যান্সিং সার্ভিস সেন্টার খুলে দিতে পারেন। এখানে ডিজাইন, কনটেন্ট রাইটিং, ডেটা এন্ট্রি, ওয়েব ডিজাইন, বা ভিডিও এডিটিং সার্ভিস দিয়ে আয় করা যায়।
আপনি চাইলে স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে নতুন ফ্রিল্যান্সার তৈরি করে কমিশন ভিত্তিক আয়ের ব্যবস্থাও করতে পারেন।
প্রাথমিক বিনিয়োগ কম, তবে দক্ষতা ও ক্লায়েন্ট ম্যানেজমেন্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটি ভালো টিম থাকলে মাসিক ৮০,০০০ টাকারও বেশি আয় করা সম্ভব।
৭. হোম ডেলিভারি ও কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসা
ঢাকায় ই-কমার্স বৃদ্ধির ফলে হোম ডেলিভারি ও কুরিয়ার সার্ভিস এখন সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ব্যবসাগুলোর একটি।
আপনি চাইলে একটি নির্দিষ্ট এলাকার জন্য ছোট স্কেলের কুরিয়ার সার্ভিস শুরু করতে পারেন। অনলাইন বিক্রেতাদের সঙ্গে চুক্তি করে পণ্য সরবরাহের কাজ করলে প্রতিটি ডেলিভারিতে কমিশন পাওয়া যায়।
শুরুতে কয়েকজন ডেলিভারি কর্মী ও একটি বাইক দিয়ে কাজ শুরু করলেই হবে। সঠিক সময়ে পণ্য সরবরাহ ও ভালো গ্রাহক সেবা এই ব্যবসার সফলতার মূল রহস্য।
ঢাকা শহর উদ্যোক্তাদের জন্য সুযোগে পরিপূর্ণ। এখানে প্রতিদিন নতুন চাহিদা তৈরি হচ্ছে, আর সেই চাহিদা পূরণ করার মধ্য দিয়েই জন্ম নিচ্ছে সফল ব্যবসা। আপনি যেই ব্যবসাটিই বেছে নিন না কেন—সততা, পরিকল্পনা, বাজার বিশ্লেষণ এবং ভালো কাস্টমার সার্ভিস থাকলে সফলতা আসবেই। ছোট পুঁজিতে শুরু করেও বড় স্বপ্ন পূরণ সম্ভব, যদি ধৈর্য ও পরিশ্রম ধরে রাখা যায়।
