গুড়া দুধের ব্যবসা কী এবং কিভাবে এই ব্যবসা শুরু করবেন | Milk powder business idea in bangla

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়াবরকাতু। আপনারা অনেকেই জানতে চেয়েছেন কিভাবে ডেইরি হোয়াটনার বা মিল্ক পাওডার বা গুড়া দুধের ব্যবসা শুরু করবেন এ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। ( কিভাবে গুড়া দুধের ব্যবসা শুরু করবেন,উৎপাদন প্রক্রিয়া, খরচ, ঝুঁকি, লাভ,বাজারের চাহিদা, বিনিয়োগ)  

বর্তমান সময়ে অনেক ব্যবসায়ী কিভাবে দুধের গুড়ার ব্যবসা করা যায় এ সম্পর্কে জানতে চান, কেননা আজকাল শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও গুড়া দুধের ব্যবহার হরহামেশাই দেখা যাচ্ছে। যে কারনে ব্যবসায়ীরা এই ব্যবসায় প্রচুর সম্ভাবনা দেখছে তাই আজ আমরা আপনাকে জানাবো গুড়া দুধের ব্যবসা কি?  কিভাবে এই ব্যবসা করলে লাভবান হবেন।

ডেইরি হোয়াইটনার বা গুড়া দুধের ম্যানুফ্যাকচারিং ব্যবসা কী? | What is Milk powder business

ডেইরি হোয়াইটনার ম্যানুফ্যাকচারিং কে গুড়া দুধের উৎপাদন ব্যাবসাও বলা হয়ে থাকে।গুড়া দুধ হলো প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ তাজা দুধ তবে এটা তরল নয়।এই তরল দুধ তৈরী করার জন্য একটি ভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। সংক্ষেপে বলতে গেলে তরল দুধকে ডিহাইড্রেটিং করে দুধের মধ্যে কার আদ্রতাশূন্য করে দুধকে তরল থেকে গুড়া দুধে রুপান্তর করা হয়।

আরো জানুনঃ মুরগির খামার করার পদ্ধতি

দুধ গুড়া করা হয় কেন?  গুড়া দুধ উৎপাদন করা হয় কেন?  

তরল দুধ দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।  একারনে দুধ কে বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না এজন্য অনেক  প্রয়োজনীয় সময় দুধ পাওয়া যায় না। এই সমস্যাকে সমাধানের জন্য গুড়া দুধের আবিষ্কার করা হয়। তাছাড়াও গুড়া দুধের সংরক্ষণ এর জন্য কোন বিশেষ তাপমাত্রার প্রয়োজন হয় না। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় গুড়া দুধ ১ বছর পযন্ত ব্যবহার করা যায়। 

গুড়া দুধ বেশির ভাগ মিষ্টান্ন সহ বিভিন্ন ধরনের বেকারি খাদ্য উৎপাদনের জন্য বেশি ব্যবহার করা হয়। গুড়া দুধের পুষ্টি-মান তরল দুধের থেকে কম হবার পরও বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় বলে এই দুধের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। 

ডেইরি হোয়াইটনার বা গুড়া দুধ কোথায় কোথায় ব্যবহার করা হয়? 

  • চা, কফি, কেক, চকলেট ইত্যাদি তৈরীর পাশাপাশি বেকারির বিভিন্ন খাদ্য পন্য তৈরী করতে গুড়া দুধ ব্যবহার করা হয়। 
  • যখন কোন বেকারি খাদ্য গুড়া দুধ ব্যবহার করা হয়, তখন এটিকে মন্ড তৈরি করা এবং এর স্বাদ ধরে রাখে, সেইসাথে আটার মন্ডকে ক্রিমি করতে সাহায্য করে। 
  • গুড়া দুধ খাদ্যের স্বাদ বজায় রাখে। তাছাড়া তরল দুধের তুলনায় গুড়া দুধে চর্বির পরিমাণ কম থাকে এতে করে খাদ্যে তেল তেল ভাব টা থাকে না। 
  • কিছু গুড়া দুধ খুব সহজেই খাদ্যে মিশে যায় এজন্য এগুলা সুপ এবং সস তৈরির কাজেও ব্যবহার করা হয়। 
See also  অর্গানিক খাদ্য পণ্যের ব্যাবসা আইডিয়া | Organic food business Idea in Bangla

