ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা করার নিয়ম। ট্রাভেল এজেন্সি করে কত টাকা আয় করা যায়?

বর্তমানে বাংলাদেশের ট্রাভেল ইন্ডাস্ট্রি দ্রুত বিকাশ লাভ করছে। দেশি-বিদেশি ভ্রমণকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা এখন একটি সম্ভাবনাময় সেক্টর হিসেবে গড়ে উঠেছে। যারা উদ্যোক্তা হতে চান কিন্তু তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকির ব্যবসা খুঁজছেন, তাদের জন্য ট্রাভেল এজেন্সি হতে পারে একটি দারুণ সুযোগ।

এই ব্যবসার মাধ্যমে দেশীয় ভ্রমণ, বিদেশ ভ্রমণ, ভিসা প্রসেসিং, টিকিট বুকিং, হজ-উমরাহ প্যাকেজ এবং কর্পোরেট ট্যুর ব্যবস্থাপনা করা যায়। তবে শুরু করার আগে কিছু নিয়ম জানা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এটি একটি সরকারি অনুমোদননির্ভর ব্যবসা।

ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা কি?

ট্রাভেল এজেন্সি এমন একটি ব্যবসা যেখানে গ্রাহকদের জন্য ফ্লাইট বুকিং, হোটেল রিজার্ভেশন, ট্যুর প্যাকেজ, ভিসা প্রসেসিং, এবং অন্যান্য ভ্রমণ সম্পর্কিত সেবা প্রদান করা ইত্যাদি এরকম আরো নানান কাজ রয়েছে ট্রাভেল এজেন্সিতে।

কেন ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা করবেন?

বর্তমান যুগে ভ্রমণ মানুষের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ ঘুরতে যায় বিনোদনের জন্য, কেউ ব্যবসায়িক কাজে, আবার কেউ বিদেশে কর্মসংস্থান বা চিকিৎসার জন্য। এই বিশাল ভ্রমণপ্রিয় জনগোষ্ঠীর প্রয়োজন মেটাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ট্রাভেল এজেন্সি। তাই যারা ব্যবসায় নামতে চান, তাদের জন্য এটি একটি লাভজনক ও দীর্ঘমেয়াদি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো কেন ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা শুরু করা উচিত।

ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা করার নিয়ম

বাংলাদেশে ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা শুরু করতে হলে প্রথমেই কিছু আইনি ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়।

ট্রেড লাইসেন্স: প্রথমে স্থানীয় সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে। এটি আপনার ব্যবসার বৈধতার প্রথম ধাপ।
বিজনেস রেজিস্ট্রেশন (RJSC): ব্যবসাটি যদি পার্টনারশিপ বা লিমিটেড কোম্পানি হয়, তবে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস (RJSC) থেকে নিবন্ধন করতে হবে।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড (BTB) অনুমোদন: বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড বা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে।
IATA অ্যাক্রিডিটেশন (আন্তর্জাতিক এজেন্সির জন্য): যদি আপনি আন্তর্জাতিক টিকিট বিক্রি করতে চান, তাহলে IATA (International Air Transport Association)-এর অনুমোদন নিতে হবে।
অফিস সেটআপ ও টেকনিক্যাল টিম: একটি অফিস, কম্পিউটার, ইন্টারনেট সংযোগ, প্রিন্টার, এবং দক্ষ টিম থাকা আবশ্যক।

See also  রেশনের দোকান কীভাবে দিবেন ? | grocery store business plan In Bangla

ট্রাভেল এজেন্সি করে কত টাকা আয় করা যায়?

ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা থেকে আয় নির্ভর করে গ্রাহক সংখ্যা, সার্ভিস ও প্যাকেজের মানের ওপর। ছোট পরিসরের ট্রাভেল এজেন্সি মাসে গড়ে ৩০,০০০ থেকে ৭০,০০০ টাকা পর্যন্ত লাভ করতে পারে। মাঝারি আকারের এজেন্সিগুলো মাসে ১ থেকে ২ লক্ষ টাকা আয় করে। আর যারা আন্তর্জাতিক ট্যুর, কর্পোরেট ক্লায়েন্ট বা হজ-উমরাহ সার্ভিস দেয়, তারা মাসে ৩ থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারে। দক্ষ ব্যবস্থাপনা, ভালো গ্রাহক সেবা ও অনলাইন প্রচারণা থাকলে আয় আরও বৃদ্ধি পায়।

ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসার খরচ ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি

প্রাথমিকভাবে এই ব্যবসা শুরু করতে ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকার মধ্যে বিনিয়োগ প্রয়োজন হয়।

  • অফিস ভাড়া ও সাজসজ্জা: ১-২ লক্ষ টাকা

  • লাইসেন্স, রেজিস্ট্রেশন ও অনুমোদন ফি: প্রায় ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা

  • কম্পিউটার ও সফটওয়্যার সিস্টেম: প্রায় ১ লক্ষ টাকা

  • প্রমোশন ও মার্কেটিং: ৫০ হাজার টাকা

  • স্টাফ বেতন ও পরিচালন খরচ: মাসিক প্রায় ৩০-৫০ হাজার টাকা

যদি আপনি অনলাইন-ভিত্তিক সার্ভিস যেমন টিকিট বুকিং, ট্যুর প্যাকেজ বিক্রয় ও হোটেল রিজার্ভেশন সিস্টেম তৈরি করেন, তাহলে আপনার আয়ের সম্ভাবনা আরও বাড়বে।

বাংলাদেশে ভ্রমণপ্রেমীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, যার ফলে ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসার সুযোগও ক্রমবর্ধমান। আপনি যদি ধৈর্যশীল, যোগাযোগ দক্ষ এবং সঠিক পরিকল্পনায় ব্যবসাটি পরিচালনা করতে পারেন, তবে এটি থেকে মাসে ভালো পরিমাণে আয় করা সম্ভব। ব্যবসা শুরু করার আগে সব আইনি অনুমোদন ও বাজার বিশ্লেষণ করে নেওয়া উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *