বাংলাদেশের প্রবাসী কর্মীদের আর্থিক সহায়তা ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক (Probashi Kallyan Bank)। এ ব্যাংক বিদেশগামী ও বিদেশ ফেরত কর্মীদের জন্য বিভিন্ন ধরণের ঋণ প্রদান করে থাকে— যেমন বিদেশে যাওয়ার আগে প্রশিক্ষণ ও ভিসা খরচের লোন, ব্যবসা শুরু করার লোন, কিংবা স্বল্প সুদের পুনর্বাসন ঋণ।
তবে, ঋণ নেওয়ার পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো লোন পরিশোধের নিয়ম ও সময়সীমা। কারণ সঠিকভাবে ঋণ পরিশোধ করলে গ্রাহক ভবিষ্যতে আরও বড় অঙ্কের লোন সুবিধা সহজে পেতে পারেন। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত জানব প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন পরিশোধের নিয়ম, সময়সীমা ও প্রযোজ্য শর্তসমূহ সম্পর্কে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের লোনের ধরন ও মেয়াদ
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক মূলত তিন ধরনের ঋণ প্রদান করে—
১️⃣ বিদেশগামী কর্মী ঋণ – যারা বিদেশে চাকরি বা কাজের উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন তাদের জন্য।
২️⃣ বিদেশ ফেরত কর্মীদের পুনর্বাসন ঋণ – যারা দেশে ফিরে নতুন ব্যবসা বা উদ্যোগ শুরু করতে চান।
৩️⃣ ক্ষুদ্র উদ্যোগ ঋণ – প্রবাসী বা তাদের পরিবারকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক ঋণ।
লোন মেয়াদ:
-
সাধারণত ১ থেকে ৫ বছর মেয়াদি ঋণ প্রদান করা হয়।
-
বিশেষ ক্ষেত্রে (ব্যবসায়িক ঋণ) মেয়াদ ৭ বছর পর্যন্ত হতে পারে।
-
মেয়াদের মধ্যে কিস্তি আকারে ঋণ পরিশোধ করতে হয়, যা ব্যাংকের নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী হয়।
সুদের হার:
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের সুদের হার তুলনামূলক কম — প্রায় ৭% থেকে ৯% পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়, যা অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের চেয়ে অনেক কম।
লোন পরিশোধের নিয়ম ও কিস্তি পদ্ধতি
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক তাদের ঋণগ্রহীতাদের জন্য একটি সহজ কিস্তি ভিত্তিক পরিশোধ ব্যবস্থা চালু করেছে, যাতে প্রবাসী বা তাদের পরিবার সহজেই কিস্তি পরিশোধ করতে পারে।
পরিশোধের নিয়মাবলি:
-
লোন নেওয়ার সময় ব্যাংক নির্দিষ্ট করে দেয় মাসিক বা ত্রৈমাসিক কিস্তির পরিমাণ।
-
প্রতিটি কিস্তি নির্ধারিত তারিখের মধ্যে জমা দিতে হয়।
-
কিস্তি ব্যাংকের যেকোনো শাখা, বিকাশ বা রকেট অ্যাকাউন্ট, কিংবা অনলাইন ব্যাংকিং মাধ্যমে পরিশোধ করা যায়।
-
কেউ চাইলে অগ্রিম কিস্তি পরিশোধ করে সুদের ছাড় সুবিধা পেতে পারেন।
বিশেষ শর্ত:
-
যদি কোনো গ্রাহক নির্ধারিত সময়ে কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হন, তাহলে ব্যাংক কিছু অতিরিক্ত চার্জ বা জরিমানা আরোপ করতে পারে।
-
৩ মাসের বেশি কিস্তি বকেয়া থাকলে অ্যাকাউন্ট “নন-পারফর্মিং লোন (NPL)” হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।
কিস্তির উদাহরণ:
যদি কোনো গ্রাহক ২ লক্ষ টাকার লোন ৫ বছরে নেন, তাহলে মাসিক কিস্তি প্রায় ৪,২০০ থেকে ৪,৫০০ টাকার মধ্যে হতে পারে, যা ব্যাংক নির্ধারিত সুদের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়।
লোন পরিশোধের জন্য প্রয়োজনীয় নথি ও নির্দেশনা
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার পর গ্রাহককে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি সংরক্ষণ করতে হয়, যা পরবর্তীতে কিস্তি বা সম্পূর্ণ পরিশোধের সময় প্রয়োজন হয়।
প্রয়োজনীয় নথি:
-
ঋণ চুক্তিপত্র (Loan Agreement Copy)
-
ব্যাংকের পেমেন্ট স্লিপ বা রসিদ
-
জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট কপি
-
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর এবং কিস্তি রেকর্ড
পরিশোধের ধাপসমূহ:
১️⃣ নির্ধারিত তারিখের আগে কিস্তি পরিশোধের ব্যবস্থা করুন।
২️⃣ ব্যাংক শাখায় বা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (বিকাশ/নগদ/রকেট) লগইন করুন।
৩️⃣ “Bill Pay” বা “Loan Payment” অপশন থেকে Probashi Kallyan Bank নির্বাচন করুন।
৪️⃣ লোন নম্বর দিয়ে পরিশোধ নিশ্চিত করুন।
৫️⃣ পরিশোধ সম্পন্ন হলে ব্যাংক থেকে এসএমএস বা রসিদ পাওয়া যাবে।
অতিরিক্ত সুবিধা:
-
অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে কিস্তির অবস্থা দেখা যায়।
-
আগাম পরিশোধ করলে সুদের ছাড় সুবিধা পাওয়া যেতে পারে।
-
পুনর্বাসন ঋণগ্রহীতারা নির্দিষ্ট সময়ের আগে পরিশোধ করলে নতুন লোনের যোগ্যতা অর্জন করেন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন শুধু বিদেশগামী বা ফেরত কর্মীদের সহায়তা করে না, বরং তাদের জীবনে আর্থিক স্থিতিশীলতা আনে। তাই যারা ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করেছেন, তাদের উচিত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কিস্তি পরিশোধ করা। এতে না শুধু জরিমানা থেকে রেহাই পাওয়া যায়, বরং ভবিষ্যতে নতুন লোনের সুযোগও সহজ হয়।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পথে দায়িত্বশীলভাবে ঋণ পরিশোধই হবে আপনার আর্থিক সচেতনতার অন্যতম চিহ্ন।
