বাংলাদেশে ছোট মূলধন দিয়ে ব্যবসা শুরু করার আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। অনেকেই মনে করেন ব্যবসা করতে হলে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়, কিন্তু বাস্তবে কম মূলধন দিয়েও সম্ভাবনাময় ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। বিশেষ করে ৩০ হাজার টাকার মতো একটি অল্প পুঁজি দিয়েই বিভিন্ন খাতে আয়ের সুযোগ তৈরি করা যায়। যদি সঠিক পরিকল্পনা, পরিশ্রম এবং বাজার বিশ্লেষণ করে কাজ করা যায় তবে এসব ক্ষুদ্র ব্যবসা দ্রুত লাভজনক হয়ে উঠতে পারে। চলুন জেনে নেই ৩০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করা যায় এমন ৭টি লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া।
যা যা থাকছে
অনলাইন পোশাক বিক্রির ব্যবসা
বাংলাদেশে অনলাইনে পোশাক বিক্রির বাজার দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে। ৩০ হাজার টাকা দিয়ে আপনি সহজেই ছোট একটি স্টক সংগ্রহ করতে পারেন। বিশেষ করে মহিলাদের ড্রেস, বেবি ড্রেস, কুর্তি কিংবা টি-শার্ট অনলাইনে অনেক জনপ্রিয়। ফেসবুক পেজ, ইনস্টাগ্রাম কিংবা অনলাইন মার্কেটপ্লেসে পণ্য বিক্রি করে শুরু করা সম্ভব। এখানে মূল খরচ হবে পণ্য সংগ্রহ ও ডেলিভারি খাতে। সঠিক প্রমোশন করলে অল্প সময়েই ভালো অর্ডার পাওয়া যায়।
ফাস্টফুড বা স্ন্যাকস ব্যবসা
খাদ্যসামগ্রীর ব্যবসা বাংলাদেশে সবসময় লাভজনক। ৩০ হাজার টাকা দিয়ে আপনি ছোট আকারের ফাস্টফুড কর্নার, বার্গার, স্যান্ডউইচ কিংবা চটপটি-ফুচকা দোকান শুরু করতে পারেন। প্রাথমিকভাবে রাস্তার পাশে বা কলেজ-ইউনিভার্সিটির কাছাকাছি স্থান নির্বাচন করলে ক্রেতার অভাব হবে না। এ ব্যবসায় স্বল্প খরচে উচ্চ মুনাফা পাওয়া সম্ভব। পরে ব্যবসা বড় হলে ডেলিভারি সার্ভিস যুক্ত করে আয় আরও বাড়ানো যায়।
মোবাইল এক্সেসরিজ বিক্রির ব্যবসা
বাংলাদেশে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। মোবাইল কভার, চার্জার, ইয়ারফোন, পাওয়ার ব্যাংকসহ বিভিন্ন এক্সেসরিজের চাহিদা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। ৩০ হাজার টাকা দিয়ে পাইকারি বাজার থেকে এসব পণ্য কিনে রিটেইল শপে বা অনলাইনে বিক্রি করা যায়। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভ সেলিং করলে ক্রেতা পাওয়া সহজ হয়। লাভের হারও তুলনামূলক বেশি হওয়ায় এটি একটি সম্ভাবনাময় ব্যবসা।
খামারভিত্তিক ছোট ব্যবসা
কৃষি নির্ভর বাংলাদেশে খামারভিত্তিক ক্ষুদ্র ব্যবসা সবসময় সফলতার সম্ভাবনা রাখে। ৩০ হাজার টাকা দিয়ে হাঁস-মুরগি পালন, কবুতর পালন বা মাছ চাষ শুরু করা সম্ভব। প্রথমে ছোট আকারে শুরু করে ধীরে ধীরে খামার বড় করা যায়। গ্রামের পরিবেশে এসব ব্যবসা বেশি সফল হয় কারণ সেখানে খাবার ও জায়গার সুবিধা সহজলভ্য। সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারলে অল্প সময়েই লাভ পাওয়া সম্ভব।
হস্তশিল্প ও গিফট আইটেম বিক্রি
বাংলাদেশের হস্তশিল্প আন্তর্জাতিক বাজারেও জনপ্রিয়। আপনি চাইলে স্থানীয় বাজার থেকে হস্তশিল্প, জুয়েলারি, শো-পিস বা গিফট আইটেম সংগ্রহ করে অনলাইনে বিক্রি করতে পারেন। ৩০ হাজার টাকা মূলধন দিয়েই একটি ছোট অনলাইন গিফট শপ শুরু করা সম্ভব। বর্তমানে অনলাইন ডেলিভারি সিস্টেম সহজ হওয়ায় গ্রাহকের কাছে দ্রুত পৌঁছানো যায়। মৌসুমভিত্তিক পণ্য বিক্রি করলে (যেমন—ভ্যালেন্টাইনস ডে, ঈদ, পূজা) ভালো লাভ হয়।
ফ্রিল্যান্সিং এবং ডিজিটাল সার্ভিস ব্যবসা
যদি আপনার ডিজিটাল স্কিল থাকে তবে ৩০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ এবং ভালো ইন্টারনেট সংযোগ কিনে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে পারেন। যেমন—গ্রাফিক্স ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, কনটেন্ট রাইটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং ইত্যাদি। পাশাপাশি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জন্য ফেসবুক বুস্টিং, পোস্টার ডিজাইন কিংবা ওয়েবসাইট তৈরি সেবা দিয়েও আয় করা সম্ভব। এ ব্যবসায় শারীরিক দোকান না থাকলেও অনলাইনে ভালো উপার্জন করা যায়।
বিউটি প্রোডাক্টস বিক্রির ব্যবসা
বর্তমানে প্রসাধনী ও স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টসের বাজার বাংলাদেশে ব্যাপক প্রসারিত। ৩০ হাজার টাকা দিয়ে আপনি ব্র্যান্ডেড কসমেটিকস সংগ্রহ করে অনলাইনে বা ছোট দোকানে বিক্রি শুরু করতে পারেন। মহিলাদের মধ্যে এসব পণ্যের চাহিদা অনেক বেশি, ফলে দ্রুত বিক্রি সম্ভব। ফেসবুক লাইভ সেল, রিভিউ পোস্ট কিংবা ইউটিউব প্রমোশনের মাধ্যমে পণ্যের প্রচার করলে বিক্রি আরও বাড়বে।
অল্প মূলধন দিয়েই সফল ব্যবসা শুরু করা সম্ভব, যদি থাকে সঠিক পরিকল্পনা ও ধৈর্য। উপরোক্ত ৭টি ব্যবসার আইডিয়া ৩০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করা যায় এবং এগুলো বাংলাদেশের বর্তমান বাজারে লাভজনক ও সম্ভাবনাময়। যেকোনো ব্যবসা শুরু করার আগে বাজার গবেষণা, প্রতিযোগিতা বিশ্লেষণ এবং গ্রাহকের চাহিদা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নেওয়া জরুরি। মনে রাখবেন, ব্যবসায় টিকে থাকার জন্য সততা, মান বজায় রাখা এবং গ্রাহকের আস্থা অর্জনই হলো মূল চাবিকাঠি।