প্রিয় পাঠক আপনি যদি ইতিমধ্যে অনুসন্ধান করে থাকেন নিয়তি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর সম্পর্কে জানার জন্য তবে সঠিক জায়গায় এসেছেন। কমন উপযোগী সকল প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আমরা সাজিয়েছি এই পোষ্টটি।
যা যা থাকছে
নিয়তি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন ১
আলী আব্বাসের প্রিয় ঘোড়া দুলকি। এর নাম-ডাক বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। তাই একে নিজের সম্পদে পরিণত করার আগ্রহ অনেকেরই। আব্বাস একদা দুলকিকে নিয়ে শিকারে যায় গভীর বনে। এ সুযোগে দস্যুরা তাকে চারদিক দিয়ে ঘিরে ফেলে। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও সে দৌড়ে আসে দুলকির কাছে। মনিবের জীবন বাঁচাতে দুলকি তাকে নিয়ে জীবনপণ দৌড় শুরু করে। দস্যুরাও তার পেছন পেছন ছোটে। গর্জে ওঠে তাদের বন্দুক। মনিবকে নিয়ে নিরাপদে ফিরে এলেও গুলিবিদ্ধ দুলকি অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
ক. কোন জায়গায় লেখকের শৈশবের অদ্ভুত স্বপ্নময় দিনগুলো কেটেছে?
খ. ‘বাবা এই ভয়ংকর জায়গা থেকে বদলির জন্য চেষ্টা করছেন।’— জায়গাটিকে ভয়ংকর বলার কারণ কী?
গ. উদ্দীপকের দুলকি এবং ‘নিয়তি’ গল্পের বেঙ্গল টাইগার-এর মধ্যকার সাদৃশ্যের দিকটি তুলে ধরো ।
ঘ. “প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধ থাকলেও উদ্দীপকের আলী আব্বাস ও ‘নিয়তি’ গল্পের লেখকের বাবার দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন ।”- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ১ এর উত্তর সমূহ
ক উত্তর: জগদলে লেখকের শৈশবের অদ্ভুত স্বপ্নময় দিনগুলি কেটেছে ।
খ উত্তর: প্রাণঘাতী ম্যালেরিয়ার কবলে পড়ার ভয় থাকায় জায়গাটিকে ভয়ংকর বলা হয়েছে ।
‘নিয়তি’ গল্পের লেখক হুমায়ূন আহমেদের শৈশবকালে ম্যালেরিয়া ছিল জীবনঘাতী এক রোগের নাম। তখনকার সময়ে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু ছিল নৈমিত্তিক ব্যাপার। তাই জগদলে থাকাকালীন এই রোগের প্রতিষেধক হিসেবে লেখকরা প্রতিদিনই নানা ধরনের ওষুধ খাচ্ছিলেন। তা সত্ত্বেও লেখকের শরীরে ম্যালেরিয়ার লক্ষণ দেখা যাওয়ায় জায়গাটিকে ভয়ংকর বলা হয়েছে ।
উত্তরের সারবস্তু: প্রাণঘাতী ম্যালেরিয়ার কবলে পড়ার ভয় থাকায় জায়গাটিকে ভয়ংকর বলা হয়েছে।
গ উত্তর: আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে প্রভুভক্তির অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করার দিক থেকে উদ্দীপকের দুলকি ও ‘নিয়তি’ গল্পের বেঙ্গল টাইগারের মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে। ‘নিয়তি’ গল্পের জগদলের মহারাজের পোষা কুকুর ছিল বেঙ্গল টাইগার। খানদানি স্বভাবের এই কুকুরটি প্রভুভক্তির এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে। মন্দিরের চাতালে রোদ পোহানোর সময় কথকের ছোটো ভাইকে কালকেউটে সাপের আক্রমণ থেকে রক্ষা করেছে কুকুরটি। এ সময় সাপের কামড়ে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হয় সে ।
উদ্দীপকের আলী আব্বাস তার প্রিয় ঘোড়া দুলকিকে নিয়ে গভীর বনে শিকারে যায়। দুর্ভাগ্যক্রমে সেখানে দস্যুরা তাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। নিরুপায় হয়ে জীবন বাঁচানোর শেষ চেষ্টা হিসেবে আলী আব্বাস দুলকির কাছে ছুটে আসে। দুলকি অসীম সাহসিকতায় মনিবকে নিয়ে নিরাপদ স্থানে ছুটে যায়। এতে করে আলী আব্বাসের জীবন রক্ষা পেলেও দস্যুদের গুলিতে আহত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে প্রভুভক্ত ঘোড়া দুলকি । ‘নিয়তি’ গল্পের বেঙ্গল টাইগারের মতোই প্রভুভক্তির কারণে আত্মবিসর্জন দেয় সে। অর্থাৎ উদ্দীপকের দুলকি এবং বেঙ্গল টাইগার উভয়ই প্রভুভক্তি ও আত্মত্যাগের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এটিই দুলকি ও বেঙ্গল টাইগারের মধ্যকার সাদৃশ্যপূর্ণ দিক।
