বাংলাদেশে একটি নতুন কোম্পানি শুরু করার পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলোর একটি হলো অফিসিয়াল ব্যাংক একাউন্ট খোলা। একটি কর্পোরেট একাউন্ট প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে এবং কর সংক্রান্ত বিষয়েও সহায়তা করে। অনেক উদ্যোক্তা এই প্রক্রিয়ায় বিভ্রান্ত হন বা সঠিক তথ্য না পাওয়ায় বিলম্বের মুখে পড়েন। এই আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো কীভাবে আপনি নতুন কোম্পানির জন্য ব্যাংক একাউন্ট খুলবেন, কী কী কাগজপত্র লাগবে এবং কোন কোন ধাপে কী করতে হবে।
যা যা থাকছে
কোম্পানির ধরণ অনুযায়ী একাউন্টের ধরন নির্ধারণ
প্রথমেই নিশ্চিত করতে হবে, আপনার কোম্পানিটি কোন ধরণের—প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি, পার্টনারশিপ ফার্ম, না প্রোপ্রাইটরশিপ (একক মালিকানাধীন ব্যবসা)। একাউন্টের ধরন নির্ভর করে এই গঠন কাঠামোর উপর। যেমন:
-
প্রোপ্রাইটরশিপ হলে একক একাউন্ট (Sole Proprietorship Account)
-
পার্টনারশিপ হলে পার্টনারশিপ একাউন্ট
-
লিমিটেড কোম্পানি হলে কর্পোরেট একাউন্ট (Corporate/Business Current Account)
প্রতিটি ব্যাংক কিছু ভিন্নতা রেখে একই ধরণের হিসাব খোলার সুযোগ দেয়, তাই কোম্পানির আইনি স্ট্যাটাস বুঝে একাউন্ট টাইপ ঠিক করতে হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা
নতুন কোম্পানির একাউন্ট খোলার জন্য আপনাকে কিছু নির্দিষ্ট কাগজপত্র প্রস্তুত রাখতে হবে, যেমন:
প্রোপ্রাইটরশিপ ফার্মের জন্যঃ
-
ট্রেড লাইসেন্স (ব্যবসা লাইসেন্স)
-
TIN সার্টিফিকেট
-
মালিকের জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
-
দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি
-
ব্যাংকের নির্ধারিত অ্যাকাউন্ট ওপেনিং ফর্ম
লিমিটেড কোম্পানির জন্যঃ
-
ট্রেড লাইসেন্স
-
TIN ও VAT সার্টিফিকেট
-
মেমোরেন্ডাম ও আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন (MOA & AOA)
-
সার্টিফিকেট অব ইনকরপোরেশন (RJSC থেকে)
-
বোর্ড রেজুলেশন (একাউন্ট খোলার অনুমোদন সংক্রান্ত)
-
পরিচালক/সই কর্তৃপক্ষের জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি
ব্যাংকভেদে অতিরিক্ত কাগজপত্র চাওয়া হতে পারে, যেমন ইউটিলিটি বিল বা অফিস ঠিকানার প্রমাণপত্র।
ব্যাংক নির্বাচন ও একাউন্ট টাইপ বাছাই
বর্তমানে বাংলাদেশের বেশিরভাগ বাণিজ্যিক ব্যাংক নতুন কোম্পানির জন্য একাউন্ট খোলার সুযোগ দিচ্ছে। কিছু জনপ্রিয় ব্যাংক:
-
Brac Bank (বিশেষ SME সুবিধা)
-
Dutch-Bangla Bank
-
City Bank
-
UCB
-
Islami Bank (ইসলামি শরিয়াহ্ ভিত্তিক হিসাব)
আপনার ব্যবসার ধরন ও প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যাংক নির্বাচন করা উচিত। কারো জন্য মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা গুরুত্বপূর্ণ, আবার কেউ LC বা ফরেন ট্রানজেকশনের জন্য ফিচার খোঁজেন।
একাউন্ট খোলার ধাপসমূহ
১. নির্বাচিত ব্যাংকে যোগাযোগ করে একাউন্ট ফর্ম সংগ্রহ করুন
২. ফর্ম পূরণ করে সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ জমা দিন
3. ব্যাংক কর্মকর্তারা আপনার কাগজপত্র যাচাই করবে
4. যদি সব কিছু ঠিক থাকে, একাউন্ট খোলার অনুমোদন মিলবে
5. নির্ধারিত প্রাথমিক জমা (যেমন ১০০০-৫০০০ টাকা) দিলে একাউন্ট অ্যাকটিভ হয়ে যাবে
6. এরপর চেকবই, একাউন্ট নাম্বার, ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা ইত্যাদি প্রদান করা হবে
এই প্রক্রিয়া সাধারণত ২-৭ কার্যদিবসে সম্পন্ন হয়।
একাউন্ট খোলার পর করণীয় ও পরামর্শ
-
একাউন্ট খোলার পর নিয়মিত লেনদেনের রেকর্ড সংরক্ষণ করুন
-
অনলাইন ব্যাংকিং ও SMS alert একটিভ করে নিন
-
কোম্পানির নাম ও ট্রেড লাইসেন্সের সাথে মিল রেখে স্বচ্ছতা বজায় রাখুন
-
একাউন্ট চালানোর ক্ষেত্রে আর্থিক অনিয়ম বা অবৈধ লেনদেন থেকে বিরত থাকুন
-
কর ফাঁকি বা অপ্রমাণিত ইনকাম ডিপোজিট না করাই ভালো
সঠিক নিয়মে ব্যাংক একাউন্ট পরিচালনা করলেই আপনার ব্যবসায়িক পরিচয় সুদৃঢ় হবে এবং বিভিন্ন সরকারী বা আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রেও বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে।
নতুন কোম্পানির জন্য ব্যাংক একাউন্ট খোলা মানে হলো ব্যবসার আর্থিক ভিত্তি স্থাপন। এই প্রক্রিয়াটি শুরু থেকেই সঠিকভাবে করা গেলে ভবিষ্যতের অনেক জটিলতা এড়ানো সম্ভব হয়। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, নির্ভরযোগ্য ব্যাংক নির্বাচন এবং নিয়মিত আর্থিক হিসাব রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য নিশ্চিত করতে পারবেন।
