আমরা অনেকেই ব্যবসা করতে চায়। কিন্তু বিজনেস প্ল্যান কীভাবে লিখতে হয় সেটা জানি না । ব্যবসায় নামার আগে প্রথমেই ব্যবসা প্ল্যান করে নিতে হয় । সঠিক প্ল্যান না করে ব্যবসায় নামলে সে ব্যবসা পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
যা যা থাকছে
ব্যবসা প্ল্যান কি ?
আমরা যে কাজ ই শুরু করি না কেনো,আগে পরিকল্পনা করে নেওয়া উচিত। কেননা পরিকল্পনা করে নিলে মাঝপথে কোনো সমস্যায় পরবো না।ব্যাবসা পরিকল্পনা হলো লিখিত পরিকল্পনা যা ব্যাবসা শুরুর আগে পরিকল্পনা তৈরি করে নিতে হয়। আপনি যদি ব্যাবসায় সাফল্য অর্জন করতে চান তাহলে অবশ্যই ব্যাবসায় পরিকল্পনা করা উত্তম।
বিজনেস প্ল্যান হলো আপনার ব্যবসা সঠিক ভাবে চালনা করা এবং বৃদ্ধি করার একটি রোড ম্যাপ। এটি নিদ্ধারন করে আপনি কে, আপনি কি করার পরিকল্পনা করছেন এবং কীভাবে করার পরিকল্পনা করছেন?
ব্যবসা পরিকল্পনা ইনভেষ্টরকে ব্যবসায় ইনভেষ্ট করতে উৎসাহ প্রদান করে। একটি শুষ্ঠ ব্যবসা প্ল্যান থেকে ব্যবসার খুঁটি নাটি অনেক বিষয় সম্পর্কে জানা যায় ।প্রতিটি কোম্পানির একটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা থাকা উচিত। আদর্শভাবে, লক্ষ্যগুলি পূরণ হয়েছে বা পরিবর্তিত হয়েছে এবং বিকশিত হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য পরিকল্পনাটি পর্যায়ক্রমে পর্যালোচনা এবং আপডেট করা হয়। কখনও কখনও, একটি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসার জন্য একটি নতুন ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি করা হয় যা ব্যবসাকে একটি নতুন দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিজনেস প্ল্যান কেন প্রয়োজন ?
আপনার একটি সঠিক ব্যবসায়িক পরিকল্পনা দরকার কারণ বেশিরভাগ ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট (ভিসি) এবং সমস্ত ব্যাঙ্কিং প্রতিষ্ঠান একটি বাস্তব সম্মত লিখিত বিজনেস পরিকল্পনা ছাড়া একটি স্টার্টআপ বা ছোট ব্যবসায় বিনিয়োগ করবে না। শুধুমাত্র একটি ব্যবসায়িক ধরনা আপনার ব্যবসাটিকে লং টার্ম এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে না ।
2018 সালে, ওরেগন বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবসায়িক পরিকল্পনার সুবিধাগুলি নিয়ে গবেষণা করেছেন । তারা যা খুঁজে পেয়েছেঃ-
- যেসকল ব্যবসা একটি সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে শুরু হয় সে সকল ব্যবসা পরিকল্পনাহীন ব্যবসা থেকে ৩০% দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
- সঠিক বিজনেস প্ল্যান নিয়ে শুরু করা ব্যবসা সূমহ অন্যান্য ব্যবসা থেকে দ্রুত এবং সহজ নিরাপদ ঝণের সুযোগ পেয়ে থাকে।
- একটি বিজনেস প্ল্যান সহ উদ্যোক্তাদের স্টার্টাআপ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা 129% বৃদ্ধি পায় এবং “ধারণা” থেকে “নতুন ব্যবসা” তে রুপান্তর হওয়ার সম্ভাবনা 260% বৃদ্ধি পায়।
- সবচেয়ে জোরালো প্রমাণ পাওয়া যায় জার্নাল অফ বিজনেস ভেনচারিং এর 2010 সালের মেটা-বিশ্লেষণ থেকে। এ সময় মোট 11,046টি প্রতিষ্ঠানের উপর 46টি পৃথক গবেষণার ডাটা বিশ্লেষণ থেকে জানা যায় “ব্যবসায়িক পরিকল্পনা নতুন এবং প্রতিষ্ঠিত উভয় ছোট সংস্থার কর্মক্ষমতা অনেক অংশে বাড়ায়।”
কখন বিজনেস প্ল্যান করা প্রয়োজন ?
- আপনার ৯ টা – ৫টা চাকুরি ছাড়ার পৃর্বে আপনি আপনার ব্যবসা প্ল্যান করে ফেলুন। পরিকল্পনা করার পর রির্পোট দেখে ভেবে নিন এখন কি আপনি চাকরি ছাড়ার উপযুক্ত ? যদি চাকুরি ছাড়ার মত অর্থ আপনার কাছে থেকে থাকে তাহলে আপনি আপনার ব্যবসা শুরুর দিকে একধাপ এগিয়ে গেলেন।
- তাছাড়া আপনার ব্যবসার জন্য অর্থ যোগার করার পৃর্বে আপনার ব্যবসার প্ল্যান করতে পারেন এতে করে আপনার ঋণ বা ফান্ডিং পাওয়ার সম্ভাবণা অনেক অংশে বেড়ে যাবে।
- নতুন পাটনার বা সহ প্রতিষ্টাতা যোগার করার পৃর্বেও আপনি আপনার ব্যবসা প্ল্যান করে নিবেন।
এবার চলুন জানি বিজনেস প্ল্যান তৈরির ধাপগুলো কি কি
প্রথমেই নতুন বিজনেস প্লান এর একটি সারসংক্ষেপ তৈরী করুন
সারাংশ হল আপনার ব্যবসা এবং আপনার পরিকল্পনার একটি ওভারভিউ। এটি আপনার পরিকল্পনায় প্রথমে আসে । এটি এক থেকে দুই পৃষ্টার বেশি না হওয়ায় ভালো যদিও অধিকাংশ মানুষ এটি বিজনেস প্ল্যান এর শেষে লিখে থাকে।
ব্যবসার সারাংশ একটি স্বতন্ত্র নথি হিসাবে কাজ করে যা আপনার বিস্তারিত পরিকল্পনার হাইলাইট গুলিকে কভার করে থাকে। আসলে, বিনিয়োগকারীরা আপনার ব্যবসার মূল্যায়ন করার সময় শুধুমাত্র নির্বাহী সারাংশের জন্য জিজ্ঞাসা করা খুবই সাধারণ। যদি তারা ব্যবসার সারংশ দেখে পছন্দ করে, তবে আপনার ব্যবসার জন্য বিনিয়োগ পাওয়া অনেক সহজ হয়ে পড়বে।
আপনার সারাংশে আপনি যে সমস্যার সমাধান করছেন তার একটি বুলেট পয়েট করে দিবেন, তারপর আপনার পণ্য বা পরিষেবার একটি বিবরণ, আপনার পণ্যের মার্কেটের একটি ওভারভিউ, আপনার টিমের বিবরণ, আপনার ফান্ডিং এর একটি সারাংশ এবং আপনার তহবিলের প্রয়োজনীয়তা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত ( যদি আপনার ফান্ডিং এর প্রয়োজন হয় )
ব্যবসায়িক পরিকল্পনার দৈর্ঘ্য ব্যবসা থেকে ব্যবসায় ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। সমস্ত তথ্য একটি 15- থেকে 20-পৃষ্ঠার নথিতে মাপসই করা উচিত। যদি ব্যবসায়িক পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান থাকে যা প্রচুর স্থান নেয় – যেমন পেটেন্টের জন্য আবেদন – সেগুলি মূল পরিকল্পনায় উল্লেখ করা উচিত এবং পরিশিষ্ট হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
কি পণ্য বাঁজারে আনবেন?
এখন আপনি আপনার বিজনেস প্ল্যান এ লিখে ফেলুন কি কি পন্য আপনি বাঁজারে আনতে চাচ্ছেন তার একটি লিষ্ট করুন। অথবা যে সার্ভিস টি আপনি বিক্রি করতে চাচ্ছেন তার সম্পর্কে বিস্তারিত লিখুন । এই পন্য গুলো আপনি কোথা থেকে র্সোস করবেন ? কীভাবে র্সোস করবেন ? বা আপনি যদি উৎপাদন ব্যবসাতে যেতে চান তাহলে যেনে নিন উক্ত ব্যবসার কাঁচামাল কোথায় পাওয়া যাবে ।
বাঁজার বিশ্লেশষ করুন
পন্য ঠিক করার পর এবার আপনার পণ্যের বাঁজার বিশ্লেষন করুন। আপনার টার্গেট কাস্টমার কারা আপনার টার্গেট প্রাইজ রেঞ্জ ঠিক করুন। কীভাবে আপনার পণ্য বা সার্ভিস বাঁজারে আনলে কাস্টমানের মনে ধরবে সে বিষয়ে আগে থেকে মার্কেটিং প্ল্যান করে রাখুন। দিন শেষে আপনি যত ভালো পন্যই বানিয়ে থাকুন না কেন সঠিক ভাবে মার্কেটিং করতে না পারলে কোন সেলসই জেনারেট করতে পারবেন না। সুতরাং মার্কেট বিশ্নেশন করে সঠিক মার্কেটিং প্ল্যান ও করে রাখতে হবে ।
বিজনেস এর জন্য টোটাল কত ইনভেষ্টমেন্ট লাগবে ?
এর পর লিখে ফেলুন ব্যবসাটি পরিচালনা করার জন্য আপনার কত টাকার প্রয়োজন হবে। ব্যবসা শুরু করার প্রথম বাধাটায় হলো মূলধন । সুতরাং আপনার ব্যবসাটি পরিচালনা করার জন্য কত টাকা লাগবে তা হিসেব করে নিতে হবে । এবং এ টাকার কত অংশ কোন কাজে ব্যায় করবেন তা নিদিষ্ট করে নিতে হবে যেন ব্যবসায় নামার পর কোন পিছুটান না থাকে এবং ভুল ভাবে খরচ করে ব্যবসাটাকে হুমকিতে না ফেলেন।
মাসিক আয় কত হবে ? ১২তম মাসে কত আয় হবে ?
এর পর আপনাকে আপনার ব্যবসা থেকে মাসিক কত আয় হতে পারে তা খাতায় লিখতে হবে। এটা ধারণা করে নিতে হবে। মনে করুন আপনার প্রথম মাসে আনুমানিক ৫ লক্ষ টাকার সেল আসছে এবং আপনার গ্রস মার্জিন হলো ১০% । তাহলে মাস শেষে আপনার পণ্য বা সেবা বিক্রি করে রেভিনিউ থাকছে ৫০ হাজার টাকা। এখন এই ৫০ হাজার থেকে আপনার এক্সপেন্স ৩০ হাজার বাদ দিয়ে যা থাকবে সেটায় আপনার মাসিক আয় । এখন এই বিক্রি বছরের শেষে কত হবে এর একটি আনমানিক ধারনা বা টার্গেট করে রাখতে পারেন।
মাসিক খরচ কত হবে ? এবং ১২ তম মাসে কত হবে ?
এবার আপনার মাসিক খরচ কত হবে সেটার তালিকা করুন। খরচ আপনি দুই ভাবে হিসাব করবেন । প্রথমে স্থায়ী খরচ লিখবেন তারপর চলমান খরচ সাথে আপনার পারিবারিক খরচ টাও যোগ করে নিবেন যেমনঃ
- ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাড়া
- বিদ্যুৎ বিল, ইন্টারনেট বিল
- যাতায়াত খরচ
- কর্মীদের বেতন ভাতা
- মেইনটেইন খরচ
- পারিবারিক খরচ ইত্যাদী
এগুলো ব্যবসার পরিধি যত বৃদ্ধিপাবে তত বাড়বে। সুতরাং আপনার ১২ তম মাসে কত হবে সেটার একটা ধারনা করে খাতায় লিখে ফেলুন। এবং এই টাকা গুলো আগে থেকে আলাদা করে ফেলুন। কারন ব্যবসা শুরুর পরে কত তম মাসে আপনি মুনাফা করতে পারবেন তা নিন্দিষ্ট করে বলা কঠিন । তাই এই খরচ গুলো আলাদা করে নাহলে মাঝপথে গিয়ে পরিবারের খরচ না বের করতে পারলে ব্যবসা পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পরবে।
কত মাস বা বছর পর থেকে লাভ শুরু হবে ?
