বর্তমানে নিরাপদ ও নিশ্চিত সঞ্চয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে ফিক্সড ডিপোজিট রসিদ (FDR)। যারা ঝুঁকি নিতে চান না এবং নির্দিষ্ট সময় পর সুদসহ টাকা ফেরত পেতে চান, তাদের জন্য এফডিআর একটি নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগ পদ্ধতি। বাংলাদেশে প্রায় সব ব্যাংকেই এফডিআর সুবিধা রয়েছে, তবে ব্যাংকভেদে মুনাফার হার ভিন্ন হয়ে থাকে। তাই গ্রাহকদের উচিত এফডিআর করার আগে বিভিন্ন ব্যাংকের সুদের হার, মেয়াদ, শর্তাবলী ও গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করা। নিচে আলোচনা করা হলো কোন কোন ব্যাংকে FDR করলে তুলনামূলকভাবে বেশি মুনাফা পাওয়া যায়।
যা যা থাকছে
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর এফডিআর মুনাফার হার
বাংলাদেশে বেসরকারি ব্যাংকগুলো সাধারণত সরকারি ব্যাংকের চেয়ে তুলনামূলক বেশি মুনাফা দিয়ে থাকে। যেমন:
-
আইসিবি ইসলামী ব্যাংক: কিছু স্কিমে ৯.৫০% পর্যন্ত মুনাফা প্রদান করে।
-
জনতা ব্যাংক (Islami Banking Window): ৯.২৫% পর্যন্ত অফার করে নির্দিষ্ট স্কিমে।
-
ডাচ-বাংলা ব্যাংক: ৬ মাস বা ১ বছরের FDR-এ ৮.০০% এর কাছাকাছি মুনাফা দেয়।
-
ইস্টার্ন ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক: নির্দিষ্ট স্কিমে ৮.২৫%-৮.৭৫% পর্যন্ত অফার করে।
তবে উচ্চ মুনাফার বিপরীতে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে যেমন সময়ের মেয়াদ, অগ্রিম ভাঙানোর চার্জ ইত্যাদি।
ইসলামী ব্যাংকের মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট সুবিধা
ইসলামী ব্যাংকিংয়ে FDR-এর বিকল্প হিসেবে আছে “মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট”। এতে লাভ হার নির্ধারিত হয় ব্যাংকের প্রকৃত ব্যবসায়িক আয় অনুসারে।
-
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (IBBL): ১২ থেকে ৩৬ মাসের মুদারাবা স্কিমে গ্রাহকরা গড়ে ৮.৫০% পর্যন্ত লাভ পেতে পারেন।
-
আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক: তাদের টার্ম ডিপোজিট স্কিমে প্রায় ৮.২৫% থেকে ৮.৮০% পর্যন্ত লাভ দেয়।
এই পদ্ধতিতে সুদের পরিবর্তে “লাভের অংশীদারিত্ব” ভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়, যা ইসলামিক শরিয়াহ অনুসারে নিরাপদ।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এফডিআর মুনাফা
সরকারি ব্যাংকগুলোতে এফডিআরের মাধ্যমে কিছুটা কম মুনাফা পাওয়া গেলেও স্থিতিশীলতা ও সরকারিভাবে নিরাপত্তার কারণে অনেকেই এগুলোকে প্রাধান্য দেন।
-
সোনালী ব্যাংক: ১ বছরের মেয়াদে গড়ে ৭.০০% মুনাফা প্রদান করে।
-
জনতা ব্যাংক: নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে ৭.২৫% পর্যন্ত মুনাফা পাওয়া যায়।
-
রূপালী ও অগ্রণী ব্যাংক: ৬.৫০% থেকে ৭.২০% পর্যন্ত সুদের হার অফার করে।
সরকারি প্রকল্প, শিক্ষক বা সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ এফডিআর সুবিধা রয়েছে যেগুলোতে বাড়তি মুনাফা দেওয়া হয়।
FDR করার আগে যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি
FDR করার আগে শুধুমাত্র মুনাফার হার দেখা যথেষ্ট নয়। এর পাশাপাশি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যাচাই করা উচিত:
-
লক-ইন পিরিয়ড: কিছু ব্যাংকে নির্দিষ্ট সময়ের আগে ভাঙালে মুনাফা কমে যেতে পারে।
-
TDS (Tax Deducted at Source): প্রাপ্ত সুদের উপর কর কেটে নেওয়া হয়; এনআইডি থাকলে ও আয়কর রিটার্ন দিলে রিবেট পাওয়া যায়।
-
মিনিমাম ডিপোজিট এমাউন্ট: কিছু ব্যাংকে এফডিআর শুরু করতে ন্যূনতম ৫০,০০০ টাকা বা তার বেশি প্রয়োজন হতে পারে।
-
সার্ভিস চার্জ ও অগ্রিম ভাঙানোর ফি: পূর্বে চুক্তির শর্তাবলী ভালোভাবে যাচাই করা উচিত।
এইসব বিবেচনা করে নিজের প্রয়োজন ও আর্থিক লক্ষ্য অনুযায়ী সঠিক ব্যাংক নির্বাচন করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
বাংলাদেশে FDR বা মুদারাবা ডিপোজিটের মাধ্যমে লাভজনক বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে, তবে ব্যাংক নির্বাচন করার সময় শুধুমাত্র উচ্চ মুনাফা না দেখে নিরাপত্তা, গ্রাহকসেবা, চুক্তির শর্তাবলী ইত্যাদিও বিবেচনায় নিতে হবে। আপনার সঞ্চয়ের মেয়াদ, প্রয়োজনীয়তা ও রিস্ক টলারেন্স অনুযায়ী কোন ব্যাংকে FDR করবেন, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। আপনি চাইলে একাধিক ব্যাংকে ছোট ছোট পরিমাণেও FDR করতে পারেন, যা ভবিষ্যতে আপনার ঝুঁকি হ্রাস করবে।
