আমাদের যান্ত্রিক জীবনে আমরা যতই ব্যাস্ত থাকি না কেনো দিন শেষে আমাদের ঠিকানা হয় আমাদের নিজের বাড়ি। সবাই চায় নিজের একটি বাড়ি হোক। হোক ছোটো অথবা বড়। সবার ইচ্ছা থাকলেও সবার আর্থিক অবস্থা একরকম হয় না। আপনি আপনার স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন হোম লোনের মাধ্যেমে।
হোম লোন সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য ও প্রশ্নের উত্তর নিয়ে এই পোস্টটি। আশা করি আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পাবেন।
যা যা থাকছে
হোম লোন কিঃ
হোম লোন হচ্ছে একটি নিরাপদ ঋণ যেখানে একটি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাড়ি, জমি, ফ্ল্যাট ক্রয় এবং পুরাতন বাড়ি মেরামতের জন্য ঋণ দিয়ে থাকে। ঋণের পরিমাণ বেশি হওয়ায় এটি দীর্ঘমেয়াদী সময় সীমার জন্য দেওয়া হয়।
আরো জানুনঃ অনলাইন লোন পাওয়ার উপায়
হাউজ লোনের ধরণঃ
বাংলাদেশের ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান গুলো বিভিন্ন ধরণের হোম লোন দিয়ে থাকে।
যেমন:
ভবন ক্রয় ঋণঃ একটি নতুন বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে এই ঋণ নিতে পারবেন।
জমি ক্রয় ঋণঃ বিনিয়োগ অথবা নির্মাণের উদ্দেশ্যে কোন সম্পত্তি কিনতে এই ঋণ নিতে পারবেন।
ফ্ল্যাট ক্রয় ঋণঃ আপনি যদি কোনো ফ্ল্যাট অথবা প্লট কিনতে চান সেক্ষেত্রে আপনি এই ঋণ নিতে পারবেন।
গৃহ নির্মাণ ঋণঃ আপনি যদি মালিকানাধীন জমির উপর বাড়ি নির্মাণ করতে চান, তাহলে গৃহ নির্মাণ ঋণ নিতে পারবেন।
গৃহ উন্নয়ন ঋণঃ আপনি আপনার বাড়ি মেরামত বা পুণঃনির্মাণের জন্য এই ঋণ নিতে পারবেন।
হাউজ লোনের মেয়াদঃ
লোন পরিশোধ জন্য সময়সীমা ৩ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত হয়। হোম লোনের মূল পরিমাণ এবং সুদ যোগ করে মাসিক কিস্তি (ইএমআই) গণনা করা হয়।
ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান আপনার বাড়ি/সম্পত্তিকে একটি নিরাপত্তা হিসাবে বিবেচনা করে। আপনি সময় সীমার মধ্যে ঋণ ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে ,তবে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটি আপনার বাড়ি/সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা উত্তোলন করার অধিকার পাবে।
হাউজ লোনের পরিমাণঃ
বাংলাদেশের আইন অনুসারে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা পর্যন্ত হাউজ লোন দিয়ে থাকে। তবে বাড়ি মেরামতের জন্য ৫ থেকে ৭৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত প্রদান করতে পারে। এবং ঋণ নিয়ে বাড়ি কিনতে চাইলে সর্বমোট টাকার ২০% থেকে ৩০% ঋণ গ্রহীতার নিজের থাকতে হবে।
আরো জানুনঃ ব্যবসা করার কৌশল
হোম লোনের সুদের পরিমাণঃ
বাংলাদেশের হোম লোনের ক্ষেত্রে সুদের হার ১.৫% থেকে ৯% হতে পারে। তবে এলাকা, লোনের পরিমাণ, মেয়াদ ইত্যাদি কম বেশি হওয়ার জন্য সুদের হারের পরিমাণ কম বেশি হতে পারে।
হাউজ লোন নেওয়ার যোগ্যতাঃ
লোন নেওয়ার জন্য ঋণ গ্রহীতার অবশ্যই কিছু যোগ্যতা থাকতে হবে। যেমন:
১. ঋণ গ্রহীতা অবশ্যই বাংলাদেশী নাগরিক হতে হবে এবং বয়স ২১ বছর বা তার বেশি হতে হবে ।
২. ঋণ পরিশোধ কালীন সময়ে আয়ের বৈধ এবং নিয়মিত উৎস থাকতে হবে।
৩. নূন্যতম ক্রেডিট স্কোর (ক্রেডিট স্কোর হলো একটি তিন-সংখ্যার সংখ্যা যা আপনার ক্রেডিট যোগ্যতার প্রতিনিধিত্ব করে) থাকতে হবে।
একজন বেতনভোগী পেশাদার গ্রহীতার মাসিক আয় ঋণের পরিমাণ নির্ধারণ করবে। এবং কোনো প্রকার ঋণ পরিশোধ না করার রেকর্ড অথবা মামলা থাকা যাবে না।
লোন আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ
১. হোম লোনের আবেদন ফর্ম।
২. হোম লোন গ্রহীতার এবং গ্যারান্টারের জাতীয় পরিচয়পত্র।
৩. ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
৪. গ্যাস, পানি অথবা বিদ্যুৎ বিলের ফটোকপি।
৫. গত 6 মাসের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট/পাসবুক।
৪. পে স্লিপ(বেতনের সঙ্গে দেওয়া বেতনের হিসাব)
৫. জমির মালিকানা সংক্রান্ত দলিল এবং অন্যান্য প্রয়োজীয় ডকুমেন্টস।
হোম লোন প্রদান করে যে সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহঃ
বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় সকল সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক এবং কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা হোম লোন প্রদান করে থাকে। তার মধ্যে কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে- ইসলামী ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, এবি ব্যাংক, বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন, ঢাকা ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, হোম লোন ইত্যাদি।
বাংলাদেশের ব্যাংক গুলোর সুদের পরিমানঃ
ক্রমিক | ঋণ প্রধানকারী ব্যাংক | সুদের হার |
১ | এনসিসি ব্যাংক | ৮.৯৯% |
২ | ডাচ বাংলা ব্যাংক | ৯.০০% |
৩ | ট্রাস্ট ব্যাংক | ৯.০০% |
৪ | ব্র্যাক ব্যাংক | ৯.৫০% |
৫ | কমার্শিয়াল ব্যাংক অফ সিলন | ৯.৫০% |
৬ | স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক | ৯.৫০% |
৭ | ইউনাইটেড কমর্শিয়াল ব্যাংক | ৯.৫০% |
৮ | ওয়ান ব্যাংক | ৯.৯৯% |
৯ | মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক | ১০.০০% |
১০ | ব্যাংক এশিয়া | ১০.৫০% |
১১ | ঢাকা ব্যাংক | ১০.৫০% |
১২ | ইস্টার্ন ব্যাংক | ১০.৫০% |
১৩ | এইচএসবিসি ব্যাংক | ১০.৫০% |
১৪ | প্রিমিয়াম ব্যাংক | ১০.৫০% |
১৫ | আইএফআইসি ব্যাংক | ১০.৭৫% |
১৬ | এনআরবি ব্যাংক | ১১.০০% |
১৭ | শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক | ১১.০০% |
১৮ | সিটি ব্যাংক | ১১.৫০% |
১৯ | মিডল্যান্ড ব্যাংক | ১১.৫০% |
২০ | প্রাইম ব্যাংক | ১১.৫০% |
২১ | স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক | ১২.০০% |
২২ | উত্তরা ব্যাংক | ১২.০০% |
২৩ | এবি ব্যাংক | ১২.৫০% |
২৪ | মার্চেন্টাইল ব্যাংক | ১৩.০০% |
২৫ | সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক | ১৪.০০% |
২৬ | পদ্মা ব্যাংক | ১৫.০০% |
FAQ
Q: হোম লোন নেওয়ার সুবিধা কি ?
১) হোম লোনের সুধের পরিমান পার্সোনাল লোন বা ক্রেডিট কাডের থেকে অনেক অনেক কম।
২) হোম লোনের টাকা আপনি প্রতি মাসে মাসে শোধ দিতে পারেন যা আপনার জন্য অনেক সহজ হয়ে যায় লোন শোধ দেওয়া।
৩) হোম লোন আপনি আপনার বাড়ি তৈরী ছাড়াও অন্য কাজেও ব্যবহার করে ব্যবসা করতে পারেন।