উত্তরের সারবস্তু: আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে প্রভুভক্তির অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করার সূত্রে উদ্দীপকের ‘দুলকি’ ও ‘নিয়তি’ গল্পের বেঙ্গল টাইগারের মধ্যে সাদৃশ্য লক্ষিত হয় ।
ঘ উত্তর: উদ্দীপকের আলী আব্বাস ও ‘নিয়তি’ গল্পের কথকের বাবা প্রাণীর প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও প্রেক্ষাপটগত স্বাতন্ত্র্যের কারণে তাঁদের আচরণগত পার্থক্য লক্ষ করা যায়।
হুমায়ূন আহমেদ রচিত ‘নিয়তি’ গল্পে বেঙ্গল টাইগার নামক কুকুরটি প্রভুভক্তির অনন্য নিদর্শন স্থাপন করেছে। লেখকের ভাইকে রক্ষা করতে গিয়ে সাপের কামড়ে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে কুকুরটি। কথকের বাবা কুকুরটির ধুকে ধুকে মরতে দেখে কষ্ট পেয়েছেন । তাই গুলি করে কুকুরটিকে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিয়েছেন ।
উদ্দীপকের আলী আব্বাস তার প্রিয় ঘোড়া দুলকির প্রতি আন্তরিক। মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও সে প্রিয় ঘোড়াটির কথা ভোলেনি। তার এ ভালোবাসার প্রতিদান হিসেবে মনিবকে বাঁচাতে গিয়ে মৃত্যুকে বরণ করে দুলকি। দুলকির প্রতি গভীর ভালোবাসার কারণে দুলকিও তার মনিবকে ভালোবেসেছে। তাইতো জীবনের বিনিময়ে প্রভুভক্তির দৃষ্টান্ত রেখে যায় সে।
উদ্দীপকের আলী আব্বাস তার প্রিয় ঘোড়াটির প্রতি স্নেহশীল হলেও নিজের প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে ঘোড়াটিকে নিজের বিপদের সাথি করে নেন। অন্যদিকে ‘নিয়তি’ গল্পে কথকের বাবা যন্ত্রণাকাতর পোষা কুকুরটিকে গুলি করেন কুকুরটির প্রতি সহানুভূতির কারণেই। গল্পেকথকের বাবার ক্ষেত্রে আবেগকে জয় করে নিয়তিকে মেনে নেওয়ার যে প্রয়াস লক্ষিত হয় উদ্দীপকের আলী আব্বাসের আচরণে তা দেখা যায় না । সেদিক বিবেচনায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ । উত্তরের সারবস্তু: উদ্দীপকের আলী আব্বাস ও ‘নিয়তি’ গল্পের কথকের বাবা প্রাণীর প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও প্রেক্ষাপটগত স্বাতন্ত্র্যের কারণে তাঁদের আচরণগত পার্থক্য লক্ষ করা যায়।
আপনি ইতিমধ্যে নিয়তি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর ২টি পড়া সম্পন্ন করেছেন। আমরা সর্বমোট গুরুত্বপূর্ণ ৫টি নিয়ে প্রশ্নোত্তর নিয়ে এই পোষ্ট সাজিয়েছি। আশাকরি পুরোপুরি পড়ে প্রশ্নের উত্তর গুলো বুঝে নিবেন।
নিয়তি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন ২
বর্গিদের সঙ্গে ভীষণ যুদ্ধ চলছে মারাঠাদের। ছত্রপতি শিবাজী মারাঠা পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন । যুদ্ধের একপর্যায়ে শত্রুরা শিবাজীকে ঘিরে ফেলে । তার প্রাণসংকট দেখা দেয়। বিষয়টি বুঝতে পারে তাঁর প্রিয় ঘোড়া তুফান। সে নিজের জীবন বিপন্ন করে শিবাজীকে নিয়ে ঝড়ের বেগে নিরাপদ দূরত্বে সরে আসে। অতঃপর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। শিবাজী আমৃত্যু তাঁর অকৃত্রিম বন্ধু তুফানকে ভোলেননি । এরূপ ভূমিকার জন্য শিবাজীর সঙ্গে তুফানও ইতিহাসে অমর হয়ে আছে।
ক. ‘তক্ষক’ কী?
খ. ‘কুকুরটি আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছিল’
ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকটি ‘নিয়তি’ গল্পের সাথে কীভাবে সম্পর্কিত? আলোচনা করো।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘নিয়তি’ গল্পের আংশিকভাবের প্রতিনিধিত্ব করে”- মন্তব্যটির যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ২ এর উত্তর সমূহ
ক উত্তর: ‘তক্ষক’ এক ধরনের অত্যন্ত বিষধর সাপ ।
খ উত্তর: খেলা শৈশবে প্রিয় কুকুরটির বেদনাদায়ক মৃত্যু লেখকের মনে গভীরভাবে দাগ কাটে— প্রশ্নোক্ত উক্তিটি দ্বারা এ কথাই বোঝানো হয়েছে । একদিন লেখকের ছোটো ভাই শাহীনকে সাপের ছোবল থেকে রক্ষা করতে গিয়ে তাঁদের প্রিয় পোষা কুকুরটি সাপের কামড় খায়। সাপের বিষক্রিয়ায় কুকুরটির দেহ পচে-গলে যাচ্ছিল এবং কুকুরটি যন্ত্রণায় করুণ আর্তনাদ করছিল। লেখকের বাবা কুকুরটি দুর্দশা সহ্য করতে না পেরে তাকে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে গুলি করে মেরে ফেলেন। বেঙ্গল টাইগার নামের কুকুরটির এই নিয়তি শৈশবে লেখকের মনে গভীর বেদনার সঞ্চার করে, যা লেখক বিস্মৃত হতে পারেননি । প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে এ বিষয়টিই ফুটে উঠেছে।
উত্তরের সারবস্তু: প্রিয় কুকুরটির বেদনাদায়ক মৃত্যু ছোট্ট লেখকের মনে গভীর দাগ কাটে— প্রশ্নোক্ত উক্তিটি দ্বারা এ কথাই বোঝানো হয়েছে ।
গ উত্তর: ঘটনার ধরন ও পরিণতি বিচারে উদ্দীপকটি ‘নিয়তি’ গল্পের সাথে সম্পর্কিত।
‘নিয়তি’ গল্পে লেখক একটি পোষা কুকুরের প্রভুভক্তির অনন্য দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন। লেখকরা জগদলে থাকাকালীন সে বাড়ির বেঙ্গল টাইগার নামক একটি কুকুরের সঙ্গে তাদের সখ্য তৈরি হয়। একদিন লেখকের ভাইয়ের প্রাণ রক্ষা করতে গিয়ে কুকুরটি সাপের কামড় খায়। এর প্রতিক্রিয়ায় কুকুরটির শরীর পঁচে-গলে যেতে শুরু করে। এমতাবস্থায় কুকুরটিকে যন্ত্রণার হাত থেকে মুক্তি দিতে লেখকের বাবা সেটিকে গুলি করে মারতে বাধ্য হন।
উদ্দীপকে বর্ণিত বর্গি ও মারাঠাদের মধ্যকার যুদ্ধে শিবাজী মারাঠা পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে শিবাজীকে শত্রুরা ঘিরে ফেলে। বিপদ বুঝতে পেরে তাঁর প্রিয় ঘোড়া তুফান জীবন বিপন্ন করে শিবাজীকে ঝড়ের বেগে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে আসে । কিন্তু মনিবের প্রাণরক্ষা করতে গিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে তুফান। একইভাবে, ‘নিয়তি’ গল্পেও লেখকের ছোটো ভাই শাহীনের জীবন রক্ষা করতে গিয়ে লেখকের প্রিয় কুকুর বেঙ্গল টাইগার কেউটের কামড় খায়। এমতাবস্থায় লেখকের বাবা যন্ত্রণার হাত থেকে কুকুরটিকে মুক্তি দিতে তাকে গুলি করে হত্যা করেন। এভাবে ঘটনার ধরন ও পরিণতির সূত্রে উদ্দীপকটি ‘নিয়তি’ গল্পের সাথে সম্পর্ক তৈরি করেছে ।
উত্তরের সারবস্তু: উদ্দীপকের তুফান মনিবের প্রাণরক্ষা করতে গিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। একইভাবে, আলোচ্য গল্পের বেঙ্গল টাইগারও লেখকের ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে সর্পদংশনের শিকার হয় । অর্থাৎ ঘটনার ধরন ও পরিণতির সূত্রে উদ্দীপকটি ‘নিয়তি’ গল্পের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ।
ঘ উত্তর: কেবল পোষা প্রাণীর প্রভুভক্তি ও প্রতিদানের বিষয়টি তুলে ধরায় উদ্দীপকটি ‘নিয়তি’ গল্পের আংশিকভাবের প্রতিনিধিত্ব করে, সমগ্রভাব নয় । ‘নিয়তি’ গল্পে লেখকরা জগদলের এক রাজবাড়িতে অবস্থানকালীন সে বাড়ির এক কুকুরের সঙ্গে তাদের সখ্য তৈরি হয়। লেখকের মা কুকুরটিকে প্রতিদিন খাবার দিতেন । প্রতিদানে কুকুরটি নিজের জীবন বিপন্ন করে লেখকের ভাইয়ের প্রাণ বাঁচায়। আলোচ্য উদ্দীপকেও পোষা প্রাণীর আত্মত্যাগের এমন নজির উপস্থাপিত হয়েছে।
উদ্দীপকে শিবাজীর প্রতি তাঁর প্রিয় ঘোড়া তুফানের প্রভুভক্তির দিকটি প্রকাশিত হয়েছে। বর্গিদের সঙ্গে মারাঠাদের যুদ্ধের একপর্যায়ে মারাঠা প্রধান ছত্রপতি শিবাজীকে শত্রুরা ঘিরে ফেলে। ফলে তাঁর প্রাণ সংশয় দেখা দেয়। বিষয়টি বুঝতে পেরে শিবাজীর প্রিয় ঘোড়া তুফান তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। নিজের জীবন বিপন্ন করে শিবাজীকে নিয়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে আসে সে। ‘নিয়তি’ গল্পে এমন ঘটনার ছায়াপাত ঘটলেও সেখানে আরও নানা বিষয় উঠে এসেছে।
‘নিয়তি’ গল্পে পোষা প্রাণীর প্রতি লেখকের পরিবারের সহানুভূতি এবং মমত্ববোধ প্রকাশিত হয়েছে। তাদের পোষা কুকুর বেঙ্গল টাইগার প্রাণ বিপন্ন করে তাদের ভালোবাসার প্রতিদান দিয়েছে। পাশাপাশি গল্পটিতে জগদলের রাজবাড়ি ও সে অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশের মনোজ্ঞ বর্ণনা রয়েছে। এছাড়াও সেকালের চিকিৎসাব্যবস্থা, লেখকের পারিবারিক ঘটনা এবং মহারাজার রুচি ও কীর্তি এ রচনার অন্যতম দিক। উদ্দীপকের স্বল্প পরিসরে এসব দিক আলোচিত হয়নি । সেখানে কেবল এ গল্পের পোষা প্রাণীর প্রভুভক্তি ও প্রতিদানের দিকটিই উঠে এসেছে। সে বিবেচনায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ । উত্তরের সারবস্তু: উদ্দীপকে ‘নিয়তি’ গল্পের একটি দিক মানবেতর প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধের বিষয়টিই কেবল উঠে এসেছে, অন্যান্য দিক নয়। সে বিবেচনায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ ।
নিয়তি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন ৩
প্রশ্ন ৩ মানিক মিয়া একজন শহিদ মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধকালীন তাঁর বাড়িতে আশ্রয় নেয় তাঁরই চাচাতো ভাই নাসির। সামান্য কিছু টাকার লোভে পাকিস্তানি হানাদারদেরকে সে মানিক মিয়ার মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার খবর জানিয়ে দেয় এবং কৌশলে তাঁকে ধরিয়ে দেয় ।
ক. মহারাজার বাড়ির ছাপাখানাটি কী ছাপানোর কাজে ব্যবহৃত হতো?