যেভাবে গুড়া দুধের ব্যবসা করবেন 

এই ব্যবসার প্রধান কাচামাল হলো দুধ। যে দুধের ঘনত্ব যত বেশি সে দুধের থেকে গুড়া দুধ তত ভালো উৎপাদন করা যাবে। সুতরাং ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান শুরু করার জন্য একজন ব্যবসায়ীকে এমন জাইগা বেছে নিতে হবে, যেখানে প্রচুর পরিমানে খাটি গরুর দুধ বা মহিসের দুধ পাওয়া যায়।

  1. জমি চয়ন করাঃ এই ব্যবসা শুরু করার জন্য সর্বপ্রথমে আপনাকে জমি বাছাই করতে হবে।  জমিকে এমন ভাবে বাছাই করতে হবে যেন সকল যন্ত্রপাতি সহজে সেট আপ করা যায়। তাছাড়াও জমিটি যেন এমন জায়গায় হয় যেখানে সহজে তাজা দুধ পাওয়া যায় এবং অবশ্যই জাইগাটা পাকা রাস্থার ধারে হতে হবে। যেন দুধের গাড়ি সহজে যাওয়া আসা করতে পারে। এছাড়াও জমিতে যেন পানি এবং বিদ্যুৎ এর সুবেবস্থা থাকে সেটাও নিশ্চিত হতে হবে। আপনার যদি এমন জমি না থাকে তাহলে আপনি ভাড়া নিয়েও শুরু করতে পারেন। 
  1. মূলধনের পরিমানঃ এ ব্যবসা শুরু করতে কত টাকা প্রয়োজন হবে তা নির্ভর করছে আপনি কত বড় বা ছোট পরিসরে শুরু করতে চাচ্ছেন তার উপরে। আপনি ছোট প্লান্ট করতে চাইলে মোটামুটি ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকার মধ্যেই শুরু করতে পারবেন।
  2. ব্যবসার লাইসেন্সঃ গুড়া দুধের ব্যবসা শুরু করতে আপনাকে নিম্নোক্ত লাইসেন্স গুলোর প্রয়োজন হবে – 
  • প্রথমেই আপনার ব্যবসা নামে একটি ট্রেড লাইসেন্স করুন
  • বাংলাদেশে থাকলে আপনাকে অবশ্যই  BSTI এর লাইসেন্স নিতে হবে। এবং ইন্ডিয়া থাকলে FSSAI লাইসেন্স নিতে হবে।
  • এছাড়াও আপনার ব্যবসার নাম এবং লোগো  ট্রেডমার্ক করে রাখতে হবে। যেন অন্য কেও আপনার ব্যবসার নামে ব্যবসা শুরু করতে না পারে।

প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও কাচামালঃ 

 এই ব্যবসায় ব্যবহৃত সকল মেশিন উৎপাদন ক্ষমতার উপর নির্ভর করে তৈরী করা হয়। এ ব্যবসার সবচেয়ে বেশি খবচ হয় যন্ত্রপাতি ক্রয় করতে। এজন্য ব্যবসায়ীদের উচিত বিভিন্ন বিক্রয়কারী দের সাথে যোগাযোগ করে যার থেকে সবচেয়ে কম দামে পাওয়া যায় তার থেকে যন্ত্রপাতি ক্রয় করবেন।এতে করে আপনি যন্ত্রপাতির খরচ অনেকটা কমিয়ে উক্ত টাকা অন্য সেক্টরে লাগাতে পারবেন। গুড়া দুধের ব্যবসায় আপনাকে নিম্নোক্ত যন্ত্রপাতি ক্রয় করতে হবেঃ- 

  • মিল্ক স্টোরেজ ট্রাংক
  • ফিড পাম্প
  • প্রি- কন্ডেন্সার
  • কন্ডেন্সার
  • বেবি বয়লার 
  • চিলিং প্লান্ট
  • প্যাকিং ইউনিট
  • মিল্ক টেস্টিং ল্যাবরেটরি সেট আপ
  • মিল্ক ট্রাক 
  • অন্যান্য ছোট খাট সরঞ্জাম 
See also  ২০২৩ সালে নতুন ব্যবসা কৌশল । Business Tips in Bangla

প্রয়োজনীয় কাচামালঃ 

  • প্রচুর পরিমানে দুধ
  • সাইট্রিক এসিড
  • ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইড 
  • টিনের পাত্র
  • অন্যান্য রাসায়নিক যেমন NACL & CACO3

আপনি খুব সহজে এই পণ্য গুলো আপনার আশেপাশের স্থানীয় দোকানে পেয়ে যাবেন। না পেলে আপনি আলিবাবা, মেড ইন চায়না বা ইন্ডিয়া মার্ট থেকেও অনলাইনে ম্যানুফেকচার দের সাথে কথা বলে উক্ত মালামাল গুলো কিনতে পারেন।

গুড়া দুধ তৈরীর প্রক্রিয়াঃ 

তরল দুধ থেকে গুড়া দুধ তৈরীর জন্য বেশ কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। তারমধ্যে অন্যতম কিছু প্রক্রিয়া নিচে উল্লেখ করা হলোঃ 

  • দুধের উপাদান পৃথককরণঃ প্রথমে দুধ থেকে পানি অপসারণ করে দুধের মধ্যকার ক্রিম আলাদা করা হয়। এর পর ক্রিম মিল্ক এর সাথে আরো কিছু ক্রিম মেশাতে হবে।
  • প্রি-হিটিং  প্রক্রিয়াঃ দুধের ক্রিম আলাদা করার পর এবার প্রি হিটিং প্রক্রিয়া শুরু হবে। এই প্রক্রিয়াতে দুধকে প্রায় ৭৫°C থেকে ১২০°C তাপমাত্রায় গরম করতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় দুধকে বাস্পিভূত হওয়ার আগ পযন্ত তাপ দেওয়া হয়ে থাকে।
  • বাস্পীভবন প্রক্রিয়াঃ এ প্রক্রিয়ায় দুধ বিভিন্ন স্তরে ঘনীভূত করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় দুধকে একটি টিউবের মধ্যে রাখে ৭২° সেলসিয়াস থেকে সামান্য কম তাপে দুধকে ফুটিয়ে দুধের মধ্যেকার পানি অপসারণ করা হয়।
  • স্প্রে প্রক্রিয়াঃ এ প্রক্রিয়ায় দুধ গুলোকে অতি ক্ষুদ্র ছিদ্রের মধ্যে দিয়ে স্প্রে করা হয় একটি শীতল বেল্টে।  এখানে দ্রুত শীতল হবার ফলে দুধের গুড়া তৈরি হয়ে যায়।
  • প্যাকেজিং এবং স্টোরেজঃ গুড়া দুধ উৎপাদন এর সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে প্যাকেজিং এবং স্টোরেজ। এ ধাপে গুড়া দুধকে টিনের প্যাকেট বা প্লাস্টিকের প্যাকেট এ ভরা হয় এবং দোকান পযন্ত পৌছানোর আগ পযন্ত স্টোরেজ করা হয়ে থাকে।

গুড়া দুধের ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন

ব্যবসা শুরু করতে কত টাকা প্রয়োজন এটা নির্ভর করে আপনি ব্যবসাটাকে কত বড় থেকে শুরু করতে চাচ্ছেন তার উপর।  এজন্য সঠিক হিসাবটা বলা সব সময়ই কষ্ট কর হয়ে যায় তবে বর্তমান বাজার বিবেচনা করে আপনি যদি বড়ো আকারে শুরু করতে চান এ ব্যবসা তাহলে বাংলাদেশে হলে বিশ লক্ষ থেকে ৩৫ লক্ষ টাকা পযন্ত লাগতে পারে। আর ইন্ডিয়াতে করলে মোটামুটি ২০ থেকে ৩০ লক্ষ টাকার মত লাগতে পারে। 

See also  ?কিভাবে একটি ফুড ট্রাক ব্যবসা শুরু করবেন ?? | How to Start a Food Truck Business in Bangla

অন্যদিকে মোটামুটি ছোট পরিসরে শুরু করলে ৭ থেকে ১০ টাকার মধ্যে আপনি শুরু করতে পারবেন। তবে জমির দাম, পরিবহন খরচ, এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে বিনিয়োগ এর পরিমাণ কমবেশি হতে পারে।

গুড়া দুধের মার্কেটিং পদ্ধতি

আপনি মার্কেটিং করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারেন যেমন- আপনার বাজেট অনুযায়ী আপনি সংবাদ পত্রে বা টেলিভিশন  আপনার ব্যবসার বিঙ্গাপন করতে পারেন। তাছাড়াও আপনি আপনি একটু বুদ্ধি খাটালে অনেক কম খরচে মার্কেটিং করতে পারেন যেমন লিপলেট ছাপিয়ে রিকশা কিনবা বিভিন্ন যানবাহন এর পিছনে বা ছিটের সামনে লাগিয়ে দিতে পারেন এতে করে আপনি খুব কম খরচে অনেক মানুষের কাছে মার্কেটিং করতে পারবেন। 

তাছাড়াও বর্তমানে সোস্যাল মিডিয়া অনেক উন্নত এখানে আপনি খুব কম টাকা খরচ করে আপনার টার্গেট কাষ্টমানের নিটক বার বার বিঙ্গাপন করতে পারেন।  এছাড়াও স্যোসাল মিডিয়া তে আপনার কোম্পানির নামে প্রফাইল বা পেজ ক্রিয়েশন করে প্রটিদিন আপনার পন্য সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করতে পারেন এতে করে আপনার কাস্টমার বেইজড তৈরী হবে।

গুড়া দুধ ব্যবসার লাভ

এই ব্যবসার লভ্যাংশ এর পরিমান নিদিষ্ট করে বলা সম্ভব হবে না।  কেননা এই ব্যবসার পরিবহন খরচের উপর লভ্যাংশ নির্ভর করে। সুতরাং ব্যাবসা শুরু না করলে বোঝা যাবে না কত লভ্যাংশ থাকতে পারে। তবে বর্তমানে শহরায়নের ফলে গবাদি পশুর আবাদ করে যাচ্ছে এজন্য বাজারে গুড়া দুধের চাহিদা প্রচুর পরিমানে বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং বলাই যায় বর্তমানে এবং ভবিষ্যতে এই ব্যবসার থেকে প্রচুর পরিমানে মুনাফা ঘরে তুলতে পারবেন। 

দুধের ব্যবসার ঝুঁকি সূমহ

ব্যবসায় তখনি লোকসান হয় যখন পুরোপুরি প্লান না করে ব্যবসা শুরু করা হয়। সুতরাং আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবসা শুরু করার আগে আপনি প্রথমে বাজার পর্যালোচনা করে দেখবেন। দরকার পরলে মাঠে নেমে জনগণের সাথে আপনার সাম্ভব্য পণ্য নিয়ে কথা বলতে হবে তাদের ফিডব্যাক গ্রহণ করতে হবে এবং এগুলো পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।

কর্মচারী নিয়োগ 

আপনি আপনার ব্যবসায় কতজন কর্মচারী নিয়োগ করতে চান তা নির্ভর করছে আপনি কত পারিসরে আপনার ব্যবসা শুরু করছেন তার উপর। ছোট প্লান্ট হলে কমপক্ষে ৩০ জন কর্মকর্তার প্রয়োজন হবে। আর বড় প্লান্টের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ১৫০-২০০ জনের লোকবল প্রয়োজন হতে পারে।

প্রশ্নঃ গুড়া দুধের ব্যবসা কোথায় শুরু করতে হয়?  

উত্তরঃ পাকা রাস্তার পাশে যেখানে পানি এবং বিদ্যুৎ এর সুব্যবস্থা রয়েছে। 

প্রশ্নঃ গুড়া দুধের ব্যবসায় বিনিয়োগের পরিমান কত?  

উত্তরঃ ছোট পরিসরে শুরু করতে চাইলে প্রথম অবস্থায়  আপনার কমপক্ষে ৭ থেকে ১৫ লক্ষ টাকার প্রয়োজন পরবে। 

প্রশ্নঃ গুড়া দুধের ব্যবসা শুরু করার আগে কি করতে হবে?

উত্তরঃ গুড়া দুধের ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকে প্রথমেই বাঁজার বিশ্লেষণ করে , বিজনেস প্ল্যান তৈরী করতে হবে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *