বাংলাদেশে ১ লাখ টাকা পুঁজি দিয়ে কী ব্যবসা করা যায়

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে বেকারত্ব একটি বড় সমস্যা হলেও উদ্ভাবনী ও সাহসী উদ্যোগের মাধ্যমে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন। অনেকেরই প্রশ্ন—মাত্র ১ লাখ টাকা পুঁজি দিয়ে কি আদৌ লাভজনক ব্যবসা শুরু করা সম্ভব? উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ। যদি আপনি সঠিক পরিকল্পনা, বাজার বিশ্লেষণ এবং স্মার্ট ব্যবস্থাপনায় এগিয়ে যান, তবে ১ লাখ টাকা দিয়েও লাভজনক ছোট ব্যবসা গড়ে তোলা সম্ভব। নিচে এমন কিছু ব্যবসার ধারণা তুলে ধরা হলো যেগুলো এই সীমিত বাজেটে শুরু করা সম্ভব এবং লাভজনক হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি।

কাপড়ের ব্যবসা – অল্প পুঁজিতে লাভজনক একটি পথ

বাংলাদেশে কাপড়ের চাহিদা চিরকালই উঁচু। ১ লাখ টাকা দিয়ে আপনি হোলসেল মার্কেট থেকে থ্রি-পিস, শাড়ি, গেঞ্জি, পাঞ্জাবি কিংবা শিশুদের জামা কিনে নিজ এলাকায় বা অনলাইনে বিক্রি করতে পারেন। মিরপুর, ইসলামপুর কিংবা চট্টগ্রামের কে.এ.মার্কেট থেকে আপনি তুলনামূলক কম দামে মালামাল সংগ্রহ করতে পারবেন। চাইলে ফেসবুক পেজ খুলে ‘লাইভ সেলিং’ করে দ্রুত বিক্রয় বৃদ্ধি করা সম্ভব। দোকান ভাড়া না নিয়ে অনলাইন ভিত্তিক কাজ শুরু করলে খরচ অনেকটাই কমে যায়, ফলে লাভের পরিমাণও বেশি হয়।

ফাস্ট ফুড বা চা-নাশতার দোকান – কম খরচে নিয়মিত আয়

ফাস্ট ফুড ও চায়ের দোকান এখন শুধু শহর নয়, গ্রামের বাজারেও জনপ্রিয়। ছোট্ট একটি ঠেলা বা স্টল দিয়ে আপনি চা, সিংগারা, পিয়াজু, রোল, বার্গার ইত্যাদি বিক্রি শুরু করতে পারেন। ১ লাখ টাকার মধ্যে আপনি একটি ভালো মানের চুলা, গ্যাস সিলিন্ডার, ভাঁজযোগ্য দোকান বা ছাউনি তৈরি এবং মালামাল কেনার খরচ বহন করতে পারবেন। প্রতিদিন ৫০০–১৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে পারে, যা মাস শেষে ভালো লাভে পরিণত হয়। পরিশ্রম ও গুণগত মানের ওপর নির্ভর করে এই ব্যবসা দ্রুত সম্প্রসারণযোগ্য।

See also  শপিফাই ড্রপশিপিং কি? কিভাবে শপিফাই ড্রপশিপিং থেকে আয় করবেন

অনলাইন পণ্যের রিসেলিং – ঘরে বসেই সফল ব্যবসা

বর্তমান ডিজিটাল যুগে অনলাইন রিসেলিং একটি চমৎকার সুযোগ। আপনি Daraz, Evaly, বা Facebook Marketplace থেকে পণ্য কিনে অথবা হোলসেলারদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে নিজের ফেসবুক পেজ বা ওয়েবসাইটে বিক্রি করতে পারেন। যেমন: গ্যাজেট, কসমেটিকস, কিচেন আইটেম, শিশুদের খেলনা ইত্যাদি। এই ব্যবসায় আপনার মূল খরচ থাকবে পণ্য সংগ্রহ, প্যাকেজিং ও অনলাইন মার্কেটিং। ১ লাখ টাকা দিয়ে আপনি কমপক্ষে ১৫–২০টি আইটেমের স্টক করে অনলাইন ক্যাম্পেইন শুরু করতে পারবেন। ভালো কাস্টমার সার্ভিস এবং রিভিউ সংগ্রহের মাধ্যমে সহজেই ব্র্যান্ড তৈরি করা সম্ভব।

হস্তশিল্প বা কুটির শিল্প ব্যবসা – দেশি পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার

বাংলাদেশে অনেক গ্রামীণ নারী হস্তশিল্প তৈরি করেন কিন্তু বাজারজাত করতে পারেন না। আপনি চামড়ার পণ্য, নকশিকাঁথা, মাটির তৈজসপত্র, হাতে তৈরি গহনা ইত্যাদি সংগ্রহ করে শহরের দোকানে কিংবা অনলাইনে বিক্রি করতে পারেন। এই ধরনের ব্যবসায় খরচ কম এবং লাভের সম্ভাবনা বেশি। ১ লাখ টাকা দিয়েই আপনি একটি ছোট গুদাম ঘর, প্রাথমিক পণ্য সংগ্রহ এবং ফেসবুক পেজ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ডিভাইস কিনে ফেলতে পারবেন। চাইলে রপ্তানির পথেও এগোনো সম্ভব, কারণ দেশি হস্তশিল্পের আন্তর্জাতিক চাহিদা অনেক।

বাংলাদেশে ১ লাখ টাকা পুঁজি দিয়ে সফলভাবে ব্যবসা শুরু করা এখন আর স্বপ্ন নয়, বরং সঠিক পরিকল্পনা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে বাস্তবতা। অনলাইন, ফুড, রিটেইল কিংবা হস্তশিল্প—সবক্ষেত্রেই নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য আছে অপার সম্ভাবনা। গুরুত্বপূর্ণ হলো, যেকোনো ব্যবসা শুরুর আগে একটি ছোট ফিজিবিলিটি স্টাডি, বাজার গবেষণা এবং লক্ষ্য নির্ধারণ। এই পদক্ষেপগুলো মেনে চললে অল্প পুঁজি দিয়েও আপনি নিজের স্বপ্নের ব্যবসাকে বাস্তবে রূপ দিতে পারবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *