ক্যারিয়ার টিপস এই শব্দটির সাথে শিশু বয়স থেকেই আমরা পরিচিত হয়ে যাই। কেননা এখনকার সময়ে ক্লাস ওয়ান বা টু পড়ুয়া বাচ্চাকেও প্রশ্ন করা হয়- তুমি বড় হয়ে কী হবে? বা তুমি কী চাকরি করতে চাও? সেই স্কুল পড়ুয়া বাচ্চাটি তখন থেকেই বলতে শুরু করে- আমি বড় হয়ে ডাক্তার হবো, কেউ বলে ইঞ্জিনিয়ার, আবার কেউ বা শিক্ষক ! আবার অনেকেই বাবার ক্যারিয়ারকেই নিজের ভবিষৎ ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেন।
এভাবেই ক্যারিয়ার শব্দটির প্রকৃত অর্থ না জেনে শৈশব থেকে শুরু হয় আমাদের ক্যারিয়ার ভাবনা। তখন থেকেই শুরু হয় বুঝে না বুঝে স্বপ্ন দেখার। কেউ কেউ আবার সেই স্বপ্নকে পূরণে এগিয়ে যায়। অনেকেই জীবনে রূপ দেখে পরিবর্তন করেন ক্যারিয়ার পরিকল্পনা। অনেকেই আবার পরিবারের চাপে বাধ্য হয় নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে ক্যারিয়ার গড়তে। ধরুন একজনের ইচ্ছা ক্যারিয়ার হিসেবে চিত্রকলাকে বেছে নেওয়ার।
কিন্তু তার পরিবার চায় সন্তান ডাক্তার হোক। ফলে নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে চালিয়ে যেতে হয় পড়শোনা। ফলে চিত্রকলা নিয়ে পড়াশোনার লালিত স্বপ্ন দিন গড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফিকে হতে থাকে। শুরু হয় মানসিক চাপ।
যা যা থাকছে
ক্যারিয়ার কাকে বলে ?
মূলত, ক্যারিয়ার হচ্ছে শেখা, জ্ঞান অর্জন করা, নিজের দক্ষতা বাড়ানোর এক দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। কিন্তু অনেকেই চাকরি বা পেশা এবং ক্যারিয়ারকে গুলিয়ে ফেলেন। জব আর ক্যারিয়ার শব্দদ্বয় একই অর্থে ব্যবহার হয়ে আসলেও মূলত এরা ভিন্ন।
আরো জানুনঃ 2022 সালে স্টুডেন্ট লোন কীভাবে নিবেন ?
দুটোর মাধ্যমেই অর্থ উপার্জন করাকে বুঝানো হলেও একটি স্বাধীন স্বপ্ন হলেও অন্যটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরের জন্যে নেওয়া সিদ্ধান্ত হয়। কোন কাজ, পেশা, বৃত্তি বা চাকরি করে নানান অভিজ্ঞতার মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করাই হল মূলত ক্যারিয়ার।
ক্যারিয়ার গঠন কেনো জরুরী ?
