বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী আয়ের অবদান অপরিসীম। দেশে ফিরে আসা অনেক কর্মী নতুন ব্যবসা শুরু করতে চান কিন্তু পর্যাপ্ত মূলধনের অভাবে তা সম্ভব হয় না। এ বিষয়টি বিবেচনা করে সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, যা বিদেশ ফেরত কর্মীদের পুনর্বাসন ও উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ তৈরি করে। এ ব্যাংক বিশেষ সুবিধার মাধ্যমে ব্যবসা উদ্যোগের জন্য ঋণ প্রদান করে থাকে, যেখানে সুদের হার অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় কম রাখা হয়েছে। ফলে বিদেশ ফেরত কর্মীরা সহজ শর্তে ব্যবসা শুরুর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়ন পেয়ে থাকেন।
বিদেশ ফেরত কর্মীদের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের লোন সুবিধা
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক মূলত বিদেশ ফেরত কর্মীদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছে। ব্যাংকটি প্রবাসীদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেশে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বিভিন্ন ব্যবসা উদ্যোগে ঋণ প্রদান করে। সাধারণত ব্যবসা শুরু করার জন্য সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায়।
ব্যবসার প্রকৃতি ও প্রয়োজন অনুযায়ী ঋণের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। কেউ ক্ষুদ্র ব্যবসা যেমন দোকান, কৃষি খামার, মাছ চাষ বা ক্ষুদ্র শিল্পে বিনিয়োগ করতে চাইলে সহজ শর্তে লোন নিতে পারেন। আবার কেউ মাঝারি পর্যায়ের ব্যবসা শুরু করতে চাইলে ব্যাংক তার জন্যও প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তা প্রদান করে থাকে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের লোনের সুদের হার
২০২৫ সালের সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বিদেশ ফেরত কর্মীদের জন্য ব্যবসায়িক ঋণে ৯% হারে সুদ নির্ধারণ করেছে। তবে সরকারের বিশেষ ভর্তুকি থাকায় অনেক ক্ষেত্রে কার্যকর সুদের হার ৭% পর্যন্ত কমে আসে। এই কম সুদে ঋণ প্রদান করা হয় যাতে বিদেশ ফেরত কর্মীরা সহজে ব্যবসা শুরু করতে পারে এবং দেশে কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারে।
ব্যাংক সাধারণত প্রথম এক বছর পর্যন্ত কিস্তি ছাড়ের সুযোগ দেয় যাতে ব্যবসা দাঁড় করানোর জন্য উদ্যোক্তা সময় পান। পরবর্তীতে মাসিক বা ত্রৈমাসিক কিস্তির মাধ্যমে ঋণ পরিশোধ করতে হয়। যদি কোনো ব্যবসায় সফলভাবে পরিচালিত হয়, তবে পুনরায় লোন গ্রহণের সুযোগও রয়েছে।
ঋণ পাওয়ার শর্ত ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
ব্যবসার জন্য লোন নিতে হলে আবেদনকারীকে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হয়। প্রধান শর্ত হলো আবেদনকারীকে অবশ্যই বিদেশ ফেরত কর্মী হতে হবে এবং প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের মধ্যে রয়েছে:
-
বৈধ জাতীয় পরিচয়পত্র।
-
বৈধ পাসপোর্ট ও প্রবাসে কর্মসংস্থানের প্রমাণ।
-
বিদেশ ফেরত হওয়ার সনদ বা BMET নিবন্ধন।
-
ব্যবসা পরিকল্পনা (Business Plan)।
-
আয় বা সম্ভাব্য আয়ের উৎসের তথ্য।
ব্যবসার ধরন ও ঋণের পরিমাণ অনুযায়ী অতিরিক্ত কাগজপত্রও চাওয়া হতে পারে।
বিদেশ ফেরত কর্মীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ঋণ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কম সুদের হার, সহজ কিস্তি ব্যবস্থা এবং সরকারি ভর্তুকি থাকায় এই ঋণ বিদেশ ফেরত কর্মীদের জন্য অনেক বেশি সহায়ক। যারা নতুন ব্যবসা শুরু করতে চান তাদের জন্য এই ব্যাংকের লোন হতে পারে ভবিষ্যতের সফল উদ্যোগের প্রথম ধাপ।