আপনার ব্যবসা থেকে কত মাস বা বছর পর লাভ শুরু হবে তার একটি সুষ্টু পরিকল্পনা করে নিন। এবং কীভাবে আপনার ব্যবসাকে দ্রুত লাভবান করা যায় তার প্ল্যান করুন এতে করে আপনি একটি সুষ্ঠ ধারনা পাবেন আপনার ব্যবসা লাভবান হবার আগ পযন্ত কত খরচ হবে ।
আপনার ব্যবসার ( ROI ) Return on Investment ঠিক করুন
রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট (ROI) হল একটি ব্যবসা থেকে রিটার্ন লাভের সম্ভাবনা পরিমাপের জন্য একটি বহুল ব্যবহৃত আর্থিক মেট্রিক। এটি একটি ধারণা যা একটি বিনিয়োগ থেকে লাভ বা ক্ষতির তুলনা করে তার খরচের সাথে।
সহজ বাংলায় ROI বলতে আপনার ব্যবসায় কত টাকা ইনভেষ্ট করলেন এবং এই ইনভেষ্ট কৃত টাকা থেকে আপনি কত মুনাফা তুলতে পারছেন তার পরিমাপ। আপনার ব্যবসার ROI যত ভালো হবে আপনার ব্যবসাই সাইন করার সম্ভাবনা তত বেশি হবে।’
বিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট হিসাব করতে নিচের সুত্র ব্যবহার করা হয়ঃ
ROI= Current Value of Investment−Cost of Investment / Cost Of Investment
আপনার কাস্টমার কারা হবে ?
বিজনেস এ নামার পৃর্বে আগে প্ল্যান করে নিন আপনার কাস্টমার কারা হবে ? আপনি যদি বাচ্চা যুবক মুরব্বী সবাইকে আপনার পণ্য বিক্রি করার কথা ভেবে থাকেন । তাহলে আপনি সবথেকে বড় ভুল করবেন কেননা আপনি এক সাথে সবাইকে আপনার পণ্য বিক্রি করতে পারবেন না। আপনাকে একটি নিশ মার্কেট বা কাস্টমার কে টার্গেট করে বাঁজার এ নামতে হবে। আপনি যদি আপনার কাস্টমার চিনে থাকেন তাহলে আপনার পণ্য বিক্রি করা অনেক সহজ হবে যাবে। আপনিও আপনার পণ্য আপনার কাস্টমার উপযোগী করে তৈরী করতে পারবেন।
কাস্টমার টার্গেট করে নিলে পণ্যের মার্কেটিং করা অনেক সহজ হয়ে যায়। এতে করে আপনার মার্কেটিং বাজেট এর সঠিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আর আপনি যদি আপনার কাস্টমার টার্গেট করতে না পারেন তাহলে সঠিক কাস্টমারের কাছে আপনার পণ্যের বিঙ্গাপন করতে পারবেন না। এতে করে আপনার মার্কেটিং খরচ শেষ হয়ে যাবে কিন্তু সেই পরিমানে সেলস জেনারেট করতে পারবেন না। সুতরাং বিজনেস প্লানে আপনার টার্গেট কাস্টমারের নাম উল্লেখ করুন ।
আপনার পণ্য বা সার্ভিসের ক্রয় মূল্য ও বিক্রয় মূল্য কত হবে ঠিক করুন
বিজনেস প্লানে আপনার পণ্য বা সার্ভিসের তৈরী করতে কত টাকা খরচ হবে ? কাঁচামাল ক্রয় করতে কত টাকা খরচ হবে ? উক্ত পণ্য বা সার্ভিস বিক্রি করতে আপনার মুনাফা কত থাকবে এ সকল বিষয় আগে থেকে ক্যালকুলেট করে রাখতে হবে। যেন ব্যবসাই নামার পর আপনার আর কোন পিছুটান না থাকে। তবে আপনার পন্যের বিক্রয় মূল্য নিদ্ধারণ করার পূর্বে আপনি মার্কেট এনালাইসিস করে নিবেন একই পণ্য বা একই জাতীয় পন্যের বাঁজার মূল্য কত এবং আপনি কত টাকায় দিতে পারছেন। বাঁজার মূল্য থেকে যদি আপনার পণ্যের দাম বেশি হয় তাহলে কেন বেশি সেটা খুজে বের করুন। আর আপনার পন্যের দাম বেশি হলে কাস্টমার সেটা নিবে কেন সেটাও যাচায় করে নিন।
পরিশেষে, ব্যবসা শুরু করার পৃর্বে আপনি যে ব্যবসা বা বিজনেস শুরু করতে চাচ্ছেন সে সম্পর্কে মার্কেট এনালাইসিস করুন এবং প্রচুর পরিমান পড়ে নিবেন । তাহলে ব্যবসা সম্পর্কে আপনার আর কোন কনফিউশন থাকবে না । তাছাড়াও আপনি চাইলে আপনার করা একই ব্যবসা যারা করে তাদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের থেকে মতামত নিতে পারেন এতে করে আপনি বাস্তব ধারণা পাবেন আশাকরি।
আমি লোন নিতে চাই