আজ আমরা আলোচনা করবো অগ্রণী ব্যাংক লোন, ডিজিটাল সেবা, পার্সোনাল লোন, মুক্তিযোদ্ধা লোন, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা লোন, বিদেশি কর্মীদের লোন, এসএমই লোন, গ্রীন ফিনান্স লোন,শিক্ষা ঋণ/স্টুডেন্ট লোন ইত্যাদী নিয়ে।
অগ্রণী ব্যাংক এমন এক ধরণের ব্যাংক যা কমার্স ব্যাংক এবং হাবিব ব্যাংককে একত্র করে ১৯৭২ সালের ২৬শে মার্চ ব্যাংকিং যাত্রা শুরু করে। ব্যাংকটি ২০০৭ সালের ১৫ই নভেম্বর পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত হয়।
ব্যাংকটি একজন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে এবং ১০ সদস্যের পরিচালনা কমিটি নিয়ে গঠিত হয়। অগ্রণী ব্যাংকের ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক সারা বাংলাদেশ বিস্তৃত। এই ব্যাংকটির ১১টি সার্কেল অফিস, ৫৩টি জেনারেল অফিস, ৯৫৬টি শাখা, ৪২টি এডি শাখা, ৫টি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি রয়েছে এবং ১৪,০০০ এর বেশি দক্ষ কর্মী দিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়াও অগ্রণী ব্যাংকের ১৫টি ইসলামিক ব্যাংকিং উইন্ডো রয়েছে। এই ব্যাংকই প্রথম সরকারি ব্যাংক যা গ্রামীণ এলাকায় এজেন্ট ব্যাংকিং শুরু করে এবং গবেষণা অনুযায়ী এই ব্যাংকের ২০০টি এজেন্ট ব্যাংকিং বুথ রয়েছে।
যা যা থাকছে
অগ্রণী ব্যাংক ডিজিটাল সেবা
মানুষের জীবযাত্রার মান উন্নত করতে এবং হয়রানি থেকে মুক্তি দিতে অগ্রণী ব্যাংক এবং বিকাশ যৌথ ভাবে ডিজিটাল সেবার ব্যাবস্থা করেছে। এখন ব্যাংকের টাকা লেনদেনসহ অন্যান্য কাজ ঘরে বসেই করতে পারবে গ্রাহকরা। অগ্রণী ব্যাংকের ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা পেতে প্রথমে আপনাকে আপনার বিকাশ একাউন্টের সাথে অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট যুক্ত করতে হবে।
আরো জানুনঃ ডাচ্ বাংলা ব্যাংক সম্পর্কে বিস্তারিত
আপনার বিকাশ অ্যাপের অ্যাড মানি অথবা ট্রান্সফার মানি অপশনে যেয়ে সকল প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হবে। এরপর আপনার ফোনে যেই ওটিপি কোড আসবে তা দিয়ে অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট যুক্ত করে বিকাশ অ্যাপ থেকে সকল সেবা উপভোগ করতে পারেন। বিকাশ থেকে আমরা যেই সকল সেবা উপভোগ করি সেই সকল সেবা উপভোগ করতে পারবেন।
মোবাইল রিচার্জ, টাকা লেনদেন, টাকা উত্তোলন, পেমেন্ট সহ সকল কার্য সম্পন্ন করতে পারবে। শুধু তাই নয়, ডিপিএস অথবা ঋণের কিস্তি জমা দেয়া যাবে। অগ্রণী ব্যাংক গ্রাহকদের হয়রানি থেকে রক্ষা করা এবং সময় সাশ্রয় করার জন্যই মূলত এই সেবা চালু করেছে।
অগ্রণী ব্যাংকের লোনসমূহ
অগ্রণী ব্যাংক নানা ধরনের ঋণ/লোন সেবা প্রধান করে। যেমনঃ
১. পার্সোনাল লোন,
২. যে কোনো কাজের জন্য লোন,
৩. মুক্তিযোদ্ধা লোন,
৪. অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা লোন,
৫. বিদেশি কর্মীদের লোন,
৬. এসএমই লোন,
৭. গ্রীন ফিনান্স লোন,
৮. শিক্ষা ঋণ/স্টুডেন্ট লোন।
অগ্রণী ব্যাংক লোন নিতে যে সকল কাগজ-পাতি লাগবেঃ
- অবশ্যই ব্যাংকে সেভিং বা কারেন্ট একাউন্ট থাকতে হবে।
- ব্যাংকের আবেদনপত্র।
- আপনার বয়স অবশ্যই ২১ বছর হতে হবে, তবে ছাত্র লোনের ক্ষেত্রে ১৮ বছর হলে আবেদন করতে পারবেন।
- জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এবং সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
- আপনার মাসিক আয়ের প্রমাণপত্র।
- চাকরি করলো আপনার বেতনের পে স্লিপ দেখানো লাগবে।
- আপনি ব্যাবসাহী হলে ট্রেড লাইসেন্স দেখানো লাগবে।
- আপনার ৬ মাসের ব্যাংক লেনদেনের পরিমাণ দেখানো লাগবে।
অগ্রণী ব্যাংক পার্সোনাল লোন
যে কোনো বেতনভুক্ত চাকরীজীবি অথবা ব্যাবসায়ী ব্যাক্তি নিজের যে কোনো পার্সোনাল কাজের জন্য অগ্রণী ব্যাংক থেকে পার্সোনাল লোন নিতে পারবে। আপনি কতো টাকা পার্সোনাল লোন পাবেন তা ব্যাংক থেকে নির্ধারিত হবে। তবে, ব্যাংকটি সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ থাকা পর্যন্ত পার্সোনাল লোন দিয়ে থাকে। এবং ঋণ পরিশোধের জন্য সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। পার্সোনাল লোনের সুদের হার ৯% নির্ধারণ করা হয়েছে।
যে কোনো কাজের জন্য লোন
কোনো ব্যাক্তি যদি কোনো কাজ করার উদ্দেশ্যে ঋণ নিতে চায় তবে অগ্রণী ব্যাংকের এই ঋণ নিতে পারে। যে কোনো কাজের জন্য আপনি এই ঋণ নিতে পারবেন। তবে ঋণ গ্রহীতা ব্যাক্তির অবশ্যই সেই কাজের ৫ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে ব্যাংক আপনাকে সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদান করা হয়। লোন পরিশোধের সময়সীমা সর্বোচ্চ ৫ বছর। এবং সুদের হার ৯% পর্যন্ত হয়।
অগ্রণী ব্যাংক মুক্তিযোদ্ধা লোন
সরকারি সার্টিফিকেট প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থিক সহায়তার জন্য এই ঋণ ব্যাবসা। শুধু মুক্তিযোদ্ধা ব্যাক্তি নয়, মুক্তিযোদ্ধা ব্যাক্তির অবর্তমানে তার পরিবারের যেই ব্যাক্তি মুক্তিযোদ্ধা ভাতা গ্রহণ করেন সেই ব্যাক্তিও এই লোনের জন্য আবেদন করতে পারবে। এই ঋণের পরিমাণ সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা হয়। ব্যাংক আপনাকে ৫ বছর সময় দিবে এই ঋণ পরিশোধের জন্য। এবং ঋণের সুদের হার ৮% পর্যন্ত হয়।
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা লোন
অবসরপ্রাপ্ত যে কোনো সরকারি কর্মকর্তার আর্থিক প্রয়োজন হলে সেই ব্যাক্তি এই ঋণের সুবিধা পাবেন। তাকে অবশ্যই সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার প্রমাণ দিতে হবে। কারণ, শুরু মাত্র সরকারি কর্মকর্তাদের জন্যই এই ঋণের ব্যাবস্থা। সকল প্রমাণের প্রেক্ষিতে সেই ব্যাক্তি সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন। ঋণ পরিশোধ করার জন্য ৫ বছর পর্যন্ত সময় দেওয়া হবে। এই ঋণের সুদের হার ৯% পর্যন্ত হয়।
