আসসালামু আলাইকুম। আজ আমরা আলোচনা করবো কিভাবে মুরগির খামার করে লাভবান হবেন।
বর্তমানে গরুর মাংস এবং খাসির মাংসের দাম অধিক হওয়াতে মধ্যবিত্তরা পোল্ট্রি মুরগী বা সোনালী মুরগি কেই তাদের আমিষ এর উৎস হিসেবে প্রহন করছে। এজন্য বর্তমানে এব্যবসার চাহিদা এবং লভ্যাংশ প্রচুর। কিন্তু পোল্ট্রি ব্যবসা কি এ সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান না থাকলে লাভ তো দূরে থাক আপনার লস হবার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশ।
আপনি যদি পোল্ট্রি ফার্ম করতে চান তাহলে দুই ধরনের ফ্রার্ম করতে পারবেন একটি হলো সোনালী মুরগির ফ্রার্ম এবং অন্যটি হলো পোল্ট্রি মুরগীর ফ্রার্ম। আজকে আমরা এই দুটি ফ্রার্ম সম্পর্কেই বিস্তারিত জানাবো ইনশাআল্লাহ।
যা যা থাকছে
মুরগির খামার বা পোল্ট্রি ফ্রার্ম ব্যবসা কি?
এই ব্যবসা সাধারণ খামার ব্যবসার সাথে সম্পকৃত। এই ব্যবসায় সাধারণত আপনি দুই ভাবে আয় করতে পারবেন। প্রথম পদ্ধতিতে আপনি মুরগী একটি নিদিষ্ট সময় পযন্ত পুষে তাদের মুরগির মাংস বিক্রি করে এবং দ্বিতীয়ত মুরগীর ডিম বিক্রি করে।
যদি আপনার মুরগীর ডিম বিক্রির ব্যবসা করতে চান তাহলে আপনাকে সোনালী মুরগি পালন করতে হবে। আর আপনি যদি মুরগির গোস বিক্রির ব্যবসা করতে চান তাহলে আপনাকে ব্রয়লার মুরগী পালন করতে হবে।
আজকাল বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ব্রয়লার মুরগী পালন এ আগ্রহ বেশি। কেননা ব্রয়লার মুরগী দ্রুত সময়ে বিক্রির উপযুক্ত হয়ে পরে এবং তুলনামূলক লাভ ও বেশি হয়।
আরো জানুনঃ কিভাবে মাসে লক্ষ টাকা আয় জুসের দোকান থেকে
মুরগির খামার বা ফ্রার্ম ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন?
পোল্ট্রি ফ্রার্ম ব্যবসা ছোট, বড় দুই ভাবেই শুরু করতে পারেন। এখন আপনার সামথ্য,অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞানের উপর নির্ভর করে আপনি শুরু করবেন। ছোট পর্যায়ে করলে অল্প বিনিয়োগ করলেই আপনি শুরু করতে পারবেন। তবে ব্যবসা যত বড় করবেন তত স্থায়ী এবং অফেরতযোগ্য খরচ বাড়বে। বর্তমান বাজারের চাহিদা অনুযায়ী আপনি এই ব্যবসা থেকে প্রচুর অর্থ ইনকাম করতে পারবেন।
তবে এই ব্যাবসা শুরু করতে আপনার অর্থের পাশাপাশি পোল্ট্রি ফ্রার্ম ব্যবসা সম্পর্কে যথেষ্ট নলেজ থাকা লাগবে।
মুরগির খামার এর জন্য পরিকল্পনা
যেকোনো ব্যাবসা শুরু করতে আপনার প্রথম অবস্থায় পরিকল্পনা করে নিতে হবে। কেননা পরিকল্পনা না করে ব্যবসায় নামলে আপনি নিশ্চিত লোকসান হবেন। প্রোল্ট্রি ফ্রার্ম এর জন্য প্রথমে আপনাকে ফ্রার্ম এর জন্য উপযুক্ত জমি, প্রয়োজনীয় লাইসেন্স, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এর দাম এবং এদের ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। তাছাড়াও আপনাকে শুরু করার আগে বাজার বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে আপনি ছোট পরিসরে শুরু করবেন না বড় পরিসরে শুরু করবেন।