স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এর দিকে পা বাড়াতেই আমাদের মাথায় সর্বপ্রথম যে চিন্তা আসে তা হলো নিজের ক্যারিয়ার গঠন। নিজের ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে আমরা সকলেই সচেতন কেননা সকলেই সুন্দর একটি জীবনের আশা করে।
আর সুন্দর একটি জীবন পেতে হলে চাই সঠিক একটি ক্যারিয়ার। আর সফলভাবে ক্যারিয়ার গঠনে প্রয়োজন সময়োপযোগী ও যথার্থ কর্মপরিকল্পনা। জীবনকে একটি সুচিন্তিত ও কার্যকরী কর্মপরিকল্পনায় পরিচালিত করতে পারলেই কাঙ্খিত লক্ষ্যে সহজেই পৌঁছানো যায়।
সঠিক ক্যারিয়ার গঠনে সেরা কিছু ক্যারিয়ার টিপস
সঠিক ক্যারিয়ার গঠনে সর্বপ্রথম শর্ত হলো সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্যে নিজেকে যোগ্য করে তোলা। এর জন্যে জরুরী একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে সেটি অনুযায়ী চলা। এক্ষেত্রে মৌলিক কিছু বিষয়ের দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হয়, সেই বিষয়গুলোই নিচে আলোচনা করা হলো –
- প্রতিদিনের কাজের তালিকা করুন:
ক্যারিয়ার টিপস এর প্রথমেই আপনি পরবর্তী দিন আপনি কি কি কাজ করবেন পূর্বের রাতেই সেগুলো ধারাবাহিকভাবে তালিকা করে এরাখুন। যা ডায়েরি অথবা মোবাইল নোটবুকে ধারাবাহিকভাবে রাখুন। যাতে কোনো কাজই বাদ যাওয়ার সম্ভাবনা না রথাকে। পরবর্তী দিনে কাজ করার সময় এই তালিকাটি দেখে নিলেই কাজগুলো ধারাবাহিক ভাবে সম্পন্ন করা সহজ হবে। এবং অবশ্যই চেষ্টা করবেন প্রতিদিনের জন্যে নির্ধারিত কাজগুলো সেদিনই শেষ করার জন্যে।
- প্রতিটি কাজের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন :
সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। তাই নিজের সময়কে যথাযথ ব্যবহার করে কাজগুলো করে নিতে হবে। কাজের তালিকার সকল কাজ সুচারুভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রতিটি কাজের জন্য আনুমানিক সময় নির্ধারণ করে রাখুন। এতে কাজগুলো যথাসময়ে খুব সহজে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। সময় অপচয় হবে না।
- কঠিন, অপছন্দনীয় বা একঘেয়ে বিষয়গুলোকে বিশেষ ভাবে সাজান :
আমাদের দৈনন্দিন কাজ গুলোর মধ্যে এমন অনেক কাজই থাকে যেগুলো আমরা ইচ্ছা না থাকলেও করি সেগুলো আমাদের পছন্দের কাজ নয় কিংবা সেগুলো বড়ই একঘেয়েমির কাজ।
তাই দিনরাতের যে সময়ে আপনি বেশি মনোযোগী ও সক্রিয় থাকেন তালিকার কঠিন, অপছন্দনীয় বা একঘেয়ে কাজগুলোকে সেসময় করার জন্য রাখুন। এতে একঘেয়েমি দূর হবে ও মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হবে।
- বিশ্রাম, বিনোদন ও খাদ্যাভাসের বিষয়গুলোর প্রতি নজর রাখুন:
বিশ্রামহীন ভাবে কাজ করতে থাকলে যেমন কাজে মনোযোগের অভাব হতে পারে ঠিক তেমনি শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতা আসতে পারে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে পরিমিত ঘুম, বিনোদন, পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য গ্রহণ ইত্যাদি অভ্যাস শরীরের কর্মদক্ষতাকে বাড়িয়ে দেয়। তাই পরিকল্পনায় এই বিষয়গুলো কেউ সমান গুরুত্ব দিন।
আরো জানুনঃ ২০২২ সালের সেরা নতুন ব্যবসা কৌশল
- একই সাথে একাধিক কাজে মনোনিবেশ করা থেকে বিরত থাকুন:
মাল্টিটাস্কিং বিষয়টি সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত। কাজগুলো তাড়াতাড়ি শেষ করার জন্যে অনেকেই একসাথে একাধিক কাজ করতে থাকেন। একই সময়ে দুই বা ততোধিক কাজ করলে তার কর্মদক্ষতা কমে যায় এবং সম্পন্ন হওয়া কাজগুলোর মধ্যে ও ত্রুটি থাকার সম্ভাবনা থেকে যায়। যা পুনরায় করতে আরো সময়ের প্রয়োজন হয়।
