বর্তমানে দেশে হিসাবনিকাশের ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে ‘পুঁজি রাখা’ ও ‘সঞ্চয়ের পথে যাওয়া’ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে এক-বিশ্বস্ত মাধ্যম হলো যে ধরনের সঞ্চয় ইনস্ট্রুমেন্ট, যাকে সাধারণভাবে আমরা বলি সঞ্চয়পত্র (সানচয়পত্র) বা পোস্ট অফিস-জাতীয় সঞ্চয় স্কিম। ২০২৫ সালে সরকারের স্বীকৃত এই সঞ্চয়পত্রগুলোর মুনাফার হার হালনাগাদ করা হয়েছে।
যদি আপনি ১ লক্ষ টাকা সঞ্চয়পত্রে রাখেন, তাহলে সেই মূলধন থেকে আপনার প্রতি মাসে নিট কত মুনাফা আসতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
২০২৫ সালের সঞ্চয়পত্রের নতুন মুনাফার হার
২০২৫ সালের জুলাই থেকে সরকার বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের মুনাফার হার পুনঃনির্ধারণ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ৫ বছরের “বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র” (Bangladesh Savings Certificate)-র হার হয়েছে ১১.৮৩% বার্ষিক, যেটি আগে ছিল প্রায় ১২.৩৭%।
তাছাড়া “তিন মাসে একবার মুনাফা পাওয়া সানচয়পত্র” (3-মাসীয় প্রফিট বিয়ারিং সঞ্চয়পত্র)-র জন্য নির্ধারিত হার হয়েছে ১১.৮২% বার্ষিক, যখন আগের ছিল ১২.৩০%।
এই হারের ভিত্তিতে যদি আমরা ১ লক্ষ (100,000 টাকা) টাকা স্থায়ীভাবে সঞ্চয় করি, তাহলে বার্ষিক মুনাফা আনুমানিক হবে:
100,000 × 11.83% = 11,830 টাকা প্রতি বছর
এটি মাসিক করলে হয় প্রায় 985-990 টাকা প্রতি মাসে। তবে মনে রাখতে হবে, এই হিসাবটি কেবলমাত্র সুদের হার ধরে করা; কর (AIT) কর্তনের পর হাতে পাওয়া নিট মুনাফা সামান্য কম হতে পারে।
লক্ষ টাকায় প্রতি মাসে নিট মুনাফার আনুমানিক হিসাব
উপরের বার্ষিক হার অনুযায়ী ১ লক্ষ টাকার সঞ্চয় থেকে হয় প্রায় 11,830 টাকা বার্ষিক মুনাফা। এ থেকে আয়কর বা কর সংক্রান্ত কর্তনের পর হাতে আসতে পারে একটু কম— ধরুন কর ও অন্যান্য কর্তন শেষে হয় 11,000 টাকা বা তার কাছাকাছি। তাহলে মাসিক নিট মুনাফা দাঁড়াবে:
11,000 ÷ 12 ≈ 917 টাকা প্রায় প্রতি মাসে
অথবা বেশি পরিষ্কার বললে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে।
তবে এই মুনাফা নির্ভর করে আপনার সঞ্চয়পত্রের ধরন, মেয়াদ, কর অবস্থা ও অন্যান্য শর্তের ওপর। যদি short-term বা আগেই উত্তোলনের সুযোগ থাকে, তাহলে হারে ভিন্নতা আসবে।
এটি মূলত একটি গড় ধারনা— সঠিক হারের জন্য সরকারি সার্কুলার বা সংশ্লিষ্ট পোস্ট অফিস শাখার বিজ্ঞপ্তি দেখে নিন।
সঞ্চয়পত্রে সঞ্চয় করার আগে যা জানতে হবে
-
সঞ্চয়পত্রের হারে সময়ের সঙ্গে সংশোধন আসে: ২০২৫ সালে আগের হারের তুলনায় হ্রাস করা হয়েছে।
-
সঞ্চয় নেওয়ার তারিখের হারে আপনার মুনাফা নির্ধারিত হয়— অর্থাৎ আপনি কখন সঞ্চয় করেন, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। আগের হারে নেওয়া সঞ্চয় আগের হারে থাকবে।
-
মেয়াদ শেষ না হলে উত্তোলনের ক্ষেত্রে বা আগেভাগে উত্তোলনের ক্ষেত্রে হারে ভিন্নতা বা কম সুবিধা থাকতে পারে।
-
কর (AIT) ও অন্যান্য কর্তনের পর হাতে আসা নিট মুনাফা একটু কম হতে পারে।
-
ইনফ্লেশন বা সুদের হার সাধারণ ব্যাংকিং পরিবেশে পরিবর্তনশীল— তাই এক-চোখে শুধু হারে না দেখে মেয়াদা, কর ও উত্তোলনের শর্ত বিবেচনায় রাখুন।
২০২৫ সালে সঞ্চয়পত্রের হারে সামান্য হ্রাস এসেছে; তবে এখনো এটি একটি নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য সঞ্চয় মাধ্যম রূপে আছে। ১ লক্ষ টাকা সঞ্চয় করলে প্রতি মাসে আনুমানিক ৯০০ থেকে ১০০০ টাকার কাছাকাছি নিট মুনাফা পাওয়া সম্ভব। তবে এটি সর্বদা নিশ্চিত নয়— কারণ সঠিক হারে সঞ্চয়, মেয়াদ, কর ও উত্তোলনের শর্ত সবই প্রভাব ফেলবে।
সঞ্চয় করবেন, অবশ্যই আগে সঞ্চয়পত্রের ধরণ, হারের তথ্য ও শর্ত-নির্ধারক নীতিগুলো ভালোভাবে বুঝে নিন। আয় বাড়ানো নয়, বরং ঠিকভাবে সঞ্চয় করার পরিকল্পনাই হবে ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তার মূল চাবিকাঠি।