মুরগির খামার ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় মুলধনঃ
ব্যবসার পরিকল্পনা শেষে আপনাকে ব্যবসার জন্য মূলধন যোগার করতে হবে। আপনি যদি ছোট পরিসরে শুরু করতে চান তাহলে বর্তমানে ১০০০ মুরগী পালন এর জন্য আপনার খরচ হবে মোটামুটি ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকার মত। এর মধ্যে মুরগীর জন্য বাসস্থান তৈরী অন্তর্ভুক্ত নয় বাসস্থান অন্তর্ভুক্ত করলে খরচ আসবে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার এর মতো। আর আপনি যদি মাঝারি পরিসরে শুরু করবেন বলে ভেবে থাকেন তাহলে ৩-৪ লক্ষ টাকা হাতে নিয়ে নামা সেইফ হবে।
কেননা শুরু করার পর অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত খরচ চলে আসে এজন্য কিছুটা বেশি অর্থ নিয়ে নামা আপনার জন্য ভালো হবে। আর আপনি যদি বৃহৎ আকারে শুরু করতে চান তাহলে আপনাকে কম পক্ষে ৭ থেকে ৮ লক্ষ টাকা নিয়ে নামতে হবে। এব্যবসায় সব থেকে বেশি খরচ বাচ্চা ক্রয় এবং খাবার ক্রয় এ। বাজারের ভিত্তিতে প্রতিবস্তা খাবার এর মূল্য ২৩০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা পযন্ত হয়ে থাকে।
মুরগির খামার বা ফার্মের জন্য জমি নির্বাচন করুনঃ
ফার্মের জন্য জাইগা বাছাই এর পূর্বে খেয়াল রাখতে হবে যেন জাইগাটা আশপাশ থেকে উচু হয় এবং জনবসতি থেকে কমপক্ষে ৫০০ মিটার থেকে ১ কিলোমিটার দূরে নির্জন মাঠে হয়।
ফার্মের জাইগা উচু না হলে বর্ষাকালে খামারে পানি উঠে যাবে এতে করে মুরগীর বাসস্থান শেত শেতে হয়ে যাবে যা মুরগীর জন্য খুবই ক্ষতিকর। শেতশেতে পরিবেশে মুরগির ঠান্ডা লেগে মারা যাবার সসম্ভাবনা বেশি থাকে। আর মুরগির খামারে প্রচন্ড দূর্গন্ধ থাকে যার ফলে খামার জনবসতির নিকটে শুরু করলে আশেপাশের মানুষ নিয়মিত কম্পেলেন করবে তার থেকে জনবসতি থেকে দূরে করলে খামারে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস লাগবে এতে খামারের মুরগীর সাস্থ্য ভালো থাকবে।
এছাড়াও এমন স্থানে খামার করবেন যেখানে পর্যাপ্ত পানি এবং আলোবাতাস এর ব্যবস্থা আছে এবং অবশ্যই যেন পাকা রাস্তার পাশে হয়। নাহলে মুরগী এবং অন্যান্য আনুষাঙ্গিক জিনিস পত্র আনা নেওয়া অনেক কঠিন হয়ে পড়বে।
মুরগির খামার বা ফ্রার্ম এর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিঃ
খামারের জন্য প্রয়োজনীয় জাইগা বাছাই করার পর এবার প্রয়োজন হবে মুরগির বাচ্চা পালনের জন্য প্রয়োজনীয় বাসস্থান তৈরী করা। মুরগির খামারের জন্য আপনাকে সচারাচর যে রকম ঘর তৈরী করা হয় এমন ঘরে আপনি মুরগী পালন করতে পারবেন না।
মুরগী পালনের জন্য আপনাকে খোলামেলা ঘর তৈরী করতে হবে। ঘরের উপরে টিন দিয়ে করতে হবে এবং চারপাশে ১-২ ফিট বাশের কাবারি দিয়ে করে তার উপর তারের নেট ব্যবহার করতে হবে এতে করে মুরগী ঘরে প্রচুর আলোবাতাস ঢুকবে।
