বাংলাদেশে সঞ্চয়পত্র সাধারণ মানুষের জন্য একটি নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রিয়। বিশেষ করে ৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র এমন একটি স্কিম, যা সরকার পরিচালিত এবং বিনিয়োগকারীদের নির্দিষ্ট সময় শেষে ভালো মুনাফা প্রদান করে। অনেকেই তাদের অবসরকালীন সঞ্চয়, সন্তানদের শিক্ষা খরচ বা ভবিষ্যতের আর্থিক সুরক্ষার জন্য এই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেন। তবে ২০২৫ সালের নতুন আর্থিক নীতিমালায় সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে, যা জানা বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের বর্তমান মুনাফা হার ২০২৫
২০২৫ সালের সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী, ৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার গড়ে ১১.৫২% থেকে ১২.২০% এর মধ্যে নির্ধারিত হয়েছে। এই হার নির্ভর করে সঞ্চয়পত্রের ধরন এবং মুনাফা প্রদানের পদ্ধতির ওপর। যেমন –
| সঞ্চয়পত্রের ধরন | মেয়াদ | মুনাফার হার (২০২৫) | মুনাফা প্রদানের ধরণ |
|---|---|---|---|
| ৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র | ৫ বছর | ১১.৫২% | মেয়াদ শেষে এককালীন |
| পারিবারিক সঞ্চয়পত্র | ৫ বছর | ১২.২০% | তিন মাস অন্তর |
| পেনশনার সঞ্চয়পত্র | ৫ বছর | ১১.৭৬% | তিন মাস অন্তর |
| মহিলা সঞ্চয়পত্র | ৫ বছর | ১১.৮৮% | তিন মাস অন্তর |
উল্লেখ্য, কর কর্তনের পর প্রকৃত মুনাফা কিছুটা কম হতে পারে, কারণ সরকার ১০% উৎসে কর (Tax Deduction at Source) কেটে রাখে যদি টিআইএন নম্বর থাকে, আর না থাকলে ১৫% পর্যন্ত কাটা হয়।
১ লক্ষ টাকা ৫ বছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্রে রাখলে মাসে কত মুনাফা
অনেকেই জানতে চান, “১ লক্ষ টাকা ৫ বছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্রে রাখলে মাসে কত মুনাফা পাওয়া যায়?” উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, আপনি ১ লক্ষ টাকা ৫ বছর মেয়াদী পারিবারিক সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছেন, যার মুনাফার হার ১২.২০%। তাহলে প্রতি তিন মাসে আনুমানিক ৩,০৫০–৩,১৫০ টাকা মুনাফা পাবেন। অর্থাৎ মাসে গড়ে ১,০২০ থেকে ১,০৫০ টাকা পর্যন্ত আয় হবে।
অবশ্য যদি আপনি মেয়াদ শেষে এককালীন মুনাফা পেতে চান, তবে ৫ বছর পর আপনার মূলধনের সঙ্গে মুনাফা যোগ হয়ে মোট প্রায় ১,৬৮,০০০ টাকা হতে পারে। এই হিসাব কর কর্তনের আগে, অর্থাৎ প্রকৃত মুনাফা কিছুটা কম হতে পারে।
৫ বছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের নিয়ম ও সুবিধা
সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে হলে প্রথমে আপনাকে পোস্ট অফিস, সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক বা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত শাখায় যেতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি, টিআইএন সার্টিফিকেট (যদি থাকে) এবং নমিনির তথ্য প্রদান করতে হয়।
সুবিধাসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো –
-
সরকারি গ্যারান্টিযুক্ত বিনিয়োগ, তাই ঝুঁকি নেই।
-
মুনাফার হার স্থিতিশীল এবং ব্যাংকের সুদের চেয়ে বেশি।
-
তিন মাস অন্তর বা মেয়াদ শেষে এককালীন মুনাফা তোলার সুবিধা।
-
পরিবারের নামেই বিনিয়োগ করা যায়, যা ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
তবে কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে, যেমন এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ নির্দিষ্ট পরিমাণ পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন এবং একাধিকবার কেনার ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে চলতে হয়।
বাংলাদেশের ৫ বছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্র একটি নির্ভরযোগ্য ও লাভজনক বিনিয়োগ মাধ্যম। ২০২৫ সালের মুনাফার নতুন হার অনুযায়ী এটি এখনও ব্যাংকের স্থায়ী আমানতের চেয়ে বেশি আয় প্রদান করছে। যারা নিরাপদ ও স্থিতিশীল আয়ের উৎস খুঁজছেন, তাদের জন্য সঞ্চয়পত্র একটি চমৎকার বিকল্প হতে পারে। তবে বিনিয়োগের আগে কর কর্তন ও নিয়মাবলী সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
