বর্তমান বাংলাদেশে কর্মসংস্থান ও স্বাধীন আয়ের লক্ষ্যে হোম বেইজড বিজনেস বা ঘরে বসে ব্যবসা করার প্রবণতা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তা, শিক্ষার্থী, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি কিংবা চাকরির পাশাপাশি আয় বাড়াতে আগ্রহী অনেকেই এখন ঘরে বসে ছোট আকারে ব্যবসা শুরু করছেন। এই ব্যবসাগুলোর জন্য বড় পরিসরের অফিস বা দোকানঘর না থাকলেও চলে। শুধু ইচ্ছাশক্তি, দক্ষতা ও প্রযুক্তির সহায়তায় অনেকেই ঘরে বসেই মাসে লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন। নিচে কিছু জনপ্রিয় ও লাভজনক হোম বেইজড ব্যবসার ধারণা তুলে ধরা হলো—
যা যা থাকছে
অনলাইন হ্যান্ডিক্রাফট ও হস্তশিল্প বিক্রয়
বাংলাদেশের হস্তশিল্পের প্রতি দেশি ও বিদেশি ক্রেতাদের আগ্রহ বরাবরই বেশি। আপনি যদি হাতে কাজ করতে ভালো পারেন, তাহলে জুট, বাটিক, নকশিকাঁথা, মাটি বা কাঠের পণ্য তৈরি করে অনলাইনে বিক্রি করতে পারেন। ফেসবুক পেজ, ইনস্টাগ্রাম ও ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম যেমন Daraz, Ajkerdeal, Evaly ইত্যাদির মাধ্যমে আপনার হস্তশিল্প পণ্য সরাসরি গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিতে পারবেন। পণ্যের ভালো ছবি তোলা, বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া এবং কাস্টমার সার্ভিসে যত্নবান হওয়া এই ব্যবসায় সফলতার চাবিকাঠি।
হোমমেড ফুড ডেলিভারি সার্ভিস
শহরাঞ্চলে চাকরিজীবী বা ব্যাচেলরদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত ও সুস্বাদু খাবারের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। আপনি যদি ভালো রান্না জানেন তাহলে বাসায় বসে দুপুরের বা রাতের খাবার রান্না করে ফুড ডেলিভারি সার্ভিস চালু করতে পারেন। “Tiffin Service”, “Lunch Box”, “Catering for Office”, এমনকি জন্মদিন বা ছোটখাটো অনুষ্ঠানের খাবার সরবরাহ করেও ভালো আয় করা যায়। আজকাল ফুড ডেলিভারি অ্যাপ বা ফেসবুক পেজ ব্যবহার করে অল্প খরচে প্রচারণাও সহজ হয়েছে।
অনলাইন বুটিক ও পোশাক ব্যবসা
বুটিক ব্যবসা বাংলাদেশের নারীদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় হোম বেইজড ব্যবসা। আপনি চাইলে নিজের ডিজাইন করা থ্রি-পিস, শাড়ি, কামিজ বা কুর্তি ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, কিংবা নিজস্ব ওয়েবসাইটে বিক্রি করতে পারেন। শুরুতে অল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করে ধীরে ধীরে পণ্যের পরিমাণ ও গ্রাহক বাড়ানো সম্ভব। ফটোশুট, রিভিউ, লাইভ প্রমোশন ইত্যাদির মাধ্যমে কাস্টমার আস্থা অর্জন করলে এই ব্যবসা থেকে আপনি সহজেই মাসে ৫০,০০০ টাকার বেশি আয় করতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সিং ও অনলাইন সার্ভিস বেইজড ব্যবসা
যারা কম্পিউটার বা ইন্টারনেট কাজে দক্ষ, তারা ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন। গ্রাফিক ডিজাইন, কনটেন্ট রাইটিং, ওয়েব ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, ভিডিও এডিটিং, ডেটা এন্ট্রি, কিংবা অনলাইন কোচিং— এসব সেবা দিয়ে আয় করা সম্ভব। Fiverr, Upwork, Freelancer, PeoplePerHour এর মতো ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে প্রোফাইল তৈরি করে আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্টদের সঙ্গে কাজ করা যায়। পাশাপাশি চাইলে দেশীয় ক্লায়েন্টদের টার্গেট করে ফেসবুক বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সরাসরি সার্ভিস অফার করেও আয় করা যায়।
বাংলাদেশে হোম বেইজড বিজনেস একটি উদীয়মান সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। যারা ঘরে বসে সময়কে কাজে লাগিয়ে আয় করতে চান, তাদের জন্য এসব ব্যবসা হতে পারে দারুণ একটি সুযোগ। শুধু শুরু করার সাহস, সঠিক পরিকল্পনা ও নিয়মিত প্রচেষ্টাই একজন উদ্যোক্তাকে সফল করে তুলতে পারে। প্রযুক্তির সহযোগিতায় আজ ঘরে বসেই গ্লোবাল মার্কেটে ব্যবসা পরিচালনা সম্ভব—তাই এখনই সময় নতুন কিছু শুরু করার।