এর পর আপনার মুরগির বেড তৈরি করতে হবে সাধারণত ধানের খোসা দিয়ে এই বেড তৈরি করা হয়। বস্তাপতি ধানের খোসা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় মার্কেট এ পাওয়া যায়।
তারপর দরকার হবে মুরগির পানির পাত্র। পানির পাত্র আপনি যেকোন হার্ডওয়্যার এর দোকানে ৩০-১০০ টাকার মধ্যে কিনতে পারবেন।
আপনি চাইলে উপরুক্ত জিনিস গুলো দারাজ কিনবা অথবা তেও কিনতে পারেন।
মুরগির খামার বা ফ্রার্মের জন্য মুরগী নির্বাচনঃ
ফ্রার্মের জন্য প্রয়োজনীয় বাসস্থান তৈরীর পর এবার আসে মুরগীর বাচ্চা বাছাই করা। আপনি যদি মুরগির বাচ্চা নির্বাচন এ ভুল করেন তাহলে আপনি ব্যবসায় লাভবান হবেন বলে আশা করা যায় না। কেননা মুরগীর বাচ্চার উপরই নির্ভর করে ভবিষ্যতে মুরগীর ফলন কেমন হবে।
আপনি যদি ডিম উৎপাদন এর জন্য খামার তৈরী করতে চান, তাহলে আপনাকে লেয়ার মুরগির বাচ্চা ক্রয় করে ৩ থেকে ৬ মাস লালন পালন করতে হবে। ৩-৬ মাস পর আপনি উক্ত মুরগী থেকে ডিম উৎপাদন করতে পারবেন।
আর আপনি যদি মাংস উৎপাদন এর জন্য খামার করতে চান তাহলে আপনাকে ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা ক্রয় করতে হবে। ব্রয়লার মুরগী সাধারণ ৩৫- ৪০ দিনের মধ্যে বিক্রির উপযুক্ত হয়ে পরে।
মুরগির খামার এর জন্য বাজার নির্ধারণঃ
খামারের জন্য বাচ্চা বাছাই এর পর আপনাকে খামারের মুরগী বা ডিম বিক্রির উপযুক্ত একটি বাজার খুঁজে বের করতে হবে।
উপযুক্ত বাজার খুজার জন্য প্রথমেই আপনার আশেপাশের খামারিদের সাথে যোগাযোগ করে, তারা কোথায় বিক্রি করে সেটা জেনে নিতে হবে। আপনি যদি তাদের সাথে একত্রে বিক্রি করতে পারেন তাহলে আপনার পরিবহন খরচ অনেক অংশে কমে যাবে।
এছাড়াও আপনি বিভিন্ন হোটেল গুলোতে যোগাযোগ করতে পারেন। হোটেল গুলোতে চুক্তি করতে পারলে তারা প্রতিদিন আপনার খামার থেকে মুরগী ও ডিম নিবে এবং তুলনামূলক দাম ও বেশি দিবে।
এর পাশাপাশি আপনি বিভিন্ন ছোট- বড় মুদির দোকানে যোগাযোগ করতে পারলে তাদের কাছে আপনি প্রতিদিন ১০-১৫ খাচি ডিম অনায়াসে বিক্রি করতে পারবেন।
আপনার ব্যবসা যদি বৃহৎ হয় তাহলে আপনি শহরে ডিম এবং মাংসের সরবারহ করতে পারেন। এর জন্য শহরের গোস এবং ডিমের পাইকারি ক্রেতার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
তাছাড়া আপনি যদি কোন ডিলার পয়েন্ট থেকে মুরগীর খাবার এবং বাচ্চা নিয়ে থাকেন তাহলে তারাই আপনার মুরগি ও ডিম বিক্রির ব্যবস্থা করে থাকবে।
হিসাব খাতা রাখুনঃ অনেক সময় খামারের মুরগীর বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই হয়। এসমস্ত রোগ-বালাই দূর করবার জন্য বিভিন্ন ওষুধ এবং চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। যার জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু অতিরিক্ত খরচ হয়ে যায় যেটা সাভাবিক। তাই খামারের মুরগির বাচ্চার বেড কেনা থেকে মুরগির বিক্রির আগ পযন্ত যেসকল খরচ হয় এসমস্ত খরচ একটি হিসাব খাতায় বা কম্পিউটারে তুলে রাখতে পারেন।