বিদেশি কর্মীদের লোন
আপনি যদি কর্মসংস্থানের জন্য দেশের বাইরে যেতে চান কিন্তু আর্থিক কারণে যেতে পারছেন না এবং আপনার বৈধ ভিসা থাকে তবে আপনি এই ঋণ নিয়ে কর্ম সম্পন্ন করতে পারবেন। অগ্রণী ব্যাংক ৫০ হাজার থেকে ৯ লক্ষ টাকা পর্যন্ত এই ঋণ সুবিধা দেয়। ঋণ পরিশোধের জন্য সময় দেওয়া হয় সর্বোচ্চ ১৫ মাস থেকে ১৮ মাস পর্যন্ত। এবং সুদের হার ৯% হয়।
এসএমই লোন
যেই সকল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নিজের প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতির জন্য আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন তাদের অগ্রণী ব্যাংক এসএমই লোন দিয়ে সহায়তা করে। এই ঋণ নিতে হলে আপনার ব্যাবসায় কমপক্ষে ৩ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তবেই আপনি সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত এসএমই লোন পাবেন। আপনাকে ঋণ পরিশোধের জন্য ২ বছর পর্যন্ত সময় দেওয়া হবে। এই ঋণের সুদের হার ৯% নির্ধারণ করা হয়েছে।
গ্রীন ফিনান্স লোন
বিভিন্ন উদ্যোক্তা যারা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা অথবা কল্যাণে কাজ করতে চায়, অগ্রণী ব্যাংক তাদের গ্রীন ফিনান্স লোন দিয়ে সহায়তা করে। এই ঋণ নিতে হলে আপনার উদ্যোগ পরিবেশ বান্ধব হতে হবে। যেমন:
সোলার হোম সিস্টেম, মিনি গ্রিড, বায়ো গ্যাস প্ল্যান্ট, হাইড্রো পাওয়ার প্ল্যান্ট, ইত্যাদি। এই ঋণের পরিমাণ নির্ভর করে প্রকল্পের উপর। এবং সময়সীমা নির্ভর করে ঋণের পরিমাণ উপর। এই ঋণের সুদের হার ৯% পর্যন্ত হয়।
অগ্রণী ব্যাংক শিক্ষা ঋণ/স্টুডেন্ট লোন
শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তি বিকাশে সহায়তা করার জন্য অগ্রণী ব্যাংক ‘প্রযুক্তি বিকাশে অগ্রনী’ নামে শিক্ষার্থীদের ল্যাপটপ লোন বা স্টুডেন্ট লোন দেয়। এই ঋণের ব্যাবস্থার মূল উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তিগত দিকে এগিয়ে নিতে যাওয়া। এই ঋণ নেওয়ার পদ্ধতি খুবই সহজ। এবং ঋণের পরিমাণ ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। ঋণের সুদের হার ৭% পর্যন্ত হয়।
সকল ঋণের সুদের হারঃ
ঋণের নাম সূমহ | সুদের হার | |
১. | পার্সোনাল লোন | ৯% |
২. | যে কোনো কাজের জন্য লোন | ৯% |
৩. | মুক্তিযোদ্ধা লোন | ৮% |
৪. | অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা লোন | ৯% |
৫. | বিদেশি কর্মীদের লোন | ৯% |
৬. | এসএমই লোন | ৯% |
৭. | গ্রীন ফিনান্স লোন | ৯% |
৮. | শিক্ষা ঋণ/স্টুডেন্ট লোন | ৭% |
বিঃ দ্রঃ ঋণের সুদের হার পরিবর্তন হতে পারে।