- অনাকাঙ্ক্ষিত বা অপচয় হওয়ার সময়কে কাজে লাগান:
নির্দিষ্ট পরিকল্পনার বাইরেও কখনো কখনো রাস্তায় যানজট বা কারো কাছে কোন কাজে যেয়ে অপেক্ষায় থাকতে হয়। সময় তালিকায় থাকা সেই কাজগুলোর সময় নির্দিষ্ট নয় এমন কাজগুলো এই সময়ের মধ্যে করে ফেলুন। এতে কাজ গুলো সঠিক ভাবে সম্পন্ন হবে এবং সময়েরও অপচয় হবে না।
- দিনের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো লিস্টে চিহ্নিত করে রাখুন:
গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুলোর উপর ফোকাস রাখতে সে কাজগুলোকে তালিকায় চিহ্নিত করে রাখুন, যাতে এগুলো যেন কোনভাবে অসম্পন্ন না থাকে। প্রয়োজনে সে কাজগুলোকে আগে শেষ করার চেষ্টা করুন।
এক্ষেত্রে স্মার্টফোনের ক্যালেন্ডার বা গুগল ক্যালেন্ডার ব্যবহার করতে পারেন। অথবা এলার্ম টুল ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে কাজগুলো অসম্পন্ন থাকার সম্ভাবনা কমে যাবে।
- প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিনই সম্পন্ন করুন:
অতিরিক্ত কাজের চাপ অথবা কাজের প্রতি অনীহার কারণে আমরা প্রতিদিনের কাজগুলো প্রতিদিন শেষ করি না। এতে পরবর্তী দিনের কাজের চাপ আরো বেড়ে যায়।
তাই প্রতিদিনের কাজের তালিকায় সকল কাজ যথাসময়ে শেষ করতে চেষ্টা করুন। কারণ কোন কাজ অসম্পূর্ণ থেকে গেলে তা পরের দিনের কাজের সাথে যুক্ত হবে এবং সে দিনের কাজ সম্পাদনে বিশৃংখলার সৃষ্টি হবে।
- পরিকল্পনামাফিক চলতে গিয়ে হতাশ হবেন না:
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে আমরা যা পরিকল্পনা করি সবসময়ই সেভাবেই কাজগুলো হয়, তেমন কিন্তু নয়। পরিকল্পনামাফিক চলতে গিয়ে অনেক বাধা বা প্রতিবন্ধকতা আসতেই পারে বা পরিকল্পনা অনুসরণে কখনো ছেদ পড়তে পারে।
এতে কখনোই হতাশ হবেন না। দৃঢ়তার সাথে পরের কাজগুলোর জন্য পরিকল্পনায় ফিরে আসুন। মনে রাখবেন একবার যদি আপনি হতাশ হয়ে পড়েন তাহলে পুনরায় সেই কাজগুলোকে শুরু করা খুবই কষ্টকর হবে।
- দিনশেষে কর্মপরিকল্পনার পর্যালোচনা করুন :
কাজ যথাযথভাবে বা বরাদ্দকৃত সময়ে কতটা করতে পারলেন তা বুঝতে দিন শেষে পরিকল্পনার পর্যালোচনা করুন। সারাদিনের কাজ গুলো সঠিক ভাবে সম্পন্ন হয়েছে কিনা, পরিকল্পনা সঠিক ছিল কিনা, নতুন কোনো পরিবর্তন আনা প্রয়োজন কিনা এইসব বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে পরবর্তী দিনের পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনে বাস্তবমুখী ও যথার্থ কর্মপরিকল্পনা তৈরি করুন।
উপসংহার
সবশেষে, সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। তাই পরিকল্পিতভাবে সময় এবং কাজের সর্বোচ্চ সঠিক ব্যবহার করতে হবে। কেননা আপনি যতোক্ষণ না নিজেকে সফল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলছেন ততোক্ষণ ক্যারিয়ার গঠনে ব্যর্থতা বাধ্যতামূলক।
তাই নিজের ক্যারিয়ার নির্ধারণ করে উপরোক্ত দিকগুলো মাথায় রেখে নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলুন। সঠিক ভাবে প্রচেষ্টা করলে অবশ্যই নিজের কাঙ্খিত ক্যারিয়ারটি আপনার কাছে এসে ধরা দিবেই। দৈনন্দিন জীবনে প্রতিটি কাজের পূর্বপরিকল্পনা ও সময়ের যথাযথ মূল্যায়ন আপনার জীবনে বয়ে আনবে কাঙ্খিত সফলতা। আপনার জীবন হয়ে উঠবে আরো সুন্দর ও সাবলীল।