এতে করে আপনি সিজন শেষে বুঝতে পারবেন কত টাকা খরচ করেছেন এবং এখন কত টাকা মুরগী বা ডিম বিক্রি করতে হবে। সাথে সাথে আপনি একটি রাউন্ড ফিগার পাবেন এক পত্তন মুরগী পালনে আনুমানিক কত খরচ হচ্ছে। একই সাথে আপনি লাভ-লোকসানের হিসাব ও পেয়ে যাবেন।
মুরগির খামার বা পোল্ট্রি ফ্রার্ম এর লাভ সূমহ
আপনি যদি মাংসের জন্য মুরগির খামার করে থাকেন, তাহলে আপনার লাভ নির্ভর করবে মুরগির ওজনের উপর এবং বাজারে মুরগির মাংসের দাম এর উপর। সুতরাং এটা আগে ভাগে বলা সম্ভব হবে না আপনি খামার থেকে কত লাভ করতে পারবেন।
ডিম উৎপাদন এর ক্ষেত্রেও একই। বাজারের চাহিদা এবং দামের উপর নির্ভর করছে আপনি ডিমের দাম কেমন পাবেন।
মুরগির খামার ঝুঁকি সূমহঃ
পোল্ট্রি ফ্রার্ম ব্যবসা আপনাকে প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে। মুরগির বাচ্চার ঠান্ডা সর্দিকাশি এর মতো রোগে প্রায়ই আক্রান্ত হয়। এসময় সঠিক পরিচর্যার পর অনেক সময় মুরগির বাচ্চা মারা যায়।
তাছাড়াও অতিরিক্ত শব্দের কারনে মুরগির বাচ্চা হার্ড এটাক করে মারা যায়। সুতরাং আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে আপনার খামারের পাশে যেন কোন বিকট আওয়াজ না হয়।
এছাড়াও শীতের সময় মুরগির বাচ্চাকে তাপ দিতে হবে যেন অতিরিক্ত ঠান্ডায় মারা না যায় ঠিক একই ভাবে গৃষ্মকালে বাচ্চাকে ঠান্ডা রাখতে হবে। যদিও এই প্রসেস টা পেরা দায়ক কিন্তু এটা আপনাকে করতেই হবে। তবে সব সময় এটার প্রয়োজন পরে না।
ফ্রার্ম ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল
ফার্ম ব্যবসায় সাধারণত ২জন কর্মচারী হলে হয়ে যায়। তবে আপনি যদি সব সময় খামারে দিতে পারেন তাহলে ১ জন সহকারী হলে আপনি এই ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবেন।
সাধারণত এই ব্যবসার প্রধান কাজ হলো সময়মত মুরগির খাবার, পানি এবং ওষুধ দেওয়া এবং খামারের আশপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। যা ২ জন সহকারী নিয়োগ দিলে হয়ে যাবে আশাকরি।
মুরগির খামার বা পোল্ট্রি ফ্রার্ম ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় লাইসেন্স
আপনি যদি বাংলাদেশে খামার করতে চান তাহলে আপনার বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে। এতে আপনি সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাবেন। এছাড়া আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে একটি ট্রেড লাইসেন্স করে নিতে হবে।
আর আপনি যদি ইন্ডিয়া থেকে এই ব্যাবসা শুরু করতে চান। তাহলে আপনার MSME সাথে ব্যবসা নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধন করার জন্য http://udyogaadhar.gov.in এই ওয়েবসাইটে দেখতে পারেন। এছাড়াও আপনার সাস্থ্য বিভাগ এবং প্রাণী বিভাগ থেকে এন ও সি নিতে হবে।