খ. ‘ম্যালেরিয়ায় মরতে হলেও এখানেই মরব’— লেখক একথা বলেছেন কেন?
গ. আশ্রয়দাতার প্রতি উদ্দীপকের নাসির এবং ‘নিয়তি’ গল্পের কুকুরের আচরণের বৈসাদৃশ্য তুলে ধরো ।
য়. ‘উদ্দীপকে মানিক মিয়ার যে নিয়তির কথা বলা হয়েছে তার সাথে গল্পের কুকুরটির নিয়তি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়’—মন্তব্যটি বিচার করো ।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৩ এর উত্তর সমূহ
ক উত্তর: মহারাজার বাড়ির ছাপাখানাটি দাওয়াতের চিঠি ছাপানোর কাজে ব্যবহৃত হতো।
খ উত্তর: জগদলের রাজবাড়িটি লেখকদের ভালো লেগেছিল বলে লেখক সে বাড়ি ছেড়ে যেতে না চাওয়া প্রসঙ্গে আলোচ্য কথাটি বলেছেন । বাবার বদলি সূত্রে লেখকের জগদলে থাকতে হয়েছিল। জঙ্গলে ঘেরা বাড়িটিতে লেখকের কাঁপুনি দিয়ে ম্যালেরিয়া জ্বর ওঠে। তাই লেখকের বাবা এই ভয়ংকর বাড়িতে আর থাকতে চান না । কিন্তু লেখক এত সুন্দর জায়গা ছেড়ে যেতে চাননি। তাই তিনি প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেন । উত্তরের সারবস্তু: জগদলের রাজবাড়িটি লেখকের ভালো লেগেছিল বলে লেখক সে বাড়ি ছেড়ে যেতে না চাওয়া প্রসঙ্গে আলোচ্য কথাটি বলেছেন।
গ উত্তর: আশ্রয়দাতার প্রতি উদ্দীপকের নাসির বিশ্বাসঘাতক আচরণ করলেও ‘নিয়তি’ গল্পের কুকুরটি তার বিপরীত আচরণ করেছিল। ‘নিয়তি’ গল্পের কুকুরটি আশ্রয়দাতার প্রতি ছিল আন্তরিক ও আনুগত্য। সবাই রাজবাড়ি ছেড়ে চলে গেলেও সে ভালোবাসার টানে এখানেই রয়ে যায়। লেখকরা সেখানে উঠলে তাদের সাথেও কুকুরটির সখ্যতা গড়ে ওঠে এবং লেখকের ছোটো ভাইকে সাপের ছোবল থেকে বাঁচায় ৷
উদ্দীপকের নাসির তার আশ্রয়দাতার সাথে চরম বেঈমানি করে। সে মুক্তিযুদ্ধের সময় তারই চাচাত ভাই মানিক মিয়ার বাড়িতে আশ্রয় নেয় । মানিক মিয়া ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু সামান্য টাকার লোভে নাসির মানিক মিয়াকে পাকিস্তানিবাহিনীর হাতে ধরিয়ে দেয়। আশ্রয়দাতার প্রতি তার এমন স্বার্থপর আচরণ ‘নিয়তি’ গল্পের কুকুরের বিপরীত। কারণ, কুকুরটি বাড়ির ছোটো ছেলেকে সাপের কামড় থেকে জীবনবাজি রেখে রক্ষা করে । এতে কুকুরটি সাপের ছোবলে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। তবুও সে সাপটিকে কামড়ে আছড়ে মারে ।
উত্তরের সারবস্তু: আশ্রয়দাতার প্রতি উদ্দীপকের নাসির বিশ্বাসঘাতক আচরণ করলেও ‘নিয়তি’ গল্পের কুকুরটি তার বিপরীত আচরণ করেছিল
ঘ উত্তর: উদ্দীপকের মানিক মিয়ার বিশ্বাসঘাতকতায় পড়ে পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়ার যে নিয়তির কথা বলা হয়েছে, তার সাথে গল্পের কুকুরটির গুলি খেয়ে মরার নিয়তি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
‘নিয়তি’ গল্পে কুকুরটির নিয়তির কারণ পরিস্থিতি। কুকুরটিকে সাপের কামড় খেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরতে দেখে লেখকের বাবার হৃদয়ে দাগ কাটে। তাই তিনি কুকুরটিকে গুলি করে অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেন ।
উদ্দীপকের মুক্তিযোদ্ধা মানিক মিয়ার নিয়তি নিষ্ঠুরতা ও স্বার্থপরতায় মোড়ানো । তিনি তার চাচাত ভাই নাসিরকে মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজ বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন। কিন্তু চাচাত ভাই তার সাথে বেঈমানি করে। সে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সামান্য টাকার লোভে মানিক মিয়ার মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার খবর পৌঁছে দেয় এবং কৌশলে তাকে ধরিয়ে দেয় । আশ্রিত ভাইয়ের লোভের কারণে তাকে করুণ পরিণতি বরণ করতে হয়।
‘নিয়তি’ গল্পের কুকুরটি রাজবাড়িতে আশ্রিত ছিল। সে বাড়ির প্রতি তার মায়া ও দায়িত্ববোধ জন্মে। ফলে মহারাজার পরিবারের সবাই চলে গেলেও সে রাজবাড়ি ছেড়ে যায় না। পরবর্তীতে বাবার চাকরিসূত্রে লেখকরা সে বাড়িতে উঠলে কুকুরটির সাথে তাদেরও সখ্য তৈরি হয়। কুকুরটি লেখকের ছোটো ভাইকে কেউটে সাপের ছোবল থেকে বাঁচায়। এতে সাপের কামড়ে তার শরীরে পচন ধরে ও চামড়া খসে পড়তে থাকে। তার এমন দুরবস্থা দেখে লেখকের বাবার খুব কষ্ট হয়। তাই তিনি গুলি করে কুকুরটিকে মেরে ফেলেন। এ মেরে ফেলার নিয়তি উদ্দীপকের মানিক মিয়ার মতো বিশ্বাসঘাতকতা নয়। বরং ওটা ছিল প্রবল ভালোবাসা থেকে কষ্ট নিবারণের প্রচেষ্টা মাত্র ।
উত্তরের সারবস্তু: বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়ে উদ্দীপকের মানিক মিয়ার পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়ার যে নিয়তির কথা বলা হয়েছে তার সাথে গল্পের কুকুরটির গুলি খেয়ে মরার নিয়তি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় ।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৪
আমাদের চারিদিকে ঘিরিয়া অন্ধকার বন ও প্রান্তর, মাথার উপরে নক্ষত্র-হুড়ানো দূর-প্রসারী অন্ধকার আকাশ। আমার বড়ো অদ্ভূত লাগিল, যেন চিরপরিচিত পৃথিবী হইতে নির্বাসিত হইয়া মহাশূন্যে এক গ্রহে অন্য এক অজ্ঞাত রহস্যময় জীবনধারার সহিত জড়িত-হইয়া পড়িয়াছি।
ক. ‘নিয়তি’ গল্পে লেখক হুমায়ূন আহমেদের কাছে তাঁর বাবাকে কেমন মানুষ বলে মনে হয়েছিল?
খ. ‘নিয়তি’ গল্পে লেখকের বাবা দুঃখে বেদনায় কুঁকড়ে উঠেছিলেন কেন?
গ. উদ্দীপকে ‘নিয়তি’ গল্পের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো ।
ঘ. “উদ্দীপকে ‘নিয়তি’ গল্পের মূল আলোচ্য বিষয় অনুপস্থিত” – বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৪ এর উত্তর সমূহ
ক উত্তর: ‘নিয়তি’ গল্পে লেখক হুমায়ূন আহমেদের কাছে তাঁর বাবাকে পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম মানুষদের একজন বলে মনে হয়েছিল ।
খ উত্তর: নিজের সন্তানের জীবন বাঁচানো কুকুরটিকে নিজ হাতে হত্যা করতে বাধ্য হওয়ায় লেখকের বাবা দুঃখে বেদনায় কুঁকড়ে উঠেছিলেন । হুমায়ূন আহমেদের আত্মজৈবনিক গল্প ‘নিয়তি’-তে বেঙ্গল টাইগার নামক কুকুরটির নিষ্ঠুর নিয়তির কথা বর্ণিত হয়েছে। লেখকের ভাইবোনসহ তিনি মহারাজার বাড়ির মন্দিরের চাতালে বসেছিলেন। এমন সময় মন্দিরের বন্ধ দরজার ফাঁক দিয়ে প্রকাণ্ড কেউটে সাপ বের হয়ে এলে লেখকের ছোটো ভাই শাহীন ছাড়া বাকি সবাই সরে যান। তখন বেঙ্গল টাইগার দৌড়ে এসে সাপটিকে কামড়ে ফণা ছিঁড়ে ফেলে। কিন্তু সাপের কামড়ে কুকুরটি আক্রান্ত হওয়ায় দুদিন পর তার চামড়া পচেগলে পড়তে লাগে। কুকুরটির যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে লেখকের বাবা তার ছেলের জীবন বাঁচানো কুকুরটিকে নিজ হাতে হত্যা করেন । কৃতঘ্নতার পরিচয় দেওয়ায় মনঃকষ্টে আক্রান্ত হয়ে তিনি দুঃখে বেদনায় কুঁকড়ে ওঠেন
উত্তরের সারবস্তু: কৃতঘ্নের মতো নিজের সন্তানের জীবন বাঁচানো কুকুরটি নিজহাতে হত্যা করতে বাধ্য হওয়ায় লেখকের বাবা দুঃখে বেদনায় কুঁকড়ে উঠেছিলেন ।
গ উত্তর: উদ্দীপকে ‘নিয়তি’ গল্পের প্রকৃতির কোলে জীবনযাপনের দিকটি ফুটে উঠেছে।
হুমায়ূন আহমেদ রচিত ‘নিয়তি’ গল্পে লেখকের শৈশবকালীন অদ্ভুত স্বপ্নময় কিছুদিনের বর্ণনা ফুটে উঠেছে। জগদলে কাটানো কিছুদিন লেখক প্রকৃতির কোলে জীবন কাটিয়েছেন। লেখকরা ছিলেন এক মহারাজার পরিত্যক্ত বাড়িতে। বাড়ির চারপাশে ছিল বন-জঙ্গল। প্রতিদিনই লেখক তাঁর বাবার সাথে বিকেলে শিকারের আশায় বনের ভেতরে ঘোরাফেরা করতেন । বন থেকে নানারকম পাখপাখালি ও প্রাণীর বিচিত্র শব্দ আসত। এ যেন অরণ্যে ঘেরা ভি ভিন্ন এক পৃথিবী বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘আরণ্যক’ উপন্যাস থেকে নেওয়া উদ্দীপকে প্রকৃতির সান্নিধ্যে কাটানো জীবনের আখ্যান বর্ণিত হয়েছে। কথকের বর্ণনা মতে, চারদিক ঘিরে বন ও প্রান্তর, মাথার ওপরে নক্ষত্র-ছড়ানো দূর-প্রসারী অন্ধকার আকাশ। এসব কথকের কাছে অদ্ভুত লেগেছিল এবং মনে হয়েছিল যেন চিরচেনা পৃথিবী ছেড়ে অন্য কোনো গ্রহে তিনি এসে পড়েছেন। প্রায় একইরকম চিত্র দেখা যায় ‘নিয়তি’ গল্পে। এ গল্পে বর্ণিত জগদলের বন-জঙ্গলে ঘেরা মহারাজার বাড়িতে অবস্থানকালীন লেখকের জীবনও একই ধারায় উৎসারিত।
উত্তরের সারবস্তু: প্রকৃতিঘনিষ্ঠ জীবনযাপনের দিক থেকে উদ্দীপক ও ‘নিয়তি’ গল্পের জগদলের বর্ণনা একইরকম
ঘ উত্তর: ‘নিয়তি’ গল্পের মূল আলোচ্য বিষয় নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাস, যা উদ্দীপকের আলোচনায় অনুপস্থিত।
হুমায়ূন আহমেদ রচিত ‘নিয়তি’ গল্পটি বেঙ্গল টাইগার নামক কুকুরটির নিয়তির নির্মম শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করা বিষয়ে রচিত হয়েছে। গল্পের অবধারিত অনুষঙ্গ হিসেবে কুকুরটির মৃত্যু ছাড়াও লেখকের স্বপ্নময় শৈশবের কথা, বন-জঙ্গলে শিকারের জন্য ঘুরে বেড়ানো, ম্যালেরিয়া রোগের শিকার হওয়া, লেখাপড়া থেকে মুক্ত হয়ে বনের পাখির মতো স্বাধীন জীবনযাপনের কথা গল্পে বর্ণিত হয়েছে। মহারাজার বাড়ি ও তাঁর রুচির পরিচয়ও গল্পে পাওয়া যায় । কিন্তু এসব ঘটনার ভিড়ে গল্পের মূল আলোচ্য বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে নিয়তির নিমর্মতার দিকটি।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘আরণ্যক’ উপন্যাস থেকে গৃহীত উদ্দীপকে বিস্তর অরণ্যে ঘেরা এক অজ্ঞাত রহস্যময় জগতের কথা বর্ণিত হয়েছে । চারদিক ঘিরে অন্ধকার বন ও প্রান্তর, মাথার ওপরের নক্ষত্র-ছড়ানো দূর-প্রসারী অন্ধকার আকাশ ইত্যাদির মিশেলে প্রকৃতি-ঘনিষ্ঠতার পরম পরিচয় এখানে প্রকাশ পেয়েছে । প্রায় একইরকমের প্রকৃতি-ঘনিষ্ঠ জীবনের পরিচয় ফুটে উঠেছে ‘নিয়তি’ গল্পে। তবে গল্পের মূল অনুষঙ্গ এটি নয় ।
নিয়তি গল্পে অন্য অনেক কিছুর কথা বর্ণিত হলেও লেখকের ভাইকে বিষাক্ত সাপের ছোবল থেকে রক্ষা করতে গিয়ে সাপের ছোবলে আক্রান্ত বেঙ্গল টাইগার নামের কুকুরটির মৃত্যু ঘটনাই আসল। লেখকের বাবা বাধ্য হয়েছেন নিজের সন্তানের জীবন বাঁচানো কুকুরটিকে নিজহাতে হত্যা করতে। আর কুকুরটি এমন নির্মম নিয়মিত এই গল্পে মূল আলোচ্য বিষয়। কিন্তু আলোচ্য গল্পের এ বিষয়ের কোনো আলোকপাত উদ্দীপকে ঘটেনি। তাই বলা যায় যে, প্রশ্নোক্ত কথাটি যৌক্তিক।
উত্তরের সারবস্তু: নিয়তির কাছে কুকুরটির অসহায় আত্নসমর্পনের ঘটনা নিয়ে রচিত গল্পের মূল ঘটনা উদ্দীপকে না থাকায় উক্তিটি যথার্থ।
ধন্যবাদ গুরুত্ব সহকারে এতক্ষণ এই ব্লগটি পড়ার জন্য। আপনার জন্য ইতিমধ্যে এখানে নিয়তি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর টোটাল ৪টা প্রদান করা হয়েছে। আশাকরি পড়ে বিস্তারিত বুঝতে পেরেছেন। পোষ্টটি যদি আপনার জন্য ফলপ্রসু হয় তবে আমাদের কাছে ভালো